দুশ টাকা আপনি দিবেন?
কি করব বলেন। বন্ধুর অপমানে আমার অপমান। নিল, নোটটা ভাঙ্গায়ে দুশ টাকা রাখুন।
দিচ্ছেন এখন পুরেটিাই দিয়ে দেন।
তাহের দরাজ গলায় বলল–রেখে দিন চারশ রেখে দিন। একশ টাকা শুধু ফেরত দিন। চা পাতা চিনি কিনতে হবে। নয়ত পুরোটাই দিয়ে দিতাম। একশ টাকার নোটটি কাইগুলি ভাঙ্গায় দিন। পাঁচশ টাকার নোটের ভাংতি পাওয়া যায় কিন্তু একশ টাকার নোটের ভাংতি পাওয়া যায় না। বিচিত্র দেশ।
বরকতউল্লাহ একশ টাকা ফেরত দিল। এবং অস্বস্থির সঙ্গে তাহেরকে দেখতে লাগল। তাহের বলল, বাকিটাও দিয়ে যাব। কোন এক ফাঁকে দিয়ে যাব।
টাকাটা দিতে পেরে তাহেরের স্বস্তি লাগছে। কুকুরের জন্যে নেয়া টাকা নিজের জন্যে খরচ করতে খারাপ লাগতো। মানুষ হিসেবে অনেক নিচে সে নেমে গেছে কিন্তু এখনো কুকুর হতে পারে নি।
প্রায় দুটা বাজে। গণগণে দুপুর। তাহেরের ক্ষিধে হচ্ছে না। ক্ষিধে হবে রাতে। তার স্বভাব প্রায় কুকুরের মতই হয়ে যাচ্ছে। একবেলা ক্ষিধে হয়। বাসায় ফিরে সে গপগপ করে ভাত খাবে। আপাতত কিছু না খেলেও চলবে। তাহের পার্কের দিকে রওনা হল। খালি বেঞ্চ জোগাড় করে শুয়ে থাকবে। ঘুম এলে ভাল। ঘুম না এলেও ক্ষতি নেই। এরপর থেকে সঙ্গে একটা শতরঞ্জির মত রাখবে। ভাঁজ করে পলিথিনের ব্যাগে বেখে। দেবে। প্রয়োজনে বিছিয়ে নিলেই সুন্দর বিছানা। একটা শতরঞ্জি থাকলে গাছের নিচেও শোয়া যায়। খালি বেঞ্চ খুঁজে বেড়াতে হয় না।
খালি বেঞ্চ পাওয়া গেছে। তাহের বেঞ্চে শুয়ে আছে। লক্ষণ ভাল মনে হচ্ছে না। ঘুম আসছে না। পরিচিত মানুষদের একটা তালিকা সঙ্গে থাকলে ভাল হত। তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও সময় কাটে।
শুধু দেখা হয়েছে। ভদ্রলোকের বোধহয় তাহেরকে মনেও নেই। ভদ্রলোকের নাম তফাতাল হোসেন। বিয়ে করেছেন কি না কে জানে। আশাদা পাড়ায় একবার চলে গেলে মন্দ হয় না। পারুলের দুর সম্পর্কের ভাই পরিচয় দিয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলবে। তফাজ্জল সাহেবকে অবশ্যি বাসায় পাওয়া যাবে না। তিনি নিশ্চয়ই নানান কাজ কর্মে থাকেন। তাকে তাহেরের মত অবশ্যই দুপুরে পার্কে শুয়ে থাকতে হয় না।
একবার মুগদা পাড়ায় গেলে কেমন হয়?
মুগদাপাড়ায় পারুলের হলেও হতে পারত শ্বশুরবাড়ি। পারুলের বিয়ে সেখানে হয়েই যাচ্ছিল–মাঝখানে হুট করে সে ঢুকে পড়ল। ওদের সঙ্গে একটু দেখা করে আসা যেতে পারে। আর পারুলের শ্বশুর হবার কথা ছিল সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে।তাহেরের ভালই থাতির হয়েছিল। বাড়িঘর ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। তাদের একটা নারকেল গাছে ছিয়াত্তরটা নারকেল হয়েছিল। তাদের ওল্ড মডেলের টয়োটা গাড়ি বিক্রি করে নতুন গাড়ি কেনার কথা ছিল। কিনেছেন কি না কে জানে। এই খবরটাও জান যেতে পারে।
যার সঙ্গে পারুলের বিয়ে হবার কথা ছিল তার সঙ্গে তেমন আলাপ হয়নি, একবার শুধু দেখা হয়েছে। ভদ্রলোকের বোধহয় তাহেরকে মনেও নেই। ভদ্রলোকের নাম তফাজ্জল হোসেন। বিয়ে করেছেন কি না কে জানে। মুগদা পাড়ায় একবার চলে গেলে মন্দ হয় না। পারুলের দুর সম্পর্কের ভাই পরিচয় দিয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলবে। তফাজ্জল সাহেবকে অবশ্যি বাসায় পাওয়া যাবে না। তিনি নিশ্চয়ই নানান কাজ কর্মে থাকেন। তাকে তাহেরের মত অবশ্যই দুপুরে পার্কে শুয়ে থাকতে হয় না।
আশ্চর্যের ব্যাপার তফাজ্জল সাহেব বাসাতেই ছিলেন। কোথাও বোধ হয় বের হচ্ছিলেন–গায়ে ইস্ত্রী করা সিল্কের পাঞ্জাবী। সুন্দর করে চুল আঁচড়ানো। তাহের এর আগে ভদ্রলোকের চোখে চশমা দেখেনি— এখন সোনালী ফ্রেমের চশমা দেখা যাচ্ছে। সুন্দর মানিয়েছে চশমায়। যাদের চোখ অসুন্দর, চশমায় তাদের ভাল লাগে। চশমা চোখের ত্রুটি ঢেকে ফেলে। ভদ্রলোকের চোখ কি অসুন্দর? তাহের মনে করতে পারল না।
আপনি কাকে চাচ্ছেন?
আপনাকেই চাচ্ছি। আমার নাম তাহের। আবু তাহের। পারুলের দূর সম্পর্কের মামা।
আমিতো ঠিক চিনতে পারছি না।
না চেনারই কথা। ঐ যে পারুল নামের একটি মেয়ের সঙ্গে এনগেজমেন্ট হল। তারপর বিয়ে হল না।
ও আচ্ছা।
ভদ্রলোকের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। একটু আগে মানুষটাকে সুন্দর দেখাচ্ছিল–এখন রাগী রাগী দেখাচ্ছে। বিয়ে ভাঙ্গার অপমান বেচারা এখনো ভুলেনি।
আমার কাছে কি ব্যাপার?
আমি আপনাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কি মনে করে যেন ঢুকে পড়েছি। অপরাধ ক্ষমা করবেন। আসলে আপনাদের বাড়ি দেখে পুরানো কথা মনে পড়ে মনটা খারাপ হল। পারুলকে কত বুঝিয়েছিলাম। কত বলেছি–তুই ভুল করছিস, বিরাট ভুল। জীবন দিয়ে সেই ভুলের মাশুল শোধ করতে হবে। এখন তাই করছে। আপনার আবা কেমন আছেন? এরকম ভদ্রমানুষ এ যুগে সচরাচর চোখে পড়ে না। উনাকে আমার সালাম দিবেন।
বাবা বেঁচে নেই। গত নভেম্বরে ইন্তেকাল করেছেন।
বলেন কি? সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠছিলেন–হঠাৎ স্ট্রোকের মত হল–গড়িয়ে পরে গেলেন।
আহা হা। আমি তো দেখেছিলাম খুব ভাল স্বাস্থ্য।
স্বাস্থ্যতো উনার বরাবরই ভাল ছিল। মৃত্যুর আগের দিনও জগিং করেছেন।
তাহের সত্যি সত্যি ব্যথিত হল। সে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ভাই তাহলে যাই। হঠাৎ এসে বিরক্ত করলাম–কিছু মনে করবেন না।
না, না, মনে করার কি আছে?
বিয়ে করেছেন কি?
জ্বি।
আলহামদুলিল্লাহ। শুনে খুব খুশী হলাম। পারুল মেয়েটার উপর কোন রাগ রাখবেন না। দুঃখী মেয়ে এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছে। এখন বুঝে আর লাভ কি বলুন? ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে। ভাই যাই?