অচ্ছাি বিজ্ঞাপনের ভাষা হিসেবে এটাও তো খারাপ না।
কী চা খাবেন? সাধারণ চা, নাকি ইয়া-চা?
ইয়া-চা নামটা দিয়েছে হাসানের সঙ্গে যে মেয়েটি এসেছিল সে। নামকরণের জন্যে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক সে পাবে। এটা করা হবে সুন্দর একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানটা করা হবে সোনারগাঁ হোটেলে। অতিথিদের সবাইকে সুন্দর কাপড়ের ব্যাগে একব্যাগ চা দেয়া হবে। চায়ের সঙ্গে ইয়া-চা লগো বসানো একটা টিপট এবং দুটা কাপ। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র কেমপেইন শুরু হবে।
বিজ্ঞাপনের ক্ষমতা অসাধারণ। তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করে এদেশের প্রতিটি মানুষের মাথায় ইয়া-চা ঢুকিয়ে দেবেন। তার এক জীবনে তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। এখানেও তাই হবে।
ইয়াকুব সাহেব আবারো পা দোলাতে শুরু করেছেন। তাঁর চোখেমুখে বিষাদের ছাপ এখন আর নেই। তাঁকে শিশুর মতোই আনন্দিত মনে হচ্ছে।
বিকেল পাঁচটায় ঢাকায় গাড়ি যাবে
বিকেল পাঁচটায় ঢাকায় গাড়ি যাবে। লীনা চিঠি লিখতে বসেছে। দুটা চিঠি লিখবে। একটা মাকে আরেকটা বোনকে। চিঠি গতরাতেই লিখে রাখা উচিত ছিল। এখন তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে। কত কিছু লেখার আছে তাড়াহুড়া করে কি লেখা যায়? শেষে দেখা যাবে আসল কথাগুলিই লেখা হয়নি। মার কাছে লেখা চিঠি হবে একরকম, বোনের কাছে লেখা চিঠি হবে অন্যরকম। মার চিঠিতে থাকতে হবে—শরীরের খবর, খাওয়াদাওয়া কেমন হচ্ছে তার কিছু কথা। এই চিঠিটা লিখতে হবে খুব গুছিয়ে। বীনার চিঠিতে বানান ভুল থাকলে হবে না। বানান ভুল থাকলে বীনা খুব রাগ করে। চিঠির উত্তর দেবার সময় লেখে : সাধারণ বানান ভুল কর কেন আপা? ধুলা বানান কবে থেকে দীর্ঘউকার হল?
লীনা মার চিঠি লিখতে বসল। মাকে চিঠি লিখতে তার খুব ভালো লাগে। যা ইচ্ছা লেখা যায়।
মা,
তুমি কেমন আছ গো?
রোজ রাতে ঘুমুবার সময় তোমার কথা মনে পড়ে। তোমার সঙ্গে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমন অভ্যাস খারাপ হয়েছে, তোমার গায়ের গন্ধ নাকে না এলে ঘুম হয় না। তুমি অবশ্যই একটা বোতলে তোমার গায়ের গন্ধ ভর্তি করে পাঠাবে।
আমাদের এখানে খাওয়াদাওয়া খুব ভালো। সকালে তিন ধরনের নাশতা থাকে। একটা হল কমন আইটেম–খিচুড়ি। মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না হয়। সবাই খুব আগ্রহ করে খিচুড়ি খায়। আরেকটা আইটেম হল— রুটি, ভাজি এবং ডিম। আমি বেশিরভাগ দিন এইটা খাই।
আমাদের স্যার সকালে নাশতা খেতে পারেন না। তিনি এক কাপ চা আর একটা টোস্ট বিসকিট খান। দুপুরে লাঞ্চ খান। মাঝখানে চা ছাড়া আর কিছু না। আমার খুব ইচ্ছা করে তাকে জোর করে নাশতা খাওয়াতে। অন্য সবার খাবারদাবারের দিকে তার এত নজর, কিন্তু নিজের খাবারদাবারের দিকে কোনো নজর নেই।
মা, তুমি যে চালতার আচার বানিয়ে পাঠিয়েছিলে— স্যারকে খেতে দিয়েছিলাম। উনি খুবই পছন্দ করেছেন। আমি আচারের কৌটাটা স্যারের তাঁবুতে রেখে দিয়েছি। বাবুর্চিকে বলে দিয়েছি যেন রোজ খাবারের সঙ্গে আচার দেয়।
এখন একটা মজার কথা বলি মা। গতরাতে স্যারের তাঁবুতে বিরাট হৈচৈ। ঘুম ভেঙে আমি ছুটে গেলাম। সবাই বলাবলি করছে তাঁবুতে সাপ ঢুকেছে। আমি তাঁবুতে ঢুকে দেখি স্যার বিছানায় পা তুলে বসে ঠকঠক করে কাঁপছেন। তাঁবুভর্তি লোকজন। ঘটনা হচ্ছে–স্যারের তাঁবুতে বড় একটা মাকড়সা দেখা গেছে। স্যারের মাকড়সা-ভীতি যে কী ভয়ংকর, তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। সাধারণ একটা মাকড়সাকে কেউ এত ভয় পায়। অনেকেই এটা নিয়ে হাসাহাসি করছিল— আমার এত মায়া লাগল!
মা তুমি আমাকে নিয়মিত দুধ খেতে বলেছ। তোমার মনের আনন্দের জন্যে বলছি, আমি রোজ রাতে ঘুমুতে যাবার আগে এক কাপ করে দুধ খাচ্ছি। গ্রাম থেকে খাঁটি গরুর দুধ নিয়ে আসছে। আমি বাবুর্চিকে বলে দিয়েছি সে যেন স্যারকেও শোবার সময় এক কাপ করে দুধ দেয়। সে তাই দিচ্ছে। আমার ধারণা ছিল স্যার সেই দুধ খান না। গতকাল বাবুর্চির কাছে শুনেছি স্যার দুধ খাচ্ছেন।
আমাদের বেশ কয়েকজন বাবুর্চি। স্যারের জন্যে যে বাবুর্চি রান্না করে তার নাম হোসেন মিয়া। সে অনেক রকমের ভর্তা বানাতে জানে। এর মধ্যে একটা ভর্তা হল— চিনাবাদামের ভর্তা। চিনে বাদাম পিষে সরিষার তেল পিয়াজ আর কাঁচামরিচ দিয়ে ভর্তা বানায়। এই ভর্তাটা খেতে খুব ভালো। স্যার এই ভর্তা পছন্দ করে খান।
মা তুমি তো অনেক রকমের ভর্তা বানাতে জানো একটা কোনো বিশেষ ধরনের ভর্তা বানানোর পদ্ধতি আমাকে সুন্দর করে চিঠিতে লিখে জানিও। আমি স্যারকে বেঁধে খাওয়াব।
তুমি শুনে খুবই অবাক হবে যে, সারেরও রান্নার শখ আছে। আমি লক্ষ্য করেছি বাবুর্চি যখন রান্না করে, স্যার প্রায়ই আগ্রহ করে রান্না দেখেন। একদিন দেখি তিনি নিজেই খুঁড়িতে চামচ দিয়ে নাড়ছেন। আমি তাড়াতাড়ি কাছে গেলাম। স্যার বললেন, লীনা জাপানিজ খাবার কখনো খেয়েছে? আমি বললাম, না। স্যার বললেন, একদিন তোমাকে জাপানিজ খাবার রান্না করে খাওয়াব। আমি খুব ভালো জাপানীজ রান্না জানি। দুমাস জাপানে ছিলাম তেমন কিছু শিখতে পারিনি। ওদের রান্নাটা শিখেছি। জাপানিজদের মতো চিংড়িমাছ পৃথিবীর আর কেউ রাঁধতে পারে না।
মা, আমি ভাবিওনি যে স্যার সত্যিসত্যি জাপানিজ খাবার রান্না করবেন। উনি এত ব্যস্ত রান্না করার তাঁর সময় কোথায়? তাছাড়া বড়মানুষরা অনেক কথা বলেন যেসব কথা তাঁরা মনেও রাখেন না। মনে রাখলে চলে না। আমার এই ধারণাটা যে কত ভুল তার প্রমাণ পেলাম গত বুধবারে। স্যার আমাকে কিচেনে ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি তিনি রান্নার সমস্ত আয়োজন শেষ করে বসে আছেন। আমার সামনে রাধবেন, যেন আমি শিখতে পারি।