ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে ডাকা যাবে না।
চলে যেতে বলছ?
হ্যাঁ, বলছি।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে।
বৃষ্টি তো তোমার খুব পছন্দের জিনিস। বৃষ্টিতে সারাদিন ভেজার জন্যে-মনে নেই তুমি তোমার বন্ধুদের নিয়ে শালবনে গেলে। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে রাতে জ্বর নিয়ে ফিরলে।
আমি বরং সোফায় শুয়ে থাকি। আমার মাথা ঘুরছে। কোন একটা সমস্যা হয়েছে। আমি কি করে এখানে এলাম বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আজ রাতটা থেকেই যাই?
না। তোমার যন্ত্রণা সহ্য করতে আমি আর রাজি না।
দেখ রেবেকা, আমার গায়ের সব লোম এখনো খাড়া হয়ে আছে। এখনো বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা কি। সমস্যাটা কি।
বন্ধুর বাসায় যাও। বন্ধুর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ কর।
আচ্ছা, যাই তাহলে। এটা কোন জায়গা বললে?
পুরানা পল্টন।
ও আচ্ছ, পুরানা পল্টন। কি অদ্ভুত কাণ্ড! রেবেকা যাই।
হ্যাঁ যাও। গুড নাইট।
.
নুহাশের বিছানায় দৈত্য পা ঝুলিয়ে বসে আছে। তার মুখ বিষণ্ণ। দৈত্য বলল, খুকী তোমার কি যেন নাম বললে?
নুহাশ।
হু, নুহাশ। মনে থাকে না। স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি গেছে। বয়সের জন্যে এটা হয়েছে। আমাকে দেখে যত কম বয়স মনে হয়, আসলে তা না। দশ হাজার একশ তেত্রিশ বয়স। যাই হোক, শোন নুহাশ, তোমার বাবাকে এনেছিলাম। লাভ কিছু হল না। কি করা যায় বল তো?
আমি জানি না।
একটা কিছু বুদ্ধি বের কর।
আমি ছোট মানুষ। আমার মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না।
ছোটদের মাথাতেই বেশি বুদ্ধি আসে। বুদ্ধি থাকে না বড়গুলির মাথায়। মানুষ যত বড় হয় তত বুদ্ধি কমে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্রেইন পচে গোবর সার হয়ে যায়। তা না হলে তোমার বাবা-মা এমন ঝগড়া করে?
নুহাশের চোখে পানি এসে গেছে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে যাতে দৈত্য তার চোখের পানি দেখতে না পারে।
নুহাশ!
জ্বি।
কাঁদছ না-কি?
জ্বি– কাঁদছি।
কান্না বন্ধ কর। কেঁদে কখনো কিছু হয় না। বুদ্ধি বের করতে হবে। তোমার মাকে ভয় দেখালে কেমন হয়? সারারাত মারাত্মক ভয় দেখাব। ঠাণ্ডা পানি মাথার উপর ঢেলে দেব।
তাতে কি হবে?
ভয়ে হালুয়া টাইট হয়ে যাবে। তখন বুঝতে পারবে একা একা থাকা সম্ভব না। তোমার বাবাকে নিয়ে আসবে।
নুহাশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বাবাকে না এনে মা যদি অন্য। একটা লোককে বিয়ে করে ফেলে, তখন কি হবে?
দৈত্য মাথা দুলাতে দুলাতে বলল, হ্যাঁ এটা বিবেচনাযোগ্য সমস্যা। এই লাইনে চিন্তা করি নি। বয়সের কারণে আমার নিজের ব্রেইনও পচে গোবর হয়ে গেছে। তোমার মাকে ভয় দেখানো যাবে না। ভাল করতে গিয়ে হয়ে যাবে মন্দ। অন্য কিছু করতে হবে। আজ রাতটা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করি কাল সমস্যার সমাধান করব। তুমি ঘুমিয়ে পড় খুকী।
আমার ঘুম আসছে না।
ঘুম তো আমারো আসছে না। ভাল ঘুম না হলে বুদ্ধি খুলবে না। কি করা যায় খুকী বল তো?
আমার সঙ্গে রান্নাবাটি খেলবেন?
রান্নাবাটি আমার কেমন খেলা?
আমি মিছিমিছি রান্না করব। সেগুলি আপনি খাবেন। খেয়ে বলবেন– মজা হয়েছে।
মন্দ না। খেলাটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। আস খেলা যাক।
নুহাশ সাদা কাগজ কুচিকুচি করে কাগজের ভাত রান্না করল। হলুদ কাগজ কুচিকুচি করে কাগজের ডাল রান্না করল। সবুজ কাগজ কুচিকুচি করে তৈরি হল সবজি। দৈত্যকে খেতে দেয়া হল। সে পুরোটা মুখে কচকচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। নুহাশ হতভম্ভ!
দৈত্য বলল, খেতে তো আসলেই ভাল লাগছে। বিশেষ করে সবজিটা খুবই চমৎকার হয়েছে। সবজি কি আরো আছে?
জ্বি-না।
আরো খানিকটা রেঁধে ফেল। দারুণ টেস্ট হয়েছে।
আপনি তো সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলেছেন। মিথ্যা করে খেতে হয়।
দৈত্য অবাক হয়ে বলল, মিথ্যা করে আবার কিভাবে খায়? তোমার কথাবার্তা তো ভারী অদ্ভুত। যাই হোক, দয়া করে আরো খানিকটা সবজি রান্না কর। সবজি খেয়ে ঘুমুব। এমিতেও আমাদের সবুজ সবজি খাওয়া দরকার। ভিটামিন আছে।
নুহাশের চোখ লাল
০৭.
ভোরবেলা রেবেকা লক্ষ্য করল নুহাশের চোখ লাল। গা গরম। রেবেকা চিন্তিত হয়ে বলল, চোখ লাল কেন নুহাশ?
নুহাশ বলল, এম্নি।
রাতে ঘুম হয় নি?
হয়েছে।
গা গরম লাগছে। চিন্তার ব্যাপার হল তো। জ্বর সারছে না কেন?
মুনার-মা বলল, জ্বীন-ভূতের বাতাস লাগলে জ্বর সারে না।
তুমি চুপ কর মুনার-মা– জ্বীন ভূতের বাতাস বলে কিছু নেই।
না থাকলে নাই। আমার উপরে রাগ হল ক্যান। জ্বীন-ভূতের উপরে রাগ হইলে ভিন্ন কথা।
তোমার উপরে রাগ করি কারণ সুযোগ পেলেই তুমি নুহাশের সঙ্গে জ্বীন-ভূতের গল্প কর। গল্প করে করে ওর সাহস দিয়েছ কমিয়ে। ভীতুর একশেষ হয়েছে।
সাহস কমে নাই আম্মা। মাশাআল্লাহ্ সাহস বাড়ছে। কাইল রাইত একলা একলা ঘুমাইছে।
মুনার-মা!
জ্বি!
মুখে মুখে কথা বলতে হবে না।
জ্বি-আইচ্ছা।
আজ নুহাশকে স্কুলে নেবার দরকার নেই।
জ্বি-আইচ্ছা।
বিকেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। ওর রিপোর্টগুলি সব আজ দেবে। রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখাব। আর শোন, সদর দরজা সারাক্ষণ বন্ধ রাখবে। যেই আসুক দরজা খুলবে না।
আইচ্ছা।
মনে থাকবে তো?
থাকব।
নুহাশের বাবা এলেও খুলবে না।
এইটা কেমন কথা কন আম্মা?
তোমাকে যা করতে বলেছি করবে। নুহাশের বাবা এলেও দরজা খুলবে না। আমার অনুপস্থিতিতে এ বাড়ির দরজা খোলা হোক, তা আমি চাই না।