হুঁ।
হেদায়েত সাহেবের চেয়ে বেশি না কম?
সমান সমান।
অংক ঠিকমতো শিখতে পারলে আমার পাল্লা সামান্য ভারী হতো! ঠেক খেয়ে গেছি অংকে। আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি জানতে চাও?
না।
জানতে না চাইলেও শোন। আমার প্রায়ই ইচ্ছা করে প্রফেশনাল কোনো কিলারকে দিয়ে হেদায়েত সাহেবকে খুন করে ঝামেলা শেষ করে দেই। ভিলেন মঞ্চ থেকে প্রস্থান করবে, আমরা রূপকথার এল্ডিং এর মতো সুখে ঘর সংসার করতে থাকব।
তুমি কি সত্যি আমাকে বিয়ে করবে?
Yes, Yes এবং Yes, আমার কথা কি বিশ্বাস হচ্ছে?
বুঝতে পারছি না।
রবিন বলল, মানুষ মিথ্যা কথাগুলি সহজেই বিশ্বাস করে। সত্যিটা বিশ্বাস করতে চায় না। বল তো কার কথা?
জানি না কার কথা। যারই হোক কথা সত্যি না। তবে তুমি বিয়ে করতে চাইলে আমি তোমাকে বিয়ে করব। হেদায়েতকে সব জানিয়েই বিয়ে করব। সে পুরো বিষয়টা সহজভাবে নেবে। যে-কোনো জটিল বিষয় সহজ ভাবে গ্রহন করার ক্ষমতা তার আছে।
রবিন বলল, এমন কি হতে পারে যে জীবনের জটিলতা বুঝার ক্ষমতাই মানুষটার নেই?
হতে পারে। মানুষটা মানসিকভাবে অসুস্থ। তুমি তাকে সুস্থ করার ব্যবস্থা কর, তারপর তোমার সব কথা আমি শুনব। সিনেমা করতে বললে সিনেমা করব। সিগারেট খেতে বললে সিগারেট খাব। তোমার সামনে নেংটো হয়ে নাচানাচি করতে বললে নেংটো হয়ে নাচানাচি করব। Free pass, শুধু একটাই শর্ত।
রবিন বলল, আরেকটা সিগারেট ধরাও। তুমি অদ্ভুত করে ধোয়া ছাড়, দেখতে ভালো লাগে।
সেতু দ্বিতীয় সিগারেট ধরাল। ঠোঁট গোল করে ধোয়া ছাড়তে লাগল।
রবিন বললেন, তোমার স্বামীকে তোমাদের বাসার কেউ পছন্দ করেন না। তাদের কথাবার্তায় এ রকম মনে হলো।
সেতু বলল, কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। কথা বললে পছন্দ করত। তার বড়ভাই একজন আছেন। তিনিও ভালো মানুষ। তাঁর নাম বেলায়েত। সরি তার নাম মুখে নিলাম। ভাসুরের নাম মুখে নেয়া ঠিক না। এতে তাকে অপমান করা হয়।
তুমি এসব মান?
আমি খুবই খারাপ মেয়ে কিন্তু মানি।
বেলায়েত সাহেব কি তোমার হাসবেন্ডের মতো একসেনট্রিক?
জানি না।
তোমার মা ঐদিন খরগোশ খরগোশ বলছিলেন। বেলায়েত সাহেবকে কি খরগোশ ডাকা হয়।
আমাদের বাসায় ডাকা হয়।
কেন?
জানি না কেন। প্লিজ এই প্রসঙ্গ অফ।
ঠিক আছে অফ।
আমি উনাকে অত্যন্ত পছন্দ করি।
বেলায়েত জেগে আছে। রেস্টুরেন্টের হিসাব দেখছে। তাঁর সামনে পরিমল বাবু বসে আছেন। পরিমল বাবুর সামনে কাগজ কলম। হিসাব মেলানো হচ্ছে।
হঠাৎ পরিমল বাবু উঠে দাঁড়ালেন। বেলায়েত বলল, কী ব্যাপার?
পরিমল বাবু বললেন, আরো কিছুক্ষণ থাকলে আপনাকে অসম্মান করা হবে। এই জন্যে উঠে পড়লাম।
অসম্মান হবে কেন?
ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আপনার সামনে ঘুমানোর অর্থ আপনাকে অসম্মান করা।
যান ঘুমান।
পরিমল বাবু বেলায়েতের বাড়ির একতলায় একটা ঘরে থাকেন। নিজে বেঁধে খান। একা মানুষ। তার কোনো অসুবিধা হয় না। এই বাড়িতে তিনি সুখেই আছেন।
হেনা দরজা ধরে দাঁড়িয়েছে। বেলায়েত বলল, কিছু বলবে?
হেনা বলল, ঘুমাবে না?
হিসাব শেষ করে তারপর ঘুমাব।
বুড়াটাকে হিসাব করতে দাও। অনেক রাত হয়েছে।
বেলায়েত বলল, হোক রাত। হিসাব শেষ না করে উঠব না। আরেকটা কথা, পরিমল বাবুকে বুড়া বুড়া বলবে না। বৃদ্ধ হওয়া কোনো অপরাধ না। তুমি ঘুমাতে যাও।
হেনা গেল না। দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে থাকল। বেলায়েত বলল, আর কিছু বলার বাকি আছে?
সেতুর বিষয়ে একটা কথা ছিল। অনেক আজেবাজে কথা তার বিষয়ে শুনা যাচ্ছে। মুখে বলা যায় না এমন সব কথা।
বেলায়েত বলল, মানুষের মধ্যে ভালো আছে মন্দ আছে। হেদায়েতের স্ত্রীর বিষয়ে ভালো কিছু যদি শুনে থাক সেটা বল আমি শুনব। মন্দটা শুনব না। ভালো কিছু শুনেছ?
না।
তাহলে ঘুমাতে যাও। আমার দেরি হবে। এমনও হতে পারে আজ রাতে ঘুমাবই না।
বেলায়েত হিসাবে মন দিল। তার কাছে মনে হচ্ছে হেদায়েত আশেপাশে থাকলে ভালো হতো, ফটাফট যোগ-বিয়োগ করে ফেলত।
প্রিন্সিপাল হাজি এনায়েত করিমের সামনে হেদায়েত
প্রিন্সিপাল হাজি এনায়েত করিমের সামনে হেদায়েত বসে আছে। প্রিন্সিপাল সাহেব হেদায়েতকে খবর দিয়ে এনেছেন। তার ঘরের দরজা খোলা। কলেজের কিছু মেয়েকে খোলা দরজা দিয়ে উঁকিঝুকি দিতে দেখা যাচ্ছে। প্রিন্সিপাল সাহেবের সামনে প্লেটভর্তি গরম সিঙ্গাড়া। আরেক প্লেটে পেঁয়াজ-কাচামরিচ।
এনায়েত করিম সিঙ্গাড়ার প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, সিঙ্গাড়া খান।
হেদায়েত বলল, আমি সিঙ্গাড়া খাই না স্যার। সেতু পছন্দ করে খায়। আমি খাই না।
সেতু কে?
আমার স্ত্রী। ভালো নাম রুমানা। ডাক নাম সেতু।
ও আচ্ছা। আচ্ছা। কে যেন বলছিল আপনার স্ত্রী সিনেমা করেন। সত্যি -কি?
প্রথম ছবি করছে। কাজ এখনও শুরু হয় নি। ছবির নামটা খুব সুন্দর বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল।
দ্বিতীয় কদম ফুল মানে?
মানে আমি ঠিক জানি না। Script রাইটার জানেন। তার সঙ্গে দেখা হলে মানে জিজ্ঞেস করব।
আপনাকে ডেকেছি কি জন্যে বুঝতে পারছেন?
না।
আপনার বিষয়ে আমরা ডিসিসন চেঞ্জ করেছি। আপনি আবার জয়েন করুন। ম্যাথের নতুন যে টিচার নেয়া হয়েছে ছাত্রীরা কেউ তাকে পছন্দ করছে না। উনি ঠিক মতো না-কি বোঝাতে পারেন না।
ও আচ্ছা।
আপনি আগামীকাল থেকে ক্লাস শুরু করে দিন। একটাই শুধু শর্ত পড়াশোনার বাইরে কোনো আলাপ না। ক্লাসরুম বাড়ির বৈঠকখানা না। এটা মনে থাকলেই চলবে।