শামা বলল, আসা যাওয়া শুরু করে নি বাবা। একদিনই এসেছিল।
সেই একদিন আসাটাও তো ঠিক না। তোর মা যত্ন করে আবার ভাত খাইয়েছে। তুই আবার তাকে নিয়ে নিউ মার্কেটে বান্ধবীর জন্যে উপহার কিনতে গেলি। তোর মা’র কাছে শুনেছি এক রিকশায় গিয়েছিস। কী ঘিন্নাকর অবস্থা! তোর অবশ্যি দোষ নেই। দোষটা আমার। আমি গ্রীন সিগন্যাল দেয়ার কারণেইতো বাসায় এসে ভাত খাওয়া শুরু করল। চিন্তা করলেই আমার কেমন যেন লাগে।
একটা মানুষ একবেলা ভাত খেয়েছে এটা এমন কোনো ব্যাপার না বাবা। কতজনইতো আমাদের বাসায় খেয়েছে। তাতে কী হয়েছে?
আবদুর রহমান সাহেব মেয়ের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। হতাশ গলায় বললেন, অনেক কিছুই হয়েছে। এতো নরম্যাল ছেলে না। পাগল।
সুলতানা হতভম্ব গলায় বললেন, পাগল মানে?
মাথার অসুখ। প্রায়ই হয়। তখন কাউকে চিনতে পারে না। দরজা তালাবন্ধ করে রাখতে হয়। এমন অবস্থায় এরা অসুখ গোপন করে বিয়ে দিতে চাচ্ছিল। মানুষের ধারণা আছে না- বিয়ে দিলে পাগল ভাল হয়। তাই ভেবেছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে। পাগল ভাল হয়ে যাবে। আমার মেয়ে হবে পাগল ভাল করার ট্যাবলেট। এই ছেলের আগেও একবার বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছিল। পানচিনি হয়েছে। মেয়েপক্ষ খবর পেয়ে পরে বিয়ে ভেঙে দেয়। গতকাল আমি ছেলের বড় বোনের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি ঘটনা স্বীকার করেছেন। ছেলে যেমন বজ্জাত, আত্মীয়স্বজনরাও বজ্জাত। ধরে এদের চাবকান উচিত। জুতা পেটা করা উচিত। এরা শিয়াল কুকুরেরও অধম।
শামা বলল, এইসব কেন বলছ?
বলব না?
না বলবে না। বিয়ে ভেঙে গেছে ফুরিয়ে গেছে। গালাগালি করবে কেন?
আমি এমন কী গালাগালি করলাম। তুই এত রাগ করছিস কেন?
জানি না কেন রাগ করছি। আমার ভাল লাগছে না। বাবা আমি উঠলাম।
আবদুর রহমান সাহেব চাপা গলায় বললেন, ছেলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারে। উল্টাপাল্টা বোঝানোর চেষ্টা করতে পারে। একেবারেই পাত্তা দিবি না। কী সর্বনাশ! আমার মেয়েটাকে আরেকটু হলে একটা পাগলের হাতে তুলে দিচ্ছিলাম!
শামা বাবার সামনে থেকে উঠে চলে এল।
হ্যালো আমি এশা।
বুঝতে পারছি। তুমি কেমন আছ?
আমি ভাল আছি। আপনার গলাটা এমন লাগছে কেন? মনে হচ্ছে আপনি না, অন্য কেউ কথা বলছে।
আমার মন ভাল নেই। মন ভাল না থাকলে আমার গলার স্বর বদলে যায়।
মন ভাল নেই কেন? বিয়ে ভেঙে গেছে বলে?
আতাউর জবাব দিল না। শামা কিছুক্ষণ জবাবের জন্যে অপেক্ষা করল। জবাবের জন্যে অপেক্ষা করে ভালই হললা। পরের প্রশ্নটা কী করা যায় ভাবার সময় পাওয়া যাচ্ছে। কঠিন কঠিন কিছু প্রশ্ন করা উচিত। কঠিন প্রশ্নগুলি মাথায় আসছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে, শামার গলা ভার ভার হয়ে আসছে।
এশা।
জি।
তোমরা সবাই আমাকে খুব খারাপ ভাবছ তাই না?
আমি ভাবছি না, তবে অন্যরা ভাবছে।
তুমি ভাবছ না কেন?
কারণ আমি আপনাকে খুব ভাল কখনো মনে করি নি। বাবা মনে। করেছেন, এই জন্যেই বাবা মনে কষ্ট পাচ্ছেন। আর আপা খুব কষ্ট পেয়েছে। সে অবশ্যি কষ্টের কথাটা কাউকে বলে নি, কিন্তু আমি বুঝতে পারি।
ও আচ্ছা।
আমি বয়সে অনেক ছোট। কিন্তু আমি কি আপনাকে একটা উপদেশ দেব?
দাও।
আপনার বিয়ে করা উচিত হবে না। আপনিহত মোটামুটি ধরনের অসুস্থ না। বেশ অসুস্থ। আমার কথা কি ভুল?
না ভুল না। আমি যখন অসুস্থ হই, বেশ ভালই অসুস্থ হই। আমাকে তালাবন্ধ করে রাখতে হয়। অসুখটা সেরে গেলে পুরনো অনেক কিছু ভুলে যাই।
এই অসুখ সারবে ডাক্তাররা কি এমন কথা বলেছেন।
না বলেন নি। বরং উল্টোটা বলেছেন। বলেছেন— বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অসুখটা বাড়বে।
অসুখের ব্যাপারটা গোপন করাটা কি আপনার ঠিক হয়েছে?
না, ঠিক হয় নি। খুব অন্যায় হয়েছে।
অন্যায়টা করলেন কেন?
তোমার আপাকে দেখে মনে হলে আমার অসুখটা সেরে গেছে। আর কোনোদিন হবে না। যে অসুখ হবে না আগ বাড়িয়ে সে অসুখের কথা বলতে ইচ্ছা করল না।
আপার আগে আপনার আরো একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল। তাদেরকেও আপনার অসুখের কথা জানান নি। ঐ মেয়েটিকে দেখেও কি মনে হয়েছিল আপনার অসুখ সেরে গেছে?
আতাউর চুপ করে রইল। এশা বলল, আচ্ছা থাক, এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না। আপনি কিছু বলতে চাইলে বলুন, আমি টেলিফোন রেখে দেব।
আমি তোমার আপার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। তুমি কি ব্যবস্থা করে দেবে? তাকে দু’একটা কথা বলতে চাই।
কী কথা? এটা তোমার আপাকে বলব। তোমাকে না।
আপার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন না। কারণ আপা আপনার সঙ্গে কখনো কথা বলবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া আপার অন্য জায়গায় বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। ছেলের নাম আশফাকুর রহমান। ছেলে মেরীলেন্ড ইউনিভার্সিটির টিচার। মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়ে যাবে। এই অবস্থায় কি আপার উচিত আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা?
উচিত না।
আমি আজ রাখি? আপনি ভাল হয়ে যান এর বেশি আর কী বলব।
সেটা সম্ভব না। আমি খুবই অসুস্থ। শোন এশা, তোমার সঙ্গে সরাসরি আমার কখনো কথা হয় নি শুধু টেলিফোনে কথা হয়েছে। শুধুমাত্র তোমার কথা শুনে আমি তোমাকে যে কী পরিমাণ পছন্দ করেছি সেটা একমাত্র আমিই জানি। তোমাকে আমার মনে হয়েছে খুবই কাছের একজন।
এখনো কি মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ, এখনো মনে হচ্ছে।
বড় আপার বিয়েতে আপনাকে দাওয়াত দিলে আপনি কি আসবেন?
হ্যাঁ আসব।
আপনার লজ্জা করবে না।