না, আমি আন্দাজ করার চেষ্টাও করিনি। কারণ আপনি বলেছিলেন পুরস্কারটা কি তা আমি কল্পনাও করতে পারব না।
রূপা বলল, কিছু কল্পনাতো তারপরেও করেছেন। করেননি?
না।
সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
বসুন চা খাই আগে, তারপর কথা হবে। আমি যে একটা সিনেমা করছি তা কি আপনি জানেন?
জানি–সফিক বলেছে। সজনে ফুল।
আজ সেই ছবির কিছু কাজ হবে বুড়িগঙ্গা নদীতে। বিকেল তিনটা থেকে শিফট। আপনি কি যাবেন?
না।
না কেন?
অনেক লোকজন সেখানে থাকবে। এত লোকজন আমার ভাল লাগে না।
কি জন্যে লোকজনদের ভিড় আপনার ভাল লাগে না? লোকগুলিকে আপনার কি বোকা মনে হয়, না বেশি বুদ্ধিমান মনে হয়?
বোকা মনে হয়।
রূপা হেসে ফেলল। নিজেই চা নিয়ে এল। টী পট থেকে চা ঢালতে ঢালতে বলল, আপনাকে যেমন বলেছি–এমন সুন্দর একটা উপহার দেব যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সে রকম কথা আমি অন্য পুরুষ মানুষদেরও বলেছি। এটা বললে পুরুষদের মধ্যে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন দেখতে আমার ভাল লাগে।
কাউকে কি পুরস্কার দিয়েছেন?
না। বাজি এমন বিষয়ে ধরি যা পূরণ করা সম্ভব না। মুতালেব নামে আমার একজন বন্ধু আছে, তাকে একটা অঙ্কের ধাঁধা দিয়েছি। সে এক বছর ধরে সেই ধাঁধার জবাব বের করার চেষ্টা করছে–বিশেষ পুরস্কারের আশায়, যে পুরস্কারটা কি তা সে জানে না।
বের করতে পারেনি?
কোনদিন পারবেও না। এই ধাঁধাটার কোনো উত্তর নেই। তবে আপনি পারবেন। আপনার চোখমুখ দেখেই মনে হচ্ছে আপনি তৈরি হয়ে এসেছেন। তবে আজ হাতে একেবারেই সময় নেই। কোনো একদিন আপনাকে খবর দেব। বাসায় কি আপনার টেলিফোন আছে? থাকলে নাম্বারটা রেখে যান।
তারপর একদিন অদ্ভুত এক ব্যাপার হল। দুপুরে ঘুমিয়ে আছি–মুনিয়া এসে ডেকে তুলল, টেলিফোন। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ঘুমুচ্ছি বলতে পারলি না?
দিনে তো তুই কখনো ঘুমাস না। কাজেই ভাবলাম বোধহয় মটকা মেরে পড়ে আছিস।
কে টেলিফোন করেছে?
নাম জিজ্ঞেস করিনি, তবে গলার স্বর অসম্ভব মিষ্টি। আমি এরকম মিষ্টি গলার স্বর এর আগে শুনিনি।
আমি টেলিফোন ধরতেই ওপাশ থেকে রূপা বলল, আপনার কি ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি আছে? শাদা পাঞ্জাবি?
কেন?
আছে কিনা বলুন।
আছে।
পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চলে আসতে পারবেন?
পারব, কিন্তু ব্যাপারটা কি?
আপনাকে বিয়ে করতে হবে।
বিয়ে করতে হবে মানে?
অসহায় একজন তরুণীকে উদ্ধার করতে হবে। কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা ধবনের ছেলে জোর করে মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টায় আছে। তাদের একজন মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কি বলছেন আপনি, এই যুগে এটা কি সম্ভব?
এই যুগেই সম্ভব। অন্য যুগ হলে সম্ভব ছিল না।
পুলিশে খবর দিতে বলুন।
পুলিশে খবর দেয়া হয়েছিল। পুলিশ ছেলের নাম শুনে পিছিয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, এখনো তো কিছু ঘটেনি। ঘটলে দেখা যাবে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে তো আমরা এ্যাকশন নিতে পারি না। এখন আপনি ভরসা।
আপনার কি করে ধারণা হল অমি অসহায় তরুণীদের উদ্ধারের ব্রত নিয়েছি?
তরুণীর নাম শুনলে আপনি খুব আগ্রহ করে এই ব্রত নেবেন বলে আমার ধারণা।
কি নাম?
তার নাম রূপা।
আমি প্রথমে ভাবলাম এটা নিশ্চয়ই রূপার কঠিন কোনো রসিকতার একটি। তারপর মনে হল রূপা তো কখনো রসিকতা করে না। অন্যের রসিকতায় খিলখিল করে হাসে–নিজে তো কখনো করে না। রূপা তরল গলায় বলল, মনে হচ্ছে কথা শুনে পাথর হয়ে গেছেন?
বুঝতে চেষ্টা করছি।
শুনুন, খুব মন দিয়ে শুনুন। আমার তালিকায় তিনটি নাম আছে। আপনি হচ্ছেন দুনম্বর। প্রথমজনকে টেলিফোনে পাইনি, ওদের টেলিফোন নেই। কাজেই আপনাকে টেলিফোন করলাম। আপনার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যে আপনাকে পেয়ে গেলাম। আপনি যদি রাজি না থাকেন, স্পষ্ট গলায় বলে দিন। আমি তৃতীয়জনকে টেলিফোন করবো।
ঠাট্টা করছেন?
না, ঠাট্টা করছি না।
প্রথমজনের নাম কি?
প্রথমজনকে আপনি চেনেন না। প্রথমজনের নাম জেনে কোনো লাভ নেই। তৃতীয়জনকে চেনেন, কিন্তু তার নামটা বলতে চাচ্ছি না। আপনাকে চিন্তা করার জন্য আধঘণ্টা সময় দিলাম। যদি রাজি থাকেন তাহলে আধঘণ্টা পর আমাদের বসায় চলে আসবেন।
বিয়ে কি আপনাদের বাসায় হবে?
তা কি করে হয়! আমাদের বাসার চারদিকে মস্তান ঘুরঘুর করছে। সন্দেহ হলেই ককটেল ফোটাবে। ব্রাস ফায়ার করবে।
সত্যি বলছেন?
এক রত্তি বানিয়ে বলিনি। আপনি যদি রাজি থাকেন চলে আসুন। আমি ইতিমধ্যে পুলিশকে টেলিফোন করছি। পুলিশের এক এআইজি আছেন বাবার বন্ধু। তাকে বলব–চাচা, আমাদের বিয়ে দিয়ে দিন।
আপনার বাবা? উনি কোথায়?
বাবা ইংল্যাণ্ডে। তার সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছে।
উনি কি রাজি?
রূপা হাসতে হাসতে বলল, আমি তো তাঁর কোনো মতামত চাইনি। ঘটনা বলেছি–এখন বলুন আপনি কি রাজি?
আমি রাজি আছি।
এতো চট করে রাজি হবেন না। আধঘণ্টা সময় নিন। রাখি, কেমন?
পুলিশের উপস্থিতিতে বিয়ে হল রূপাদের চাচার বাসায়। বিয়ের পর পুলিশের জীপে করেই আমরা বেরুলাম।
রূপা বলল, এখন থেকে তোমাকে তুমি করে বলব। শোন, আমার কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনতে হবে, টুথব্রাশ, চিরুনি, ঘরে পরার শাড়ি। তোমার কাছে কি টাকা আছে?
না।
অসুবিধা নেই। আমার কাছে আছে। নতুন স্বামীরা স্ত্রীর টাকায় কিছু কিনতে চায় না বলেই জানতে চেয়েছি।
আমাকে নিয়ে তুমি সারাসরি তোমার বাসায় তুলবে?