জ্বি আচ্ছা।
তুই কি কিছু বলবি?
আলতাফ বিড় বিড় করে বলল, সবাই আসতে শুরু করেছে, মামা।
কি বললি?
পোকারা আসতে শুরু করেছে।
বুঝতে পারছি না–পরিষ্কার করে বল কে আসছে?
পোকারা আসছে।
আসুক না, অসুবিধা কি?
ওরা আমাকে খেয়ে ফেলার জন্যে আসছে মামা।
তোকে খাবে কেন? ওদের কি খাওয়ার অভাব পড়েছে?
আমাকে ওরা পছন্দ করে তো মামা, এই জন্যেই খেয়ে ফেলবে।
পছন্দ করলেই খেয়ে ফেলতে হবে? আমি তোকে পছন্দ না করলেও তুই তো আমাকে পছন্দ করিস। তাই বলে কি তুই আমাকে খেয়ে ফেলেছিস, না খাওয়ার কথা চিন্তা করছিস?
পোকাদের চিন্তাভাবনা তো মানুষের মতো না মামা। ওরা অন্যভাবে চিন্তা
করুক অন্যভাবে চিন্তা। তুই ভাবিস না।
আমার ভয় লাগছে মামা। দূর দূর খেকে পোকার আসতে শুরু করেছে।
বজলুর রহমান সান্ত্বনার স্বরে বললেন, তুই কোন চিন্তা করিস না। তোকে খেয়ে ফেলবে বললেই হল? আমরা আছি কি জন্যে? দরকার হলে ঘরের চারকোণায় DDT পাউডার দেব। DDT পাউডার মারাত্মক জিনিস–পোকার বাবাও আসতে পারবে না। তুই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকু–মোটেও চিন্তা করবি না।
জ্বি আচ্ছা।
বজলুর রহমান ব্যাপারটাতে তেমন গুরুত্ব দিলেন না। জ্বর বেশি বাড়লে লোকজন অসংলগ্ন কথা বলে। আলতাফ তাই করছে। বজলুর রহমান ফাইল হাতে অফিসের দিকে রওনা হলেন।
.
১৫.
আমার নাম বজলুর রহমান। আমি আলতাফ হোসেনের মামা।
ও আচ্ছা। বসুন।
আমি স্যার ফাইলটা নিয়ে এসেছি।
মনসুর সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কি ফাইল?
একটা জরুরি ফাইল যে আপনি আলতাফকে দিয়েছিলেন, ফাইলটা হারিয়ে গিয়েছিল–ঐ ফাইল।
মনসুর সাহেব অবাক হয়ে বললেন, সেই ফাইল আপনি কোথায় পেলেন?
গাধাটা বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। তারপর ভুলে গেছে। এ রকম যে হবে জানা কখা।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ফাইলটা হারালে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যেত।
বজলুর রহমান বললেন, আলতাফের মত লোক যখন আছে তখন ভবিষ্যতে আরো অনেক ক্ষতি হবে। করবেন কি! উপায় তো কিছু নেই।
চা খান।
চা খাব না। চলে যাব। ফাইলটা পৌঁছে দিতে এসেছিলাম। দিলাম। ঐ দিন তো আপনিই আমার বাসায় গিয়েছিলেন?
জ্বি।
আপনি যে বড় সাহেব দেখে মনেই হয় না। আপনাকে একটা জরুরি কথা বলি–আলতাফকে কখনো গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ দেবেন না। এলেবেলে ধরনের কাজ দেবেন। সে সুন্দর করে করবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছেন কি ভজঘট করে ফেলবে। মাখা ঠিক নেই তো!
মাথার ঠিক নেই?
জ্বি-না। ছোটবেলায় তার মাকে পোকায় খেয়ে ফেলল–সেই থেকে মাথাটা খারাপ। সারাক্ষণ পোকা পাকা করে।
উনার মাকে পোকায় খেয়ে ফেলেছিল না-কি?
জ্বি। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য! বলতে গেলে শশার মত কচক করে খেয়ে ফেলেছে। আপনাকে আর বলতে চাই না। বললে হয়ত দুপুরে ভাত খেতে পারবেন না। স্যার, উঠি তাহলে?
উঠবেন?
উপায় নেই স্যার, উঠতেই হবে। আলতাফের জ্বর। ভুল বকছে। বলছে–পোকা আসছে–খেয়ে ফেলবে–এইসব হাবিজাবি। তাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার।
জ্বর তাহলে খুব বেশি?
বেশি মানে? বগলের নিচে থার্মোমিটার দিলে–থার্মোমিটারে আগুন ধরে যাবে এমন অবস্থা। স্যার, তাহলে ইজাজত দেন–বিদায় নেই। ঐদিন বাসায় গিয়েছিলেন, চিনতে পারিনি। তেমন সমাদর করতে পারিনি। আরেকবার যদি আসেন–বড় খুশি হব।
আচ্ছা, যাব আরেকবার।
.
মনসুর সাহেব অবাক হয়ে ফাইলটার দিকে তাকিয়ে আছেন। ভয়ংকর রাগ হওয়া উচিত। লোকটা এরকম একটা কাজ করে কি করে? আর করার পরেও নির্বিকার থাকে কিভাবে? আশ্চর্যের ব্যাপার, আলতাফের উপর তার কোন রাগ লাগছে না। বরং প্রচণ্ড রকম মায়া হচ্ছে। তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারছেন–আলতাফ এই ফাইল বাসায় নিয়ে যায়নি। গনি নিয়ে গেছে। গনি যে একটা বাজারের ব্যাগে ভরে। ফাইল নিয়ে গেছে, তা-ও তিনি জানেন। কিভাবে জানেন? কে তাকে বলল? কেউ তো বলেনি। গনি ঐ বাড়িতে কি কি কথা বলেছে তা-ও তিনি জানেন। এটা কিভাবে হয়? সকাল দশটায় ঐ বাড়িতে গনির একটা কাজের মেয়ে দিয়ে আসার কথা। সে কি দিয়ে এসেছে?
মনসুর সাহেব বেল টিপে বেয়ারাকে ডাকলেন, সহজ স্বরে বললেন, গনি সাহেবকে আসতে বল।
গনি আসুক। তার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
স্লামালিকুম স্যার। আমাকে ডেকেছেন?
বসুন গনি সাহেব। ভাল আছেন?
জ্বি স্যার, ভাল।
বসুন, দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
গনি বসলেন। মনসুর সাহেব হাই তুলতে তুলতে বললেন, চা বা কফি কিছু খাবেন?
চা একটু খেতে পারি স্যার। ঐদিন ঠাণ্ডা লেগে বুকে কফ বসে গেছে। গরম চা। খেলে ভাল লাগবে। দুধ যেন না দেয় স্যার। আমাকে একজন বলেছে–চায়ের মধ্যে দুধ বিষের মত কাজ করে।
মনসুর সাহেব গনির চায়ে দুধ দিতে নিষেধ করলেন। তারপর ঝুঁকে এসে বললেন, ঐদিন আপনি আলতাফের বাসায় গিয়েছিলেন?
গনি হকচকিয়ে গেলেন কিন্তু নিজেকে সামলে নিলেন। সহজভাবে বললেন, জি স্যার?
সঙ্গে একটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন?
জ্বি স্যার।
ব্যাগে কি ছিল?
কিছু ছিল না স্যার।
আলতাফ সাহেবের বাসায় সকাল দশটার ভেতর একটা কাজের লোক দেয়ার কথা ছিল। কই, দেননি তো!
গনি অস্বস্তি বোধ করছেন। এই লোকটা এত কিছু জানে কোত্থেকে? কে বলেছে?
কি, কথা বলছেন না কেন? সকাল দশটায় একজনকে দেয়ার কথা না?
যাকে দেব বলেছিলাম সে গতরাতে হঠাৎ বরিশাল চলে গেছে। আমার স্ত্রীকে বলেছে–ভাইয়ের অসুখের খবর পেয়ে যাচ্ছে। আসলে ভাওতাবাজি। আমি থাকলে যেতে পারত না।