আমি শাড়ি পরে আছি, আমাকে হাঁটুর কাছে ছোবল কীভাবে দেবে? আমি কি শাড়ি হাঁটু পর্যন্ত তুলে হাঁটছি?
ডিরেক্টর শট কীভাবে নেবেন আমি জানি না। পুরো গল্পটা আগে শোন, তারপর সমালোচনায় যাবে।
যে সাপ আমাকে কাটল সেটা কী সাপ?
কী সাপ মানে?
সাপের একটা নাম থাকবে না? কেউটে, দাড়াস, শঙ্খচুড়।
বরিন বলল, আমাকে কি গল্পটা শেষ করতে দেবে প্লিজ?
Ok.
একটা কথাও না। তুমি শুধু শুনে যাবে।
আমাকে আধঘণ্টা সময় দাও। আধঘণ্টা পর শুনব।
আধঘণ্টা কী করবে?
বাসায় টেলিফোন করব। হেদায়েতের সঙ্গে কথা বলব। আমার কেমন জানি অস্থির লাগছে। তার সঙ্গে কথা বললে অস্থিরতাটা কমবে।
রবিন বলল, তুমি বাস করছ আমার সঙ্গে। অস্থিরতা কমাবার জন্যে স্বামীকে টেলিফোন করছ। পুরো ব্যাপারটা কতটা হাস্যকর, বুঝতে পারছ?
পারছি।
আমি তোমাকে একটা উপদেশ দেই?
দাও।
তোমার স্বামী অসম্মানের ভেতর বাস করছে। তাকে ডিভোর্স দিয়ে অসম্মানের হাত থেকে বাঁচানো উচিত। আর আমাদের ছবির জন্যও ব্যাপারটা ভালো।
কেন?
বিবাহিতা মেয়েকে ছবির নায়িকা হিসেবে পাবলিক একসেপ্ট করে না।
ডিভোর্সি মেয়ে একসেপ্ট করে?
কুমারী মেয়ে হলে সবচেয়ে ভালো হয়। ডিভোর্সি হলো সেকেন্ড চয়েস।
তুমি কিন্তু মন দিয়ে আমার কথা শুনছ না। চুল আঁচড়েই যাচ্ছে।
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে শুনছি। ঠিক আছে যাও চুল আঁচড়ানো বন্ধ করলাম।
সেতু উঠে দাঁড়ালো। রবিন বলল, কোথায় যাচ্ছ?
সেতু বলল, হেদায়েতকে টেলিফোন করতে যাচ্ছি।
টেলিফোন একটু পরে করো, গল্পটা আগে শুনে নাও।
উঁহু। এখনই টেলিফোন করব।
রবিন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আরেকটা সিগারেট ধরালো।
হলো।
কে সেতু?
হুঁ। কী করছ?
কান্ডি ফ্লস বানাচ্ছি।
কী বানাচ্ছ?
হাওয়াই মেঠাই। ভাইজান একটা যন্ত্র কিনে দিয়েছেন, এটা দিয়ে বানাচ্ছি।
হচ্ছে?
হ্যাঁ হচ্ছে। নানান রকম ফুড কালার দিয়ে Experiment করছি। সুন্দর সুন্দর রঙ হচ্ছে।
বাহ ভালো তো!
তুমি কি রাতে ফিরবে?
না। ফিল্মের ডিরেক্টর সাহেব আসবেন। তিনি ফিল্মের গল্প শোনাবেন। আড়াই ঘণ্টার গল্প ব্যাখ্যা করে শোনাবেন তো। গল্প শুনতে শুনতেই রাত কাভার হয়ে যাবে।
হবারই কথা।
খানিকটা গল্প, মানে গুরুটা আমি শুনেছি, আমাকে সাপে কাটবে।
সত্যি কাটবে?
আরে না। ফিল্ম পুরাটাই মিথ্যা। দেখা যাবে রাবারের সাপ। তুমি কি ভাত খেয়েছ?
না।
দেরি করছ কেন? খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
আচ্ছা।
ঘুমের ওষুধ খেতে ভুলে যেও না।
ভুলব না।
আচ্ছা শোন, ঐ মেয়েটা কি আরো এসেছিল?
কোন মেয়েটা?
তোমার হাত ধরাধরি করে টানাটানি করে যে মেয়েটা।
এসেছিল।
পরেরবার যখন আসবে, তুমি অবশ্যই তার নাম জিজ্ঞেস করবে।
আচ্ছা। টেলিফোন রেখে দেই।
এক মিনিট ধরে রাখ। ফিল্ম লাইনের অদ্ভুত একটা ঘটনা শোন। কোনো বিবাহিত মেয়ে যদি ফিলো হিরোইনের পার্ট করে, তাহলে কেউ সেই ছবি দেখে না। ছবি ফ্লপ হয়।
তাহলে তো তোমার খুব সমস্যা হবে।
সমস্যা তো হবেই।
কী করা যায় বলো তো?
একটা কিছু ব্যবস্থা হবে, তুমি টেনশন করো না। আর শোন, আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। কয়েকটা হাওয়াই মেঠাই পাঠিয়ে দাও, খেয়ে দেখি।
আচ্ছা।
সেতু টেলিফোন রেখে বাথরুমে ঢুকে চোখ-মুখে পানি দিয়ে বের হলো। রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল, গল্প শুরু করো।
রবিন বলল, তুমি এবং তোমার হাসব্যান্ডের কনভারসেশন আমি পাশের ঘরের লাইন থেকে শুনেছি। সরি ফর দ্যাট।
সরি হবার কিছু নেই। আমরা তো প্রেমালাপ করছিলাম না।
রবিন বলল, আমার কাছে প্রেমালাপের মতোই মনে হয়েছে। কী সহজস্বাভাবিক কথাবার্তা! একটু হিংসাও বোধ করলাম।
হিংসা কেন?
এত সহজভাবে তুমি কখনো আমার সঙ্গে কথা বলো না।
তুমি তো সহজ মানুষ না। তোমার সঙ্গে সহজ কথা কেন বলব? ভালো কথা, গাড়িটা আমার বাসায় পাঠাও। কয়েকটা ক্যান্ডি ফ্লস নিয়ে আসবে।
গাড়ি পাঠাতে হবে?
অবশ্যই।
হেদায়েত শুয়ে পড়েছে। সে সামান্য চিন্তিত। ভুল করে ঘুমের ওষুধ দুটা খেয়ে ফেলেছে। ভাত খাওয়ার পর পর যে একটা খেয়েছিল সেটা মনে ছিল না বলে কিছুক্ষণ আগে আরেকটা খেয়ে ফেলেছে। এতক্ষণে ঘুমে চোখ-মুখ বন্ধ। হয়ে যাবার কথা। মজার ব্যাপার, ঘুম আসছে না। মাথার ভেতর টেলিফোন বাজার মতো শব্দ হচ্ছে। খুবই হালকা শব্দ। ঘরের ভেতর হালকা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সেন্টের গন্ধ না, টাটকা কোনো ফুলের গন্ধ। অপরিচিত ফুল। মেয়েটা কি চলে এসছে লা-কি? হেদায়েত চারদিকে তাকালো কাউকে দেখা গেল না। মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করতে হবে।
একবারেই ঘুম আসছে না। হেদায়েতের আরেকটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। বিছানায় শুয়ে সিগারেট খাওয়া যাবে না। এক্সিডেন্ট হয়। এক্সিডেন্টে অনেকে মারাও যায়। বিছানা থেকে নেমে সিগারেট খেতে হবে। হেদায়েত সিগারেটের জন্য বালিশের নিচে হাত বাড়াতেই নরম একটা হাতের উপর তার হাত পড়ল। হেদায়েত চোখ বন্ধ করে ফেলল। ফুলের গন্ধ তীব্র হয়েছে। এখন হেদায়েত ফুলের গন্ধটা চিনতে পারছে। কদম ফুলের গন্ধ। হেদায়েত বিড়বিড় করে বলল তোমার নাম কী?
মিষ্টি গলায় থেমে থেমে একটি মেয়ে উত্তর দিল, আমার কোনো নাম নেই। আপনি আমার একটা নাম দিন।
আমি তোমার নাম দিলাম সেতু।
সেতু নাম কেন দেবেন? সেতু আপনার স্ত্রীর নাম। ভালো কোনো নাম দিন।
আমার মাথায় কোনো নাম আসছে না। তুমি নিজেই তোমার একটা নাম দাও।
আচ্ছা। আমি দিলাম।
কী নাম দিয়েছ? মাহজাবিন?