শামা আতাউরের নাম্বার ডায়াল করল। টেলিফোন আতাউরই ধরল। আগের বারের মতো অন্য কেউ ধরল না। শামাকে নানান ভনিতা করে আতাউরকে চাইতে হল না।
শামা হ্যালো বলতেই আতাউর বলল, এশা তোমার খবর কী? দেখলে আমি কেমন গলা চিনি? আমার সঙ্গে একবার মাত্র কথা বলেছ আর আমি গলা মুখস্থ করে রেখে দিয়েছি।
শামা হকচকিয়ে গেল। এশা-প্রসঙ্গটা তার মাথায় একেবারই ছিল না। অথচ থাকা উচিত ছিল। সে বোকা না, সে বুদ্ধিমতী।
এশা, হ্যালো বলেই চুপ করে গেলে কেন? কোথেকে টেলিফোন করছ?
আমাদের বাড়িওলা চাচার বাসা থেকে করছি। আপনি কেমন আছেন?
ভাল আছি। তোমার বুদ্ধি মতো দোকানটায় গিয়েছিলাম। তোমার আপা বুঝতেই পারে নি যে পুরো ব্যাপারটা সাজানো।
আমারতো মনে হচ্ছে আপনি একটু বেহায়া টাইপ। আপার সঙ্গে হুড়হুড় করে বাসায় চলে এলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলেন। আশ্চর্যতো!
কাজটা খুবই বেহায়ার মতো করেছি কিন্তু আমার একটুও খারাপ লাগছে না।
মাই গন্ড, আপনি যেভাবে কথা বলছেন তাতেতো মনে হচ্ছে আপনি আপার প্রেমে পড়ে গেছেন।
তুমি যেভাবে কথা বলছ তাতে মনে হচ্ছে প্রেমে পড়াটা অপরাধমূলক।
অবশ্যই অপরাধমূলক। যে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক তার প্রেমে পড়াটা অপরাধ।
অপরাধ কেন?
বিয়ে ঠিকঠাক হওয়া মেয়ের প্রেমে পড়া মানে লাইসেন্স করে প্রেমে পড়া।
তুমিত খুবই গুছিয়ে কথা বল।
আমি গুছিয়ে কথা বলি টেলিফোনে। সামনাসামনি আমি একেবারেই কথা বলতে পারি না। আচ্ছা শুনুন, আপা কি আপনাকে মাকড়সার ধটা জিজ্ঞেস করেছে?
মাকড়সার কোন ধাঁধা?
আপার একটা মাকড়সার ধাধা আছে। ঐ ধাধাটা সে সবাইকে জিজ্ঞেস করে। আপনাকেও জিজ্ঞেস করবে। আপনার বুদ্ধি টেস্ট করার জন্যে জিজ্ঞেস করবে। ধাঁধার উত্তর দিতে না পারলে আপার মন খারাপ হবে। সে ভেবেই নেবে আপনার বুদ্ধি কম।
আমি পারব না। এমিতেই আমার বুদ্ধি কম। ধাঁধার বুদ্ধি আরো কম।
মাকড়সার ধাঁধাটা আপনি পারবেন। কারণ আমি উত্তরটা শিখিয়ে দিচ্ছি। উত্তরটা হলো মাকড়সা দু’রকমের সুতা দিয়ে জাল বানায়। এক রকমের সুতা থাকে আঠা লাগানো। আরেক রকমেরটায় আঠা থাকে না। যে সুতায় আঠা লাগানো থাকে না মাকড়সা তার ওপর দিয়ে হাটে বলে সে জালে আটকে যায় না।
আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না তুমি কী বলছ।
আপনিতো ধাঁধাটা জানেন না, শুধু উত্তরটা জানেন, এইজন্যে কিছু বুঝতে পারছেন না। বুঝতে না পারলেও ক্ষতি নেই। উত্তরটা জেনে রাখুন। আচ্ছা শুনুন আমি রাখি।
শামা টেলিফোন নামিয়ে ঘর থেকে বের হলো। আর তখনি তার সব বান্ধবীরা সিঁড়ি দিয়ে নামল। বান্ধবীদের সঙ্গে মিঃ হুক্কা আছেন। শাহানা ম্যাডামও আছেন। সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মিঃ হুঙ্কা কঠিন গলায় বলল, এক্সকিউজ মি, আপনার বান্ধবীরা বলছে, আপনি আমার চশমা আপনার হ্যান্ড ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছেন। কাজটা ঠিক করেন নি। জোক ভাল–But not at the expense of some one.
শামা বলল, আমি আপনার চশমা লুকিয়ে রাখি নি।
তৃণা বলল, তোর হ্যান্ডব্যাগ খুলে দেখিয়ে দে না হ্যান্ডব্যাগে কিছু নেই। এত কথার দরকার কী?
তৃণ মুখ চেপে হাসছে। শামার বুক ধ্বক করে উঠল। সে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত তার হ্যান্ডব্যাগে ভদ্রলোকের চশমা আছে। তৃণা এক ফাঁকে লুকিয়ে রেখেছে।
শামা হ্যান্ডব্যাগ খুলে চশমা বের করল। তার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। সে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে বলল, I am sorry.
ভদ্রলোক চশমা নিতে নিতে বললেন–কিছু কিছু অপরাধ আছে শুধু সরিতে কাটা যায় না। যাই হোক, আমি আপনার সরি গ্রহণ করছি। আপনাকে একটা ছোট্ট উপদেশ দেবার ইচ্ছা ছিল। দিচ্ছি না, কারণ আমার মনে হয় না আপনার সঙ্গে আমার আবারো দেখা হবে।
রাত ন’টা। এতক্ষণে মন্টু দুটা চ্যাপ্টার পড়ে ফেলতে পারত। এখনো সে বই নিয়ে বসতেই পারে নি। একবার বসেছিল, বই খোলার আগেই টপ করে দেয়াল থেকে একটা টিকটিকি বইয়ের ওপর পড়েছে। টিকটিকি বইয়ের ওপর পড়া খুব অলক্ষণ। সে বই বন্ধ করে উঠে পড়েছে। অলক্ষণের সময় পার করে সে আবার পড়তে বসবে। তাছাড়া মনও বসছে না। বাবার জন্য খুব অস্থির লাগছে। বড় আপা অবশ্যি চলে এসেছে। অস্থির ভাবটা এখন অনেকখানি কমেছে। আপা মেয়ে মানুষ। সে কীই করবে! তারপরেও মন্টুর মনে হয়, আপা ঘরে থাকা মানেই অনেক কিছু। মন্টু একটু পর পরই দরজা ধরে দাঁড়াচ্ছে বাবাকে দেখেই চলে যাচ্ছে। তার ওপর দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে একের পর এক ঝামেলা যাচ্ছে। তাকেই ডাক্তার ডেকে আনতে হয়েছে। চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে স্যুপ আনতে হয়েছে। তাকেই অষুধ আনতে হয়েছে।
আবদুর রহমান সাহেব খুব বিব্রত বোধ করছেন। তাঁর লজ্জাও লাগছে। সবাইকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়ার লজ্জা। তিনি পরিবারের প্রধান। তার কর্তব্য সবাইকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা। বড় মেয়েটা শখ করে বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছিল। তাকে চলে আসতে হয়েছে। মেয়েটার মনটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ।
শামা বলল, বাবা স্যুপটা খাও। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
স্যুপ থেকে মুরগি মুরগি গন্ধ আসছে। ভাতের মাড়ের মতো একটা জিনিস। তার ওপর লতাপাতা ভাসছে। দেখেই অভক্তি লাগছে। তারপরও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি এক চুমুক স্যুপ মুখে দিলেন।
শামা বলল, স্যুপটা খেতে ভাল লাগছে না?
তিনি বললেন, খারাপ না।
তাহলে খাও। চামচ হাতে নিয়ে বসে আছ কেন?