আপনি যে সত্যি সত্যি দৈত্য এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।
চোখের সামনে দেখলে ধোঁয়া থেকে তৈরি হয়েছি। তারপরেও বিশ্বাস হচ্ছে না? এই হচ্ছে মানবজাতির সমস্যা। এরা কিছুই বিশ্বাস করে না।
দৈত্য বিছানায় বসে, পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের ঘাম মুছল।
নুহাশ বলল, এটা তো খেলনা প্রদীপ। এর ভেতর দৈত্য আসবে কিভাবে?
না জেনে কথা বলবে না তো খুকী। আলাদিনের প্রদীপের মত দেখতে যত প্রদীপ বানানো হয় সবগুলির ভেতর দৈত্য থাকে। এই হচ্ছে নিয়ম! তবে যে-কেউ ঘষলে দৈত্য বের হবে না। মন্দ মানুষের হাতে প্রদীপ কাজ করে না। ভাল মানুষ হতে হবে। বুঝতে পারছ?
না বুঝে নুহাশ মাথা নাড়ল। দৈত্যটা মনে হচ্ছে খুব রাগী। তাকে রাগাতে ইচ্ছা করছে না।
ও খুকী, তোমার কাছে সিগারেট আছে? সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে।
আমার কাছে নেই। আব্বর কাছে আছে। সিগারেট খেলে তো ক্যানসার হয়।
পান আছে? জর্দা দিয়ে একটা পান দাও তো।
পানও নেই।
দৈত্যটা ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলল। বিরক্ত মুখে বলল, খুকী তাড়াতাড়ি বল তোমার কি চাই। তোমার কাজটা করে দিয়ে তারপর ঘুমুতে যাব। আরেকটা কথা, প্রদীপটা তুমি খোলামেলা জায়গায় রাখবে। ফ্যানের কাছে রাখলে খুব ভাল হয়। বাক্সের ভেতর রাখবে না, বাক্সের ভেতর রাখলে গরমে আমার ঘুমের অসুবিধা হয়। এখন চট করে বল কি চাই।
আমার বাবাকে এনে দিন।
তোমার বাবাকে এনে দেব মানে? উনি কোথায়?
মার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে তো। দুজন আলাদা থাকেন।
মানুষগুলিকে নিয়ে কি যে যন্ত্রণা! শুধু ঝগড়া করে। তোমার বাবা থাকে কোথায়?
জানি না। তবে বদরুল চাচার বাসায় থাকতে পারে।
বদরুল চাচার বাসা কোথায়?
জানি না।
না জানলে খুঁজে বের করব কিভাবে?
আপনি দৈত্য। আপনার কত ক্ষমতা।
ক্ষমতা আছে ঠিকই। তাই বেল দশ লক্ষ লোকের ভেতর একজনকে খুঁজে বের করা মুশকিল। তার উপর সব মানুষ দেখতে এক রকম। দুটা চোখ, দুটা কান, দুটা কান … শুধু স্বভাব ভিন্ন। সাধু স্বভাব, চোর স্বভাব, কেজো স্বভাব …।
আপনি বাবাকে খুঁজে বের করতে পারবেন না?
অবশ্যই পারব। না পারার তো কিছু নেই। দৈত্যরা অসাধ্য সাধন করতে পারে, তবে সময় লাগবে। অনেক অনেক সময় লাগবে। চট করে করা অসম্ভব।
কত সময় লাগবে?
দুই তিন মিনিট তো লাগবেই।
তাহলে আপনি এক্ষুণি নিয়ে আসুন। কিভাবে তাঁকে আনবেন? বাবা কিন্তু খুব ভারী। একশ ত্রিশ পাউন্ড ওজন।
তুমি কি ভাবছ আমি তাকে কোলে করে নিয়ে আসব? মানুষের বাচ্চাগুলি এরকম বোকা থাকে তা তো জানতান না। আমি তোমার বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসব। সে এখানে চলে আসবে মনের ভুলে।
কখন আসবে?
বললাম তো দেরি হবে। এই সব জিনিস চট করে হয় না। অনেক সময় লাগে। দুমিনিটের আগে এই কাজ করা অসম্ভব। দুমিনিট ধৈর্য ধরতে হবে।
আচ্ছা আমি ধৈর্য ধরছি।
পানি খেয়ে নেই। দেখি এক গ্লাস পানি দাও তো। আবার বলে বসবে না পানি নেই।
ঠাণ্ডা পানি?
না ঠাণ্ডা পানি না। নরমাল পানি দাও। আমার টনসিলের প্রবলেম আছে। একবার একটা আইসক্রিম খেয়ে এক মাস ভুগেছি। দিন রাত কাশি– খক খক খক্।
দৈত্য পানি খেয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছল। তারপর যাই বলে অদৃশ্য হয়ে গেল। নুহাশের মনে হল পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্ন। স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। তার উচিত বিছানায় শুয়ে পড়া। কিন্তু যদি সত্যি হয়? সত্যি হতেও পারে। নুহাশ চুপচাপ বসে রইল। আর কি আশ্চর্য, দুমিনিটের মাথায় কলিং বেল বাজতে লাগল। যেন কেউ খুব ব্যস্ত হয়ে কলিং বেল টিপছে।
রেবেকা বলল, কে কে?
নুহাশ তার বিছানায় বসে বসেই শুনল, মা তার ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে এসেছেন। মুনার-মাও এসেছে।
রেবেকা বলল, পিপ হোল দিয়ে আগে দেখে নাও কে এসেছে। অপরিচিত কেউ হলে খুলবে না। মুনার-মা পিপ হোলে চোখ রাখল।
ও আম্মা, মনে হইতেছে খালুজান।
খালুজান মানে?
বসার ঘরের দরজা খোলা হল। নুহাশ আর কিছু শুনছে না। সে শক্ত হয়ে বসে আছে। এক সময় নুহাশ শুনল তার মা বলছেন–তুমি, তুমি কোত্থেকে? বাসার ঠিকানা পেলে কোথায়? কে তোমাকে ঠিকানা দিয়েছে?
মিনহাজের হকচকিত অবস্থা। কিছু বলতে পারছে না। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। তার কপালে ঘাম। নিঃশ্বাস পড়ছে ঘনঘন। রেবেকা বলল, কথা বলছ না কেন? বাড়ির ঠিকানা কোথায় পেলে?
আমি জানি না।
আমি জানি না? আবার রসিকতা? বাড়ি খুঁজে বের করলে কিভাবে?
মিনহাজ বিব্রত গলায় বলল, আমি নিজেই কিছু বুঝতে পারছি না। রফিকের বাসা খুঁজতে বের হয়েছিলাম। মালিবাগের এক ফ্ল্যাটবাড়িতে সে থাকে। আচ্ছা, এটা কি মালিবাগ?
না, এটা মালিবাগ না। এটা যে মালিবাগ না তা তুমি ভাল করেই জান।
বিশ্বাস কর আমি জানি না। রফিকের বাসাতেই আমি কলিং বেল টিপছিলাম। দরজায় লেখা ছিল-রফিকুল ইসলাম-৩১/বি মালিবাগ।
তোমার এ জাতীয় অদ্ভুত গল্প আগেও অনেক শুনেছি। আর শুনতে ভাল লাগছে না। রাত হয়ে গেছে–তুমি তোমার বন্ধুকে খুঁজে বের কর। আমরা ঘুমুতে যাব।
এটা মালিবাগ না?
না। এটা পুরানা পল্টন।
ব্যাপারটা কি করে ঘটল আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস কর আমি রিকশা থেকে নামলাম রেল ক্রসিং-এর কাছে। মালিবাগ রেল ক্রসিং
তোমার বানানো গল্প সারাজীবন ধরে শুনেছি–আর না …
নুহাশ! নুহাশ কোথায়?
নুহাশ আছে নুহাশের ঘরে।
ওকে একটু দেখে যাই।