হেদায়েত বলল, রবিন সাহেব কি যাচ্ছেন?
সেতু বলল, হঠাৎ রবিন সাহেবের কথা উঠল কেন? উনি গেলে তোমার কোনো সমস্যা আছে। উনি তোমার মতো গর্ত-মানব না যে গর্ত খুঁড়ে গর্তে বসে থাকেন। উনি ঘুরতে পছন্দ করেন। উনার বারো সিটের একটা মাইক্রোবাস আছে। সেটা নিয়ে আমরা যাচ্ছি।
ভালো তো।
রবিন ভাইকে নিয়ে তোমার কি কোনো কনফিউশন আছে। কনফিউশন থাকলে ঝেড়ে কাশ।
কোনো কনফিউশন নেই।
তোমাকে বলতে ভুলে গেছি উনি একটা ছবি প্রডিউস করতে চাচ্ছেন। ফুল লেংথ ছবি। ইন্টিলেকচুয়াল শুকনা গরুর খড় টাইপ ছবি না। কমার্শিয়েল ছবি। নাচ থাকবে, গান থাকবে, মারপিট থাকবে। হিরো থাকবে, ভিলেন থাকবে, কমেডিয়ান থাকবে। রবিন ভাই চাচ্ছেন আমি যেন সেই ছবিতে অভিনয় করি। তোমার কি আপত্তি আছে?
না।
দিনের পর দিন আউটডোরে থাকতে হবে, এটা মাথায় রেখে তারপর বল। তোমার অসুবিধা হবে না?
উঁহু।
হেদায়েত খাওয়া শেষ করে বলল, আমি একটু ভাইজানের কাছে যাব।
সেতু বলল, যাও। এমন ভাবে বললে যেন আমার পার্মিশন চাচ্ছ। তোমার সেখানে যেতে ইচ্ছা করলে যাবে। রাতে কী খাবে বল, আমি নিজেই রান্না কব। ইটালিয়ান খাবার করব? খাবে।
হুঁ।
তোমার কি ফিরতে দেরী হবে?
বুঝতে পারছি না। ভাইজান আমাকে এক পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যাবেন। উনি তাবিজ দিবেন।
তুমি ম্যাথের টিচার। টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরিতে গলায় তাবিজ বেঁধে ঘুরবে?
ভাইজান আগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া আমি এখন ম্যাথের টিচার না। আমার চাকরি চলে গেছে।
সেতু বলল, তোমার চাকরি চলে গেছে মানে?
হেদায়েত বিড় বিড় করে বলল, প্রিন্সিপ্যাল সাহেব নিজেই ডেকে বলেছেন। পুরো মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন।
চাকরি চলে গেল কেন?
একটা মেয়ে আমার বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করেছে।
কী কমপ্লেইন করেছে?
আমি না-কি গভীর রাতে ওদের টেলিফোন করি, পর্নোগ্রাফিক কথা বলি।
সেতু বলল, মেয়েটা পাগল না অন্যকিছু? আমার তো ইচ্ছা করছে। মেয়েটাকে থাপড়াতে।
হেদায়েত বলল, বাদ দাও।
সেতু বলল, বাদ দেব কেন? আমার তো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা মেয়ে মিথ্যা করে একটা কথা বলল আর তাতেই তোমার চাকরি চলে গেল। এটা কি মগের মুল্লুক?
হেদায়েত বলল, আমি এখন যাই। রাতে কথা হবে।
বেলায়েতের পরিচিত পীর সাহেব ভক্তদের নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে এক বজরা টাইপ নৌকায় বাস করেন। তার যোগাযোগ নাকি পানির পীর খিজির আলায়হেস্ সালামের সঙ্গে। তাকে কোনো প্রশ্ন করলে তিনি নদীর পানি ছুঁয়ে জবাব দেন। পানি থেকে তিনি না-কি ইশারা পান।
বেলায়েত ভাইয়ের সমস্যা বিস্তারিত বলতে গেল। পানি-পীরের এক মুরিদান বেলায়েতকে থামিয়ে দিয়ে উদাস গলায় বলল, পানি-পীর কেবলাকে কিছু বলা লাগে না। তিনি সবই জানেন। খামখো সময় নষ্ট। আপনার ভাইকে পীর সাহেবের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন।
হেদায়েত পানি-পীরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। পানি-পীর ডান হাত নদীর পানিতে ভিজিয়ে হেদায়েতের মাথায় রেখে চোখ বন্ধ করলেন। কিছু সময় পার করার পর চোখ মেলে বললেন, বাধা! রাতে কি ঘুম একেবারেই হয় না।
হেদায়েতের রাতের ঘুমের কোনো সমস্যা নেই। বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুম। তারপরেও বলল, জ্বি ঘুম হয় না।
বদ হজম হয়? কোনো কিছুই হজম হয় না। চুয়া ঠেহর।
হেদায়েতের হজমের কোনো সমস্যা নেই। তারপরেও সে ক্ষীণ স্বরে বলল, জ্বি।
প্রসাবেরও সমস্যা আছে? প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া আছে? মাঝে মাঝে রক্ত যায়?
হেদায়েত ক্ষীণ স্বরে বলল, জ্বি। তার কাছে মনে হচ্ছে নোংড়া কম্বল গায়ে বসে থাকা মানুষটা ভয়ংকর প্রকৃতির। তার প্রতিটি কথা মেনে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
বেলায়েত অসহায়ভাবে ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। হেদায়েত এইসব কঠিন সমস্যা তার কাছে গোপন করেছে এই ব্যাপারটাও তাকে দুঃখ দিচ্ছে।
পানি-পীর বললেন, চিন্তার কিছু নাই। খিজির বাবার দোয়ায় সব সমস্যার আহসান হবে। আরেকবার আসতে হবে শনিবারে। শনি মঙ্গলবার ছাড়া খিজির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়।
বেলায়েত পানি-পীরকে কদমবুসি করে পাঁচশ টাকা দিল। পানি-পীর বললেন, আত্মা এতো ছোট কেন বাবা। আত্মা বড় কর। টাকা-পয়সার কোনো প্রয়োজন আমার নাই। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি খেয়ে একবার তিনমাস কাটিয়েছি। টাকা দিয়ে আমি কী করব? টাকার দরকার আমার মুরিদানদের বুঝেছ? Understand? দিলে নিম্নে এক হাজার, না দিলে এক কাপ পানি হাতে ঢাইলা দিবা, তাতেও চলবে। Understand?
বেলায়েত আরও একটা পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে ভাইকে নিয়ে রওনা হলো। বেলায়েতের মনটা অত্যন্ত খারাপ। ভাইয়ের এত সমস্যা, সে কাউকে কিছু বলছে না।
হেদায়েত বলল, ভাইজান আমার চাকরি চলে গেছে।
বেলায়েত হতভম্ব গলায় বলল, বলিস কি! চাকরি কেন গেল?
হেদায়েত কিছু বলল না। বেলায়েত বলল, বৌকে কিছু জানানোর দরকার নাই। বেকার স্বামী কোনো স্ত্রী দেখতে পারে না। অকারণে ঝগড়াঝাটি করবে। কী দরকার? তুই কলেজ টাইমে বেলায়েত টিম্বারে চলে আসবি। বই-পুস্তক পড়বি। মাসের এক তারিখে বেতনের টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবি।
আচ্ছা।
দি নিউ বিরানী হাউস এন্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তোকে বানায়ে দিতে পারি। টাকা-পয়সার হিসাব রাখবি, পারবি না?
পারব।
অংকে তোর যেরকম মাথা না পারার কোনো কারণ নেই। তবে ভাইয়ের রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার হওয়া ঠিক না।