তরুণ : বেঁকা হইয়া হাঁটেন ক্যান?
বশির : রাজার পয়গাম আসতাছে। বড় সুসংবাদ।
[তৃতীয় জনের প্রবেশ। প্রথম দু’জনের মতো মঞ্চ অতিক্রম করবে।]
তরুণী : আপনি কেডা গো?
নিয়ামত : আমি নিয়ামত।
তরুণী : জোয়ান বয়সে অমুন বেঁকা হইয়া হাঁটেন ক্যান?
[নিয়ামত দাঁড়াবে] কমরটা ভাঙলেন ক্যামনে? ঘটনাটা কন।
বৃদ্ধ : নিয়ামত, শীত লাগলে আগুনের কাছে আইসা এট্টু খাড়াও।
নিয়ামত : [হাঁটতে শুরু করবে] বাদ্য-বাজনা শুনা যায় রাজার পয়গাম আয়।
বড় সুসংবাদ।
[দেখতে দেখতে রাজার সংবাদ বহনকারী দল এসে পড়বে। ঢোল আছে, রামসিংগা আছে। একজন ঘোষক আছে।]
ঘোষক : গ্রামবাসী, মন দিয়া শুনেন। রাজা সাবের হুকুমে এই বৎসর বসন্তের উৎসব আগে আগে হইবার কথা। এ বিষয়ে আপনাদের মতামত বলেন।
গ্রামবাসী : [মুখ চাওয়া-চাওয়ি করবেন। গুন গুন কথা হবে।]
ঘোষক : হ্যাঁ, কিংবা না। স্পষ্ট করে বলেন।
ওসমান : পেটে ভাত নাই। রাজা সাবরে ভাত দিতে কন। শীতের মইধ্যে আবার বসন্ত উৎসব কি?
ঘোষক : এত কথা না রে ভাই, হ্যাঁ কিংবা না স্পষ্ট করে বলেন।
ওসমান : না।
ঘোষক : একজন শুধু না বললেন আর সব হ্যাঁ।
[বলতে বলতে বাজনা শুরু হবে।]
গ্রামবাসী : [মুখ চাওয়া-চাওয়ি করবে।]
ঘোষক : ভাই আপনের নাম?
ওসমান : ওসমান।
ঘোষক : আসেন আমাদের সাথে।
ওসমান : কই?
ঘোষক : এত কথা বলবার সময় নাই। আসতে বলছি আসেন।
চলেন এইবার যাই। [ওসমান উঠে দাঁড়াবে।]
গ্রামবাসী : কই যান?
[ঘোষক তার দলবল নিয়ে চলে যায় শো শো করে বইবে শীতের বাতাস। শুকনো পাতা পড়ছে। তিন পিঠ-বাঁকাকে আবার মঞ্চ অতিক্রম করতে দেখা যাবে। এবার একজনের পিছনে একজন। গ্রামবাসী তাকিয়ে দেখবে, কিছু বলবে না। দূরাগত ধ্বনি। গ্রামবাসী সচকিত। ঘোষকের প্রবেশ।[
ঘোষক : সুসংবাদ ভাই, সুসংবাদ! রাজ্যের সব লোক বসন্তের উৎসব চায় তাই উৎসবের সময়টা আপনাদের জানাই মাঘ মাসের নয় তারিখে খুব শুভক্ষণ-এই দিনে উৎসব হবে শুনেন দিয়া মন।
[এ পর্যন্ত বলতেই তরুণটি থু করে থুথু ফেলবে।]
গ্রামবাসী : [থু করে থুথু ফেলবে]
ঘোষক : মাঘ মাসের নয় তারিখে শুভ দিনক্ষণ।
তরুণ : ভাই আপনে রাজা সাবরে ভাত দিতে কন।
ঘোষক : গ্রামাবসী বৃদ্ধ-যুবা শুনেন দিয়া মন।
তরুণ : ভাই আপনে রাজা সাবরে কাপড় দিতে কন।
গ্রামবাসী : ভাত দিতে কন। কাপড় দিতে কন। ভাত দিতে কন। কাপড় দিতে কন। [ঘোষকের লোকজন তরুণটিকে ধরবে এবং নিয়ে যেতে শুরু করবে।]
তরুণী : একটা কথা শুনেন— আপনে কথার জবাব দেন।
আপনে আমার ঘরের মানুষ কোন্ জাগাতে নেন?
ঘোষক : চুপ।
তরুণ : তুই চুপ।
ঘোষক: মনে নাই ডর ভয় বড় বেশি কথা কয়।
তরুণী : [ গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে] ঘরের মানুষ লইয়া যায়,
চাইয়া থাকেন ক্যান। আমার মানুষ আমার কাছে কাইড়া আইন্যা দেন। [ গ্রামবাসী সব একত্রে দাঁড়িয়ে যাবে।]
ঘোষক : খবরদার, চুপ।
[সবাই যে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফ্রীজ হয়ে যাবে।]
নৃপতি – পঞ্চম দৃশ্য
পঞ্চম দৃশ্য
[রাজা বসে আছেন সিংহাসনে। মন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে]
রাজা : বসন্ত উৎসবের আয়োজন কি সুসম্পন্ন?
মন্ত্রী : প্রায়!
রাজা : প্রায় কেন? মনে হচ্ছে কাজ এগুচ্ছে না?
মন্ত্রী : যে রকম ভাবা গিয়েছিল তেমন উৎসাহ পাওয়া যাচ্ছে না। শীতকালটা উৎসবের জন্যে ভাল নয়।
রাজা : এই মতামত কি তোমার?
মন্ত্রী : আমার নয় মহারাজ। মন্ত্রীর নিজস্ব কোন মতামত থাকে না। যারা উৎসবের ব্যাপারে আপত্তি করছে তাদের মতামত।
রাজা : তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয় আশা করি।
মন্ত্রী : খুব কমও নয়। আমি ওদের আপনার সামনে উপস্থিত করছি।
রাজা : কেন?
মন্ত্রী : ওদের কথা আপনার শোনা দরকার।
রাজা : আমাকেই যদি ওদের কথা শুনতে হয়, তাহলে আপনারা কি জন্যে আছেন?
মন্ত্রী : বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন আর ওদের সব কথা পরিষ্কার বুঝতে পারি না।
রাজা : কেন? ওরা কি নতুন কোন ভাষায় কথা বলছে?
মন্ত্রী : হুঁ।
রাজা : বেশ তো, ওদের নিয়ে আসুন।
[বৃদ্ধ ওসমান ও তরুণটি প্রবেশ করবে। এদের দুজনের কোমড়ে দড়ি বাঁধা। খালি গা।]
রাজা : তোমরা ভাল আছ? [বন্দী দু’জন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করবে।]
ওদের বেঁধে রেখেছেন কেন? বাঁধন খুলে দিন। [বাঁধন খুলে দিতেই বৃদ্ধটি নত হয়ে কুর্নিশ করবে।]
শুনলাম তুমি চাও না বসন্ত উৎসব হোক? বৃ
দ্ধ : [ ইতস্ততঃ করে[ বড় অভাব হুজুর! কষ্ট।
রাজা : অভাব থাকবে, কষ্ট থাকবে। আবার সুখও থাকবে। আনন্দ-উল্লাসও থাকবে। বসন্ত উৎসবও হবে।
বৃদ্ধ : হুজুর এটা শীতকাল।
রাজা : শীত ভাবলেই শীত, বসন্ত ভাবলেই বসন্ত। তুমি যদি ভাব এটা বসন্তকাল তাহলে এটা বসন্তকাল। ঠিক না?
বৃদ্ধ : তা তো ঠিকই।
রাজা : তুমি জ্ঞানীর মত কথা বলছ। তুমি বৃদ্ধ, কাজেই তুমি জ্ঞানী। বৃদ্ধরা জ্ঞানী হয়।
বৃদ্ধ : তা তো ঠিকই।
রাজা : মন্ত্রী, আপনি একে একটি উপাধি দেবার ব্যবস্থা করুন।
বৃদ্ধ :হুজুরের দয়া।
রাজা : তোমার উপাধি হবে জ্ঞানবৃদ্ধ।
বৃদ্ধ : হুজুরের অসীম দয়া।
রাজা : আমার পদচুম্বনের দুর্লভ সম্মানও তুমি পাবে।
তরুণ : থু করে থুথু ফেলবে।]
[সবাই তাকাবে। রাজা হাসিমুখে তার পা বাড়িয়ে দেবেন। বৃদ্ধ ইতস্ততঃ করবে। তরুণটির দিকে কয়েকবার তাকাবে। তারপর এগুবে রাজার দিকে।]