যেটা ভাল বুঝ কর। তারপর একটা বিল দিও টাকা দিয়ে দেব। এক কাজ কর ক্যাশিয়ালের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা এডভান্স নিয়ে যাও। যা খরচ লাগে কর। বাকিটা ফিরত দিও। এখনই চলে যাও। জিনিসটা আমি ঝুলিয়ে রাখতে চাই না। স্যারের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে। ভাবতেই আমার খারাপ লাগছে।
স্যার, আমি তাহলে যাই।
দাঁড়াও এক মিনিট–তুমি নাকি মনিকার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছ? আমাদের রিসিপসনিষ্ট মনিকা।
আমি তো স্যার কারুর সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করি না।
আমি অবশ্য মনিকাকে তাই বলেছি। যাই হোক তার সঙ্গে তোমার কথা বলারই দকার নেই। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই কথা বলতে হবে?
আমি কি স্যার যাব?
অবশ্যই যাবে।
কুকুরকে ইনজেকশন দিয়ে কি স্যার খবর দিয়ে যাব?
তোমার নিজের আসার দরকার নেই। বরং সন্ধ্যার দিকে একটা টেলিফোন করে জানিয়ে দিও। তাহলে আমি নিশ্চিত হতে পারি।
এখনই আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যান স্যার। আজ দিনের মধ্যেই আমি ইনজেকশন দেয়া।
গুড।
আমি স্যার রাতে টেলিফোন করে দেব।।
টেলিফোন সন্ধ্যা ৭ টার আগে করবে। টেলিফোন নাম্বার আছে? মনিকার কাজ থেকে আমার একটা কার্ড নিয়ে যাও।
জি আচ্ছা স্যার।
তাহের হাসিমুখে বের হয়ে এল। ক্যাশিয়ারের কাছে ভাউচার সই করে পাঁচশ টাকা নিল। স্টোরের ফ্রীজ থেকে ইনজেকশানের এমপুল নিল। তারপর গেল মনিকার কাছে। হাসি মুখে বলল, ভাল আছেন?
মনিকা তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল। জবাব দিল না।
তাহের বলল, রহমান সাহেব বলেছেন তাঁর একটা কার্ড আমাকে দিতে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে স্যারকে ইটারকমে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
মনিকা দুয়ার খুলে কার্ড ডেস্কে রাখল। কথা বলে সে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছে না।
তাহের হাই তুলতে তুলতে বলল, স্যারের নামে আমার বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করেছেন কেন? যা বলার আমাকে বললেই হত। কমপ্লেইন টমপ্লেইনতো ছেলেমানুষী ব্যাপার। বাচ্চারা করে, বড় বোনের কাছে নালিশ করে, মার কাছে নালিশ করে।
আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না।
কোন কোন মানুষের ভেতর অবশ্যি নালিশ করার অভ্যাস থেকেই যায়। তারা ম্যানেজারকে নালিশ করে, বসকে নালিশ করে। যাদের ম্যানেজার বা বস বলে কেউ থাকে না–তারা আল্লাহর কাছে নালিশ করতে বসে।
মনিকা কঠিন স্বরে বলল, আপনার যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকে–স্যারকে গিয়ে বলুন।
আমি তো আগেই বলেছি আমার নালিশ করার অভ্যাস নেই। আমার স্ত্রীরও নেই। এই একটা দিকে আমাদের খুব মিল। অন্য কোনদিকে কোন মিল নেই। যেমন বাচ্চার নামের ব্যাপারটাই ধরুন। বাচ্চা আসতে এখনো অনেক দেরী–এর মধ্যে নাম খোঁজা খুঁজি। নামের জন্য বই কেনা। শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক হয়েছে–আনান। আনান শব্দের অর্থ হল মেঘ। নামটা আপনার কেমন লাগছে?
মনিকা তীব্র গলায় বলল, আপনি যদি এক্ষুণী বিদেয় না হন তাহলে আমি স্যারের কাছে বাধ্য হয়ে যাব।
তাহের সহজ গলায় বলল, আমি চলে যাচ্ছি। অল্পতে রেগে যান কেন? মেয়েরা হবে সর্বংসহা। তাদের এত অল্পতে রাগলে চলে?
মনিকার ঠোঁট কাঁপছে। মেয়েটা ভয়ংকর রেগে গেছে। এত সুন্দর একটা মেয়ে কেন অকারণে এত রাগে? তাহের অফিস থেকে বেরুল। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্রশ্ন উঠে না। কুকুরের ইনজেকশনতো অনেক পরের ব্যাপার। তিন শয়তানকে এক বেবীটেক্সীতে করে নিয়ে যাবে? হাস্যকর একটা কথা না? ম্যানেজার সাহেবের হাস্যকর কথা বিশ্বাস করার রহস্য হল, বিশ্বাস করার কারণে তার দায়িত্ব কমে গেছে। কুকুর নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না।
তাহের সময়টা কি ভাবে কাটাবে বুঝতে পারছে না। পার্কের কোন বেঞ্চিতে শুয়ে লম্বা ঘুম দেয়া যায়। গতকাল ঘুম এসেছিল বলে আজও যে ঘুম আসবে তা মনে হয় না। ঘুম না এলে সময় কাটানো একটা সমস্যা। সন্ধ্যা ছটার আগে বাড়িতে যাওয়া যাবে না। রহমান সাহেবকে টেলিফোন করতে হবে কাঢ়িায় কাটায় দুটায়। ম্যানেজার। সাহেবকে জানাতে হবে কুকরের ইনজেকশন যথারীতি দেয়া হয়েছে।
এতক্ষণ সময় সে কাটাবে কিভাবে? জসিমের সঙ্গে দেখা করে এলে কেমন হয়? দিনের পর দিন জসিমের বিছানায় সে ঘুমিয়েছে। কৃতজ্ঞতা বোধ বলেওতো একটা-কিছুক থাকা উচিত। বিয়ের পর সে একবারও জসিমের সঙ্গে দেখা করেনি। এতটা নিমক হান্নাম সে হল কি করে? জসিম কোথায় কাজ করে তাহেরের জানা নেই, সে মেসে চলে যাওয়াই ঠিক করল। অফিস শেষ করে মেসেতো সে ফিরে আসবেই।
জসিমকে মেসে পাওয়া গেল না। সে চার মাস হল মেস ছেড়ে দিয়েছে। পাঁচশ টকা বাকি ফেলে গেছে। কোথায় বাসা নিয়েছে সেই ঠিকানা দিয়ে গিয়েছিল। মেসের মালিক বরকতউল্লাহ সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখে মিথ্যা ঠিকানা। বরকতউল্লা হতাশ গলায় তাহেরকে বলল–এই হচ্ছে আজকের যুগের ভদ্রলোকের নমুনা। তাকে সাহায্যতা কম করি নাই। দিনের পর দিন লোক জন নিয়ে ডাবলিং করেছে। আপনি নিজে ছিলেন তিন মাস। একটা কথা বলি নাই। বলতে গেলে সারাজীবন সিংগেল ভাড়া দিয়ে ডাবল থেকে গেছে। এই তার ফল। টাকা দিতে পারবে না বলুক–ভাই মাফ করে দেন। অসুবিধায় পড়েছি দিতে পারলাম না। এই কথা বলবে না। ফটকাবাজী করবে। শালা হারামী।
তাহের বলল, গালাগালি করবে না। গালাগালিতে কিছু মীমাংসা হয় না। পান কত আপনি?
পাঁচশ।
জসিম টাকা না দেয়, আমি দেব। আপাতত দুশ টাকা রাখুন। ছেলেবেলার বন্ধু তার সম্পর্কে গালাগালি শুনতে ভাল লাগে না। আমার অনেক উপকার করেছে। সে থাকতে না দিলে থাকতাম কোথায়?