সুলতানা মেয়েকে দেখে উঠে বসলেন। শামা বলল, মা শরীর খারাপ?
সুলতানা বললেন, সামান্য গা গরম।
তোমাকে বিছানা থেকে নামতে হবে না। শুয়ে থাক। এশা কোথায়? মন্টু কোথায়?
মন্টু কোচিং সেন্টারে। সন্ধ্যাবেলায় আসবে। এশা কখন আসবে কিছু বলে যায় নি।
দুপুরের খাবার কী?
ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছ।
আর কিছু নেই?
না। ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছতো তোর পছন্দ।
ভাজা ভুজি কিছু কর নি?
না। ডাল আছে। ঘরে কি বেগুন আছে মা?
বেগুন আছে। বেগুন ভাজা খাবি?
হুঁ। তোমাকে বেগুন ভাজতে হবে না। কাজের মেয়েটাকে বলে দাও। আর একটু আলু ভাজিও করতে বল। দুপুরে একজন গেস্ট খাবে।
কে?
শামা জবাব না দিয়ে হাসল। সুলতানা গেস্টের ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিলেন না। শামার বান্ধবীদের কেউ কেউ হঠাৎ এসে পড়ে বলে ভাত খাব। তেমনই কেউ হবে। সুলতানা বললেন, আগে খবর দিয়ে রাখলেতত গোশত রান্না করতাম।
শামা বলল, আমার এক হাজার টাকা তুমি আজ আমাকে দেবে। দুপুরে খাবার পর আমি উপহার কিনতে যাব। ভয় নেই একা যাব না, দুপুরে যে গেস্ট আমার সঙ্গে খাচ্ছে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আর বাসায় ফিরব না। বিয়ে বাড়িতে চলে যাব। সারা রাত থেকে পরদিন ফিরব।
আজ রাতেই বিয়ে?
হ্যাঁ। আজ ১৭ তারিখ না? কোনো সমস্যা নেই মা। বাবার কাছ থেকে পারমিশন নেয়া আছে।
উপহার কিনেই বিয়ে বাড়িতে যাবার কোন দরকার নেই। বাসায় ফিরবি, তোর বাবাকে বলে তারপর যাবি। তোর বাবা তোকে পৌছে দিয়ে আসবে।
আমাকে বাসায় ফিরতেই হবে?
অবশ্যই। তোর বাবার সঙ্গে দেখা না করে গেলে সে কী হৈচৈটা করবে বুঝতে পারছি না? বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হবে। তুই তোর বাবাকে চিনিস না?
আমার ধারণা বিকেলে না ফিরলে বাবা খুশিই হবেন। যাই হোক, মা তুমি কাজের মেয়েটাকে ইট্ৰাকসন দিয়ে দাও। দেখি তোমার জ্বরের অবস্থা। জ্বর আছে। তুমি শুয়ে থাক। বিছানা থেকে নামবে না।
আতাউর চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে। এ বাড়িতে হঠাৎ এসে সে যতটা অস্বস্তি বোধ করবে বলে ভেবেছিল ততটা অস্বস্তি বোধ করছে না। বরং ভাল লাগছে। এ বাড়ির বারান্দাটা সুন্দর। বাড়ির সামনে অনেক গাছপালা থাকায় রাস্তা থেকে কিছু দেখা যায় না। সে বসে আছে বাইরের বারান্দায় অথচ তার কাছে মনে হচ্ছে সে বাড়ির ভেতরেই বসে আছে। তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না, সে সবাইকে দেখছে। শামা বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আতাউর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শামা বলল, আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন কেন?
আতাউর বলল, বুঝতে পারছি না কেন। মনে হয় অভ্যাস বলে।
শামা বলল, এখন বাজে প্রায় দুটা। চা না খেলে হয় না?
হয়। আমার চায়ের তেমন অভ্যাসও নেই। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দাও।
আমাদের বাসায় ফ্রিজ নেই। বাড়িওয়ালা চাচার বাসায় আছে। আমি ঠাণ্ডা পানি এনে দিচ্ছি। আপনি খেয়ে চুপচাপ আধঘণ্টার মতো বসে থাকতে পারবেন?
হ্যাঁ পারব। শোন ঠাণ্ডা পানি লাগবে না। নরম্যাল পানি দিলেই হবে।
আপনি আধঘণ্টা বসে থাকবেন। আধঘণ্টার মধ্যে আমি গোসল সারব। তারপর আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন।
না না ভাত খাবার দরকার নেই। | দুপুরবেলা আপনি এসেছেন, আর আমি আপনাকে ভাত না খাইয়ে ছেড়ে দেব? অসম্ভব। আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন তারপর আমি আপনাকে নিয়ে বের হব।
কোথায় যাবে।
আমার এক বান্ধবীর আজ বিয়ে। তার জন্যে গিফট কিনব। আপনি সঙ্গে থাকবেন। তারপর আপনি আমাকে ঐ বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেবেন। বান্ধবীর বাড়ি উত্তরায়। পারবেন না?
পারব।
আমার কাণ্ডকারখানা কি আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক লাগছে?
না।
মা এখনো জানে না যে আপনি এসেছেন। মা’কে আমি এখনো কিছু জানাই নি। আপনাকে যখন খাবার জন্যে ভেতরে ডাকব তখনি মা প্রথম দেখবে এবং বিরাট একটা ধাক্কার মতো খাবে। তাঁর মনও খুব খারাপ হবে।
মন খারাপ হবে কেন?
মন খারাপ হবে কারণ আজ দুপুরে খাবার আয়োজন খুব খারাপ। মা আপনাকে দেখে কি চমকানিটাই না চমকাবে! এটা ভেবেই আমার ভাল লাগছে।
তুমি মানুষকে চমকে দিয়ে মজা পাও?
হ্যাঁ খুব মজা পাই। পত্রিকা দেব? বসে বসে পত্রিকা পড়বেন?
কিচ্ছু দিতে হবে না। তুমি গোসল করে আস।
এর মধ্যে যদি এশা চলে আসে তাহলে এশাকে অবশ্যি বলবেন আপনার কথা যেন মা’কে কিছু না বলে। বলতে পারবেন না।
পারব।
বাথরুমে ঢোকার মুখে সুলতানা মেয়েকে ধরলেন। বিস্মিত গলায় বললেন, তুই কার সঙ্গে কথা বলছিলি?
শামা সহজ গলায় বলল, আমিতো আগেই বলেছি। আমার গেস্ট। দুপুরে খাবে।
পুরুষ মানুষ তোর গেস্ট মানে?
পুরুষ মানুষ আমার গেস্ট হতে পারে না?
সুলতানা চাপা গলায় বললেন, হাসবি না শামা। রঙ্গ রসিকতাও করব না। এই ছেলে কে?
আমার পরিচিত।
কোন সাহসে তুই তাকে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলি? তোর মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি নেই? এক্ষুণি চলে যেতে বল।
ভদ্ৰলোক দুপুরে খাবেন বলে বসে আছেন। এখন কী করে তাকে চলে যেতে বলি? তোমার যদি এতই অসহ্য লাগে তুমি চলে যেতে বল।
আমি বলব কেন? তুই দাওয়াত করে এনেছিস তুই বলবি।
আচ্ছা যাও আমিই বলব। গোসল সেরে নেই তারপর বলি।
বলে এসে তারপর বাথরুমে ঢুকবি। তোর সাহস দেখে আমি হতভম্ব। তুই একে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার ফন্দি করেছি। এত ফন্দি ফিকির কার কাছ থেকে শিখেছিস?
শামা মা’কে সরিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। সুলতানা বাথরুমের দরজার সামনে থেকে নড়লেন না। ক্রমাগত গজরাতে থাকলেন। শামার খুব মজা লাগছে। হঠাৎ তার মনে হলো সে তার দীর্ঘ জীবনে এত আনন্দ পায় নি। এ রকম মনে হবার কারণ কী। এই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় নেই। প্রেম নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা গুজণ্ডজ করে গল্প করে নি। লম্বা লম্বা চিঠি চালাচালি করে নি। অথচ এখন এই মুহুর্তে তার কথা ভাবতে ভাল লাগছে। শুধু যে ভাল লাগছে। তা না বুকের মধ্যে ব্যথা ব্যথা লাগছে। এটাই কি প্ৰেম? হঠাৎ শামার চোখে পানি এসে গেল। চোখে পানি আসার অর্থইবা কী?