হাওয়াই মেঠাই বানানোর একটা যন্ত্র আমার বড় ভাই আমাকে কিনে দিয়েছেন। ঐ যন্ত্রটা দিয়ে হাওয়াই মেঠাই বানাচ্ছি।
স্যার সত্যি?
হুঁ সত্যি। নীতু রাখি?
হেদায়েত টেলিফোন রেখে হাওয়াই মেঠাই বানাতে গেল। তার মাথায় নূতন আইডিয়া এসেছে। হাওয়াই মিঠাই তৈরীতে যদি শুকনা মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয় তা হলে কি ঝাল হাওয়াই মেঠাই তৈরী হবে? গোল মরিচের গুঁড়া দিলে কী হবে?
রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হেদায়েত হাওয়াই মিঠাই বানালো। মোট উনিশটা। প্রাইম নাম্বার। এর মধ্যে বারোটা মিষ্টি। বারো হচ্ছে পারফেক্ট নাম্বার। নয়টা ঝাল-মিষ্টি।
রাত সাড়ে তিনটায় হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় ঘুমুতে এসে হেদায়েত অবাক হয়ে দেখল ঝলমলে শাড়ি পরে একটা তরুণী-মেয়ে বিছানায় বসে আছে। তার গায়ের রঙ শ্যামলা। চোখ বিষণ্ণ। মেয়েটাকে খুব চেনা-চেনা লাগছে। মেয়েটা বলল, অনেক রাত হয়েছে। শুয়ে পড়।
হেদায়েত বিড় বিড় করে বলল, আচ্ছা।
মেয়েটা বলল, আজ ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা আছে। তারপরও এসি দেয়া যায়। এসি দেব।
দাও।
মেয়েটা রিমোট টিপে এসি ছাড়ল। হেদায়েতের দিকে তাকিয়ে বলল, শুয়ে পড়। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। বাতি নিভিয়ে দিই?
দাও।
মেয়েটা হেদায়েতের মাথার চুলে বিনি করে দিচ্ছে। মেয়েটার গায়ে কচি আমপাতার গন্ধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই হেদায়েত গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
তার ঘুম ভাঙলেন ম্যাথমেটিসিয়ান রামনুজন। অর্থাৎ হেদায়েতের স্বপ্ন শুরু হলো। হেদায়েত সাহেব সরি আপনার ঘুম ভাঙলাম। রাত সাড়ে তিনটায় ঘুমাতে গেছেন। ঘুম ভাঙানোটা ঠিক হয় নি।
হেদায়েত বলল, কোনো সমস্যা নেই স্যার। আমি আপনাকে চিনেছি। আপনি রামানুজন। যদি অনুমতি দেন পা ছুঁয়ে কদমবুসি করি। আমি আপনার একজন ভাবশিষ্য।
প্রাইম নাম্বার নিয়ে তোমার মাতামাতি দেখে সেটা বুঝা যায়।
স্যার কি একটা ক্যান্ডি ফ্লস খাবেন?
খেতে পারি।
মিষ্টিটা খাবেন, না কি ঝাল-মিষ্টি।
ঝাল-মিষ্টিটাই দাও। ডায়াবেটিস আছে তো।
হেদায়েত অবাক হয়েছে। পরকালে ডায়াবেটিস থাকে এটা জানা ছিল না।
রামানুজন বললেন, তোমার সমস্যাটার একটা সমাধান বের করেছি।
কোন সমস্যার কথা বলছেন স্যার?
ঐ যে একটা মেয়েকে তোমার বিছানায় দেখ। মেয়েটাকে চিনেছ?
জি না স্যার।
ওর নাম মাহজাবিন। রোল নাইনটিন। প্রাইম নাম্বার। মেয়েটাকে তুমি অত্যান্ত পছন্দ কর বলে তোমার মস্তিস্ক তাকে দেখাচ্ছে।
ও আচ্ছা।
আমার ধারণা তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছে।
হতে পারে। আমার দাদা পাগল ছিলেন।
ব্যাপারটা বংশগত কারণে নাও হতে পারে। অনেক বড় ম্যাথমেটিশিয়ানরা একটা পর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। ক্যান্ডি ফ্লস আরেকটা দাও।
হেদায়েত ক্যান্ডি দিল। রামানুজন বললেন, তুমি আত্মার ইকুয়েশন বের করার চেষ্টা করছ। আমি খুশি। শুরুতেই বেশি জটিলভাবে চিন্তা করবে না।
জি আচ্ছা স্যার। আমি অত্যান্ত আনন্দিত যে আপনি এসেছেন।
সেতু আয়নার সামনে বসেছে
সেতু আয়নার সামনে বসেছে। চুল আঁচড়াচ্ছে। তার হাতে কাঠের চিরুণি। চিরুণির বড় বড় দাঁত। এই চিরুণিতে চুল আঁচড়ানো যায় না। বড় আয়নার সামনে বসে চিরুণি দিয়ে চুল ঘষতে ভালো লাগে। রবিন হকের গেস্ট হাউস ওয়েসিসের আয়নাগুলি ছোট ছোট। তবে এই বিশেষ ডিলাক্স স্যুটের আয়নাটা প্রকাণ্ড। সেতু লক্ষ করল, আয়নায় রবিনকে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে সিগারেট। ঘনঘন সিগারেটে টান দিচ্ছে। সিগারেট হাতে মানুষকে সব সময় চিন্তিত দেখায়। রবিনকেও চিন্তিত দেখাচ্ছে।
রবিন বলল, তুমি আজ থাকবে, না চলে যাবে?
সেতু বলল, জানি না।
ডিসিশান নিয়ে নিলে আমার জন্যে সুবিধা।
কী সুবিধা?
তুমি যদি থেকে যাও, তাহলে আমার এক ধরনের পরিকল্পনা হবে। না থাকলে অন্যরকম।
যদি না থাকি তাহলে তোমার পরিকল্পনা কী?
রবিন বিরক্তি মুখে বলল, সেতু! তুমি অকারণে কথা চালাচালি করছ। স্টপ ইট।
সেতু বলল, Ok.
তুমি যদি আজ থেকে যাও তাহলে ওয়ালেদকে আসতে বলি।
ওয়ালেটা কে?
ফিল্ম ডিরেক্টর। আমি টাকা ঢালব, সে ছবি বানাবে।
সেতু বলল, তাকে এখানে আসতে বলার দরকার কী? এই ঘরে তো ছবি বানাবে না।
রবিন হাতের সিগারেট ছুড়ে ফেলে নতুন আরেকটা ধরাতে ধরাতে বলল, বোকার মতো কথা বলবে না। ছবির গল্প তোমাকে বুঝতে হবে না? ওয়ালেদ বুঝিয়ে দেবে।
সেতু বলল, ছবির গল্পটা কী?
রবিন বলল, কাছে আসো গল্পটা বুঝিয়ে বলি। চা খেতে খেতে বলি। চা দিতে বলব?
সেতু বলল, আমি যেখানে আছি সেখান থেকেই গল্প শুনব। কটা বাজে বলো তো?
দশটা।
সেতু বলল, রাত দশটা না দিন দশটা?
রবিন বলল, তার মানে? তুমি জানো না রাত না দিন?
সেতু বলল, তোমার এই বিশেষ স্যুটের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ থাকে। রাত-দিন কিভাবে বুঝব? কিছু কিছু জায়গা থাকে স্মোক ফ্রি’। তোমার এই জায়গাটা ডে-নাইট ফ্রি।
রবিন বলল, রাত দশটা। গল্পটা বলি?
সেতু বলল, গল্প বলার ব্যাপারে তোমার এত আগ্রহ কেন? ছবির গল্প কি তোমার লেখা?
আইডিয়া আমার। এখন কি গল্পটা শুনবে, না বকবক করেই যাবে?
শুনব।
তাহলে আয়নার দিকে তাকিয়ে না থেকে আমার দিকে ফেরো।
সেতু বলল, আয়নায় তোমাকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। আয়নার কারণে দু’জন মুখোমুখি না বসেও মুখোমুখি। গল্প শুরু করো।
রবিন এসে সেতুর পাশে বসল। হাতের সিগারটে ফেলে দিয়ে গল্প শুরু 09
শহরের একটা মেয়ে অর্থাৎ তুমি। ছবিতে তোমার নাম বৃষ্টি। তুমি প্রথম গ্রাম দেখতে বের হয়েছ। তোমার গায়ে হালকা আকাশী রঙের শাড়ি। মাথায় গাঢ় নীল রঙের স্কার্ফ। তুমি আপন মনে হাঁটছ। হঠাৎ একটা সাপ এসে তোমাকে ছোবল দিল। হাঁটুর কাছে ছোবল।