পুতুলের মাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। পুতুলের বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি নিজেও আর সহ্য করতে পারছেন না। তিনি বসে আছেন টেলিফোনের সামনে। টেলিফোন বাজতেই তিনি রিসিভার তুলে বলছেন, কোনো খবর আছে?
কোনো খবর নেই।
.
এরা কেউ জানে না, পুতুল ঢাকা ফিরে আসছে। সে রেলের তৃতীয় শ্রেণীর একটি কামারায় মেঝেতে বসে আছে। তার পিঠে মাথা রেখে মরিয়ম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
ট্রেন দ্রুত ঢাকার দিকে ছুটে আসছে। কামরার গাড়ি-ভরা ঘুম।
কমলাপুর রেল স্টেশনে তারা পৌঁছুল শেষ রাতে। অন্ধকার কাটে নি। তবে আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। তারা ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। যেন তাদের সব কথা ফুরিয়ে গেছে।
বাড়ির কাছাকাছি এসে অন্তু এবং মরিয়ম থমকে গেল। কী বিশাল বাড়ি! কী প্রকাণ্ড গেট! অন্তু বলল, এই বাড়ি?
হ্যাঁ।
তোমার বাড়ি!
হ্যাঁ।
সত্যি?
হ্যাঁ, সত্যি।
মরিয়ম ফিসফিস্ করে বলল, তোমরা কি দেশের রাজা?
পুতুল হা বা না কিছুই বলল না। তার চোখে পানি এসে গেছে। এই পানি সে তার বন্ধুদের দেখাতে চায় না। চোখের জল গোপন করবার জন্যেই সে ছুটে বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকে পড়ল।
.
মরিয়ম এবং অন্তু হাত ধরাধরি করে ফিরে চলল স্টেশনের দিকে। শীতে দু জনই কাতর। একেবারেই খালি গা বলে অন্তুর শীতটা বেশি লাগছে। সে কাঁপছে থরথর করে। মরিয়ম বলল, শীত লাগে ভাইজান?
না, লাগে না।
এক বুড়ো ছেঁড়া কাগজ, শুকনো পাতা জড় করে আগুন করেছে। হাত মেলে বুড়ো চুপচাপ বসে আছে। দু’ ভাই-বোন এগিয়ে গেল আগুনের পাশে। তাদের কচি কচি হাত মেলে ধরল আগুনের ওপর।
বুড়ো বলল, শীতে বড় কষ্ট হয়, না রে?
তারা দু জন এই প্রশ্নের জবাব দিল না। কারণ এই মুহূর্তে শীতের জন্যে তাদের কষ্ট হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে অন্য কোনো কারণে। সেই কারণটা কী তারা পুরোপুরি জানে না। জানার কথাও নয়। যখন বড় হবে তখন হয়তো জানবে। কিংবা কে জানে হয়তো কোনো দিনই জানবে না।