তুই কি গোপনে বিয়ে করেছিস?
না এখনো করি নি, তবে…
তবে আবার কী?
বিয়ে করব।
ছেলেটা কে?
এশা হাসল। শামা কঠিন গলায় বলল, হাসি বন্ধ করে বলতে ছেলেটা কে?
তুমি চিনবে না। খুবই আজেবাজে টাইপের ছেলে।
আজেবাজে টাইপ ছেলের সঙ্গে তোর পরিচয় হলো কীভাবে?
যেভাবেই হোক, হয়েছে।
ছেলে করে কী?
কিছু করলেতো বলতাম না আজেবাজে টাইপ ছেলে। কিছুই করে না। মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলে।
তার মানে?
রবীন্দ্র জয়ন্তী করবে তার জন্য চাঁদা তুলবে, নজরুল দিবস করবে তার জন্য চাঁদা তুলবে, পাড়ায় ক্রিকেট খেলার চাঁদা, দুঃস্থজনগণের জন্য চাদা। এপাড়ার মানুষদের মাসের মধ্যে দু’তিনবার তাকে চাঁদা দিতে হয়। যে চাঁদা দেয় সে হাসি মুখে দেয়, সেও হাসি মুখেই চাদা নেয়। চাঁদা তোলা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সে একজন ডিরেক্টর। তার ব্যবহারও অত্যন্ত ভাল। অফিস বসদের ব্যবহার সাধারণত ভাল হয় না। তারা খিটখিটে স্বভাবের হয়। ইনি সে রকম না।
তুই আমার সঙ্গে ইয়ারকি করছিস নাতো?
না।
শামা বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে যাচ্ছিল, এশা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, যাচ্ছ কোথায়?
শামা বলল, বাবাকে ডেকে তুলি। তোর কথাগুলি তাঁকে বলি।
এশা বলল, বাবার শরীর ভাল না। ঘুমুচ্ছেন। তাছাড়া বাবাকে তোমার কিছু বলতে হবে না। যা বলার আমিই বলব। তুমি চুপ করে বিছানায় বস।
সুলতানার শোবার ঘর থেকে কথাবার্তা শশানা যাচ্ছে। দরজা খোলা হলো। স্বামী স্ত্রী দু’জন এক সঙ্গে বেরুচ্ছেন। সাড়াশব্দ পেয়ে এশা এবং শামা ঘর থেকে বের হয়েছে।
এশা বলল, কী হয়েছে।
সুলতানা লজ্জা লজ্জা গলায় বললেন, কাণ্ড দেখ না। তোর বাবা এখন বলছে ভাত খাবে। তার না-কি শরীর ভাল লাগছে। ক্ষুধা হচ্ছে।
এশা বলল, তোমরা খাবার টেবিলে বসো। আমি খাবার গরম করে আনছি। আবদুর রহমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে সংকুচিত গলায় বললেন, আমার মনে হয় ফুড পয়জনিং হয়েছিল। বমির সঙ্গে পয়জন সবটা বের হয়ে গেছে। এখন শরীর ফ্রেশ লাগছে।
এশা খাবার গরম করছে। শামা দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। শামা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকাচ্ছে। তার মুখ থমথম করছে। শামা বলল, ছেলের নাম কী?
এশা হালকা গলায় বলল, নামেতো আপা কিছু যায় আসে না। ওর নাম সলিম হলেও যা, দবির হলেও তা, আবার খলিলুল্লাহ হলেও ঠিক আছে।
আমি মনে হয় ছেলেটাকে চিনতে পারছি। একদিন কলেজে যাবার জন্যে রিকশা পাচ্ছিলাম না, তখন ফর্সামতো লম্বা একটা ছেলে রিকশা ঠিক করে দিয়ে আমাকে বলল, আপা উঠুন।
রিকশাওয়ালা কি তোমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে?
ভাড়া নেবে না কেন?
এশা হালকা গলায় বলল, রিকশাওয়ালা তোমার কাছ থেকে ভাড়া নিলে বুঝতে হবে মাহফুজ না। মাহফুজ রিকশা ঠিক করে দেবে আর রিকশাওয়ালা ভাড়া নেবে এ রকম হতেই পারে না।
ছেলের নাম মাহফুজ?
হ্যাঁ।
তুই কি সত্যি সত্যি তাকে বিয়ে করেছিস? আমার গা ছুঁয়ে বলতো। প্লিজ।
এশা বিরক্ত গলায় বলল, টেনশনে তোমার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। তুমি টেনশন করছ কেন? টেনশন করব আমি। তোমার এখানে টেনশন করার কিছু নেই।
আমি টেনশন করব না?
না। আমরা যখন এক সঙ্গে ছিলাম তখন একজন আরেকজনের সমস্যা দেখেছি। এক সঙ্গে থাকার সময় শেষ হয়েছে। তোমার একটা জীবন শুরু হতে যাচ্ছে। তুমি তোমারটা দেখবে। আমি দেখব আমারটা।
তোর কী হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে আমি চিন্তা করব না?
না করবে না। বড় খালা বা ছোট খালা এদের কারোর সঙ্গে কি মা’র যোগ আছে? যোগ নেই। হঠাৎ হঠাৎ বিয়ে জন্মদিন এইসব উৎসবে তাদের দেখা হয়। এই পর্যন্তই। আমাদের অবস্থাও তাই হবে। তুমি তোমার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আমি আমার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হব। কাজেই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না। করে নিজের জীবনটা কেমন যাবে তা নিয়ে চিন্তা কর।
ইদানীং তুই নিজেকে খুব বুদ্ধিমতী ভাবছিস।
ভাবাভাবির কিছু নেই আপা, আমি বুদ্ধিমতী।
বুদ্ধিমতী কোনো মেয়ে চাঁদাবাজ ছেলের প্রেমে পড়ে?
হ্যাঁ, পড়ে। ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’ এই প্রবচনটা জান না? আমি অতি চালাক বলেই আমার গলায় দড়ি।
পুরো ঘটনাটা কি আমাকে বলবি?
না। ঘটনা বলে বেড়াতে লাগে না।
আবদুর রহমান সাহেব খেতে বসেছেন। এশা খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বললেন, মাছের তরকারিটা অপূর্ব হয়েছে রে মা! এশা শীতল গলায় বলল, মাছের তরকারি তুমি এখনো মুখে দাও নি বাবা। আবদুর রহমান ব্রিত গলায় বললেন, মুখে দিতে হবে না। আমি চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি। চেহারা দেখেই ষোলআনার বারোআনা বোঝা যায়। এশা বলল, চেহারা দেখে কিছুই বোঝা যায় না।
আতাউর
শামা এক প্যাকেট বাবলগাম, একটা ইরেজার কিনল। পছন্দের ইরেজার বেছে বের করতে তার সময় লাগল। বাজারে নানান ধরনের ইরেজার এসেছে। পেনসিলের দাগ মুছতে পারুক আর না পারুক দেখতে সুন্দর। শামার বুক সামান্য ধকধক করছে। দোকানিকে দাম দেয়ার পর তাকে অভিনয় করতে হবে। অভিনয়টা ভাল হতে হবে।
আতাউরকে দোকানের এক মাথায় দেখা যাচ্ছে। আতাউরকে দেখে চমকে ওঠার ভনি করতে হবে। চমকে উঠে বলতে হবে, আপনি এখানে কী করছেন? কথা বলারও বিপদ আছে, গলার স্বর চিনে ফেলবে না তো? ভুরু কুঁচকে ভাববে। নাভো–টেলিফোনে যে কথা বলছিল তার সঙ্গে এই মেয়েটার গলার স্বরের এত মিল কেন? না, তা ভাববে না। টেলিফোনে মানুষের গলার স্বর অন্যরকম। শোনায়। তাছাড়া দু’বোনের গলার স্বর মিল থাকতেই পারে। শামার বান্ধবী। তৃণা এবং তার মা’র গলার স্বর অবিকল এক রকম। এই নিয়ে কত ঝামেলা। হয়েছে। সাগর ভাই তৃণাদের বাসায় টেলিফোন করেছেন। টেলিফোন ধরেছেন। তৃণার মা। তিনি হালো বলতেই সাগর ভাই বললেন, জানগো তুমি কেমন আছে? তোমার রাগ কি কমেছে? তণার মা শান্ত গলায় বললেন, তুমি কাকে চাচ্ছ? তৃণাকে? ও টয়লেটে আছে। আমি তৃণার মা।