পৃথিবীর কোন ব্যাপারটা?
আমাকে একদিন বলেছিলি, ঐ যে পৃথিবী জীবন্ত। মৃত না— এই সব। পরিমল বাবু মন দিয়ে শুনুন। ভেরি ইন্টারেস্টিং। আব্দুর রহমান তুমিও শোন। রছে তার বেঁধে বেঁধে জীবন পার করে দিলে, কিছুই জানলে না। আফসোস!
হেদায়েত পৃথিবীর গল্প বলে যাচ্ছে, তিনজনই আগ্রহ নিয়ে শুনছে। বেলায়েতের ভাবভঙ্গিতে আগ্রহ এবং আনন্দের খাঁটি মিশ্রণ।
হেদায়েত বলছে, পৃথিবীকে আমরা মৃত বস্তু হিসাবে জানি। ভেতরটায় আছে লোহা এবং নিকেল। নব্বই ভাগ লোহা এবং দশ ভাগ নিকেল। সর্ব অর্থেই এটাকে মৃত বস্তু বলা যায়। কিন্তু পৃথিবী মৃত না। জীবিত!
আব্দুর রহমান হতভম্ব গলায় বলল, বলেন কি! এর জান আছে?
বেলায়েত বিরক্ত গলায় বলল, আগেই কথা বল কেন? পুরা ঘটনা শোন।
হেদায়েত বলল, জীবিত প্রাণী কী করে? বেঁচে থাকতে চায়। তার অসুখবিসুখ হলে চিকিৎসা নিতে চায়। তার শরীরে কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতি পূরণ করতে চায়। পৃথিবী তাই করে। একবার পৃথিবীর ওজন লেয়ার ফুটো হয়ে গেল। বিজ্ঞানীরা হতভম্ব হয়ে গেল। কী সর্বনাশ! পৃথিবী নিজেই ওজন লেয়ার ঠিক করল। গ্রীন হাউস অ্যাফেক্টে পৃথিবীর তাপ এখন বাড়ছে। পৃথিবী চেষ্টা করে যাচ্ছে তাপ কমাতে। সমুদ্রে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে শৈবাল। শৈবাল কার্বনডাই অক্সাইড খেয়ে নিচ্ছে। গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট কমছে। পৃথিবী সবই নিজে নিজে করছে। কাজেই পৃথিবীকে একটা জীবিত প্রাণী ছাড়া আর কিছু বলা যায়?
বেলায়েত বলল, অবশ্যই না। পরিমল বাবু আপনার কি মত?
পরিমল বাবু আমতা আমতা করছেন। সুন্দর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। বেলায়েত বলল, হেদায়েত এদেরকে ঐ মাছের গল্পটা বল। এরা মজা পাবে।
হেদায়েত বলল, কোন মাছ?
ঐ যে একটা মাছ আছে কিছুদিন থাকে স্ত্রী তারপর হয়ে যায় পুরুষ। অদ্ভুত ব্যাপার! শুনলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়।
হেদায়েত বলল, গল্পটা আরেক দিন বুলি। তোমাকে একটা জরুরি কথা বলীর জন্য এসেছি।
বেলায়েত বলল, অবশ্যই বলবি। এখনই বল। পরিমল বাবু আপনি চলে যান। আব্দুর রহমান তুমিও যাও।
হেদায়েত তার রাতের অভিজ্ঞতা বলল। হাতের উপর হাত রাখা, আংটি পাওয়া কিছুই বাদ দিল না।
বেলায়েত বলল, জ্বিনের উপদ্রব। আর কিছুই না। তোর বৌ সুন্দর তো এই জন্যেই উপদ্রবটা হচ্ছে। একদম চিন্তা করবি না। মগবাজারের ছোট পীর সাহেবকে নিয়ে যাব। উনি বাড়ি বন্ধন করে দিবেন। তুই নিশ্চিত থাক। আর খবর্দার একা ঘুমাবি না! বৌ যদি বাপের বাড়ি যায় তুইও অবশ্যই সঙ্গে যাবি।
যেতে ভালো লাগে না।
শ্বশুরবাড়ি যেতে ভালো লাগে না, এটা কেমন কথা! তোর বাবা-মা নেই। শ্বশুর-শাশুড়ীই তোর বাবা-মা। ক্লিয়ার?
হুঁ।
আর কিছু বলবি?
হেদায়েত বলল, সেতু তার মা’র বাড়িতে গেলে আমি এসে তোমার সঙ্গে থাকব। আমি ঐ বাড়িতে যাব না।
বেলায়েত বলল, আচ্ছা যা ঠিক আছে। টেনশান করিস না। জরুরি কথা শেষ হয়েছে, না-কি আরও কিছু বলবি?
হেদায়েত মাথা নিচু করে বলল, ভাইজান সেতুকে আমার পছন্দ হয় না।
বেলায়েত হতভম্ব হয়ে বলল, সর্বনাশ এইসব কী কথা!
হেদায়েত মাথা নিচু করে বলল, সত্য কথা।
তাকে পছন্দ হয় না কেন? আমি যতদূর জানি সে তো খুবই ভালো মেয়ে।
ঘন ঘন বাপের বাড়ি যায়, এটা ছাড়া তার তো আর কোনো সমস্যা নেই।
হেদায়েত বলল, পচা একটা সেন্ট সে গায়ে মাখে। আমার দম বন্ধ লাগে।
এই সেন্ট না মাখতে বল। বাজার থেকে ভালো একটা সেন্ট কিনে নিয়ে যা।
হেদায়েত চুপ করে রইল। ভাইজানের এই বুদ্ধিটা খারাপ লাগছে না।
বেলায়েত বলল, রাত এমন কিছু বেশি হয় নি। দোকান খোলা আছে। চল আমার সঙ্গে। সেন্ট কিনে দেই। গন্ধ শুকে শুকে সেন্ট কিনবি। ঠিক আছে?
হুঁ। ঠিক আছে।
বেলায়েত বলল, তোর ভাবীকেও সঙ্গে নিয়ে নেই। মেয়ে মানুষ তো, সেন্ট ভালো বুঝবে।
হেদায়েত বলল, ভাবীকে সঙ্গে নিও না।
তার সমস্যা কী?
হেদায়েত বলল, ভাবীর গা থেকে সব সময় রসুনের গন্ধ আসে। আমার গা লায়।
বলিস কি! আমি তো রসুন-পিঁয়াজ কোনো গন্ধই পাই না। তোর তো বিরাট প্রবলেম। আমার গা থেকে কোনো গন্ধ আসে? লুকাবি না। সত্যি কথা বলবি।
হেদায়েত বলল, ঘামের গন্ধ আসে। তোমার ঘামের গন্ধ খারাপ না। ভালো।
বেলায়েত বলল, ঘামের গন্ধ আবার ভালো হয় কীভাবে?
হেদায়েত কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, ভাইজান ক্ষুদা লেগেছে। দুপুরে যে কিছুই খাই নি সেটা ভুলে গেছি।
তোকে নিয়ে তো বিরাট সমস্যা। দুপুরে খাওয়ার কথা কি কেউ ভুলে? চল তোকে দি নিউ বিরানী হাউসে নিয়ে যাই। নদীর এক পাঙ্গাস আজ সকালে নিজের হাতে কিনে দিয়েছি। এগারো কেজি ওজন। এখনও আছে কিনা কে জানে।
রেস্টুরেন্টে কাস্টমার গিজগিজ করছে। বসার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। বেলায়েত তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ম্যানেজার ছুটে এসেছে। ম্যানেজার পারলে খদ্দের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে স্যারের জন্যে জায়গা করে।
বেলায়েত বলল, আমার জন্যে ব্যস্ত হবে না। শুধু আমার ভাইকে বসার ব্যবস্থা করে দাও।
হেদায়েত বলল, আমি তোমাকে ছাড়া খাব না ভাইজান।
বেলায়েত মনে মনে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হেদায়েত তাকে ছাড়া যে খাবে না, এটা আগেই বোঝা উচিত ছিল। বেলায়েত গলা নামিয়ে বলল, কেমন রমরমা ব্যবসা বুঝতে পারছিস?
হেদায়েত বলল, বুঝতে পারছি। ৩৭ জন কাস্টমার।
এর মধ্যে গুনেও ফেলেছিস! মাশাআল্লাহ।