ইন্টারেস্টিং তো?
ইন্টারেস্টিং না, দুঃখজনক। এমন প্রতিভাবান একজন অংকবিদ ডুয়েট লড়তে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা গেলেন।
দুঃখের গল্প শুনব না। তোমার অংকবিদদের মধ্যে আনন্দের বা মজার কোনো গল্প নেই।
Euler এর গল্প আছে। উনি অংক দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে আল্লাহ আছেন।
ঠিক আছে, Euler সাহেবের গল্পই শুনব।
হেদায়েতের ভালো লাগছে যে তার স্ত্রীর গা থেকে পচা সেন্টের গন্ধটা আসছে না। শোবার সময় সেতু নিশ্চয়ই গায়ে সেন্ট মেখে ঘুমাবে না।
সেতু চা খেয়ে ঘুমুতে এসে দেখে হেদায়েত আরাম করে ঘুমাচ্ছে।
সারারাতই হেদায়েত আরাম করে ঘুমালো। একবার শুধু মনে হলো তার হাত একটা মেয়ের কোমল হাতের উপর পরেছে। এটা কি সেতুরই হাত না-কি অন্য কারোর? তখন হেদায়েত স্বপ্নে ম্যাথমেটিশিয়ান ইউলারকে দেখল। তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলছেন— এটা কার হাত তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কেন করছেন? যে কোনো সমস্যার সমাধান অংক দিয়ে করা যায়।
হেদায়েত বলল, স্যার আমাকে তুমি করে বলবেন। আপনার মতো মানুষ আমাকে আপনি করে বলছেন আমার খুবই লজ্জা লাগছে।
আমি সবাইকে আপনি বলি। সাত বছরের বালককেও আপনি বলি। বুঝেছ?
ইয়েস স্যার।
এখন আসুন অংক দিয়ে আপনার সম্যাসার সমাধান করি। হাতের আঙ্গুল থাকে পাঁচটা, কাজেই আমাদের ইকুয়েশনটার ফ্যাক্টর হবে পাচটা। ফিফথ অর্ডার ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন ভেরিয়েবলও পাঁচ। হেদায়েত হাতে কি কোনো আংটি আছে?
ইয়েস স্যার।
এই তো একটা ঝামেলায় ফেললেন। আংটি কি একটা না দুটা।
একটা।
পাথর বসানো আংটি?
জ্বি স্যার।
বিরাট জটিল অংকের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কাগজ-কলম দিয়ে ট্রাই করে দেখি।
স্বপ্নের এই পর্যায়ে হেদায়েতের ঘুম ভাঙল। সে বাতি জ্বালালো। অবাক হয়ে দেখল সেতুর হাতে হাত রেখে সে ঘুমাচ্ছে। সেতুর হাতে হীরার আংটি ঝলমল করছে। এই আংটি সেতুর যেই মামা লন্ডন থাকেন তিনি দিয়েছেন।
রবিন সাহেবের ঠিক করা নিউরো সার্জনের কাছে হেদায়েত গিয়েছে। সে একা যায় নি, তার ভাইকে নিয়ে গেছে। বেলায়েত ভীতু মুখে বসে আছে এবং মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছে। ভাইয়ের জন্যে সে দুঃশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। নিউরো সার্জনের নাম ড, আখলাক। গম্ভীর ধরণের মানুষ, কিছুটা রাগী। এর মধ্যে একবার বেলায়েতকে বলেছেন, আমি রুগীকে যে সব প্রশ্ন করছি তার উত্তর রুগী দেবে। আপনি উত্তর দিচ্ছেন কেন? আপনাদের বংশে কোনো পাগল আছে?
হেদায়েত উত্তর দেবার আগেই বেলায়েত বলল, চৌদ্দ গুষ্টিতে কেউ নেই স্যার। আমার পরদাদার পাগলামী স্বভাব ছিল, তবে উনি পাগল ছিলেন না। উনি ঠিক করেছিলেন পায়ে হেঁটে মক্কাশরীফে যাবেন। উড়িষ্যা পর্যন্ত যাবার পর তাকে একটা বাঘে খেয়ে ফেলেছিল। চিতা বাঘ। গাছের উপর ঘাপটি মেরে বসেছিল, ঝাপ দিয়ে পড়েছে।
ড. আখলাক, বেলায়েতের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি আর একটি শব্দও করবেন না।
হুঁ, হ্যাঁও না।
বেলায়েত ঝিম মেরে গেল। ড. আখলাক হেদায়েতকে বললেন, আপনার গন্ধ বিষয়ক কোনো সমস্যা আছে?
হেদায়েত বলল, জ্বি না।
বেলায়েত বলল, সে না বলছে কিন্তু স্যার তার গন্ধ বিষয়ে সমস্যা আছে। আমার স্ত্রীর গায়ে কোনো গন্ধ নাই। হেদায়েত তার গা থেকে রসুনের গন্ধ পায়।
ড, আখলাক বললেন, নিউরো সমস্যায় গন্ধ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রুগী হঠাৎ নাকে পোড়া গন্ধ পায়। ঝাঝানো গন্ধ পায়। আবার উল্টোটাও হয়– রুগী হঠাৎ হঠাৎ কিছু কিছু সময়ের জন্যে গন্ধহীন হয়ে যায়। আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি। টেস্টগুলি করবেন, CT scan করতে হবে। দশদিন পর আসবেন। একা আসবেন। ভাইকে আনবেন না।
বেলায়েত বলল, স্যার আমার ভাইকে ঠিক করে দিন। টাকা-পয়সা কোনো ব্যাপার না। প্রয়োজনে তাকে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর যেখানে বলেন সেখানে নিয়ে যাব। আপনাদের দোয়ায় আমার টাকা-পয়সা আছে। ক্যাশ টাকা অবশ্যি কম। বেশির ভাগ টাকাই ব্যাবসায় খাটাচ্ছি। তারপরেও চব্বিশ ঘণ্টার নোটিশে দশ-পাঁচ লাখ বের করতে পারব ইনশাল্লাহ।
ড. আখলাক কঠিন গলায় বললেন, সাতদিন পর আসবেন। এবং আবারও বলছি— রুগী একা আসবে। রুগীর সঙ্গে কেউ আসবে না।
চেম্বার থেকে বের হয়ে বেলায়েত বিরস গলায় বলল, ডাক্তার সুবিধার না। বদ ডাক্তার। যে রুগীকে কথা বলতে দেয় না, সে কেমন ডাক্তার। তুই কি বলিস?
হেদায়েত বলল, ভাইজান আমাদের বংশে কোনো পাগল নাই, কথাটা তো ঠিক না। দাদাজান পাগল ছিলেন। শেষের দিকে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো।
বেলায়েত বলল, আগ বাড়িয়ে মানুষকে এইসব কথা বলার কোনো দরকার আছে? সব জিনিসই প্রকাশ করতে নাই। তোর ভাবীর কিছু সমস্যা আছে, সেটা কি কখনও তোকে বলছি?
না।
বেলায়েত বলল, যাই হোক, তুই যে সমস্যায় পড়েছিস সেটা ডাক্তারের আন্ডারে পড়ে না। পীর-ফকিরের আন্ডারে পড়ে। আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি তারা পাওয়ারফুল পীর-ফকির খুঁজতে শুরু করেছে।
আচ্ছা।
ইসমে আজম জানা কাউকে পাওয়া গেলে তার এক ফুতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
হেদায়েত বলল, ইসমে আজমটা কী?
হাই লেভেলের কেরামতি, মারফতি জিনিস। তুই বুঝবি না। তোর বুঝার দরকার কী? তোর সমস্যার সমাধান হলেই তো হলো। না-কি?
হুঁ।
বেলায়েত বলল, একটা সিএনজি নিয়ে চলে যা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আরাম করে একটা ঘুম দে।
হেদায়েত বলল, বাসায় যেতে ইচ্ছা করছে না।
তাহলে কী করবি?
তোমার সঙ্গে থাকব।