শুক্রবার, মে 16, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

নবনী – হুমায়ূন আহমেদ

Nobani By Humayun Ahmed

আমি বিড় বিড় করে বললাম, আমি জানি না মা।

ইরা বলল, আপা যে উনার কাছে রোজ দুবেলা করে খাবার নিয়ে যায়। এই জন্যেই বোধহয় তাঁর ধারণা হয়েছে আপা তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

বাবা বললেন, হাবুডুবু খাওয়া আমি বের করছি। কত বড় সাহস। কানে ধরে আমি তাকে চর্কি ঘুরান ঘুরাব।

আমি ভীত গলায় বললাম, এইসব করার কোন দরকার নেই বাবা–তুমি উনাকে বড় মামার কথা বল। বলে দাও বিয়ে-টিয়ের ব্যাপার সব বড়মামা জানেন।

মা বললেন, এইটাই ভাল। লোক জানাজানি করার কোন দরকার নেই। আজেবাজে কথা ছড়াবে।

বাবা হুংকার দিলেন, ছড়াক কথা। আমি কি কাউকে ভয় পাই?

নির্বোধ মানুষরা কাউকে ভয় পায় না। যা মনে আসে করে ফেলে। বাবাও তাই করলেন। স্যারের জিনিসপত্র নিজেই ছুড়ে ছুড়ে রাস্তায় ফেলতে লাগলেন।

চারদিকে লোক জমে গেল। স্যার বললেন, আপনি অকারণে বেশি রকম উত্তেজিত হয়েছেন। আপনি শান্ত হয়ে আমার দুটা কথা শুনুন।

বাবা হুংকার দিলেন, চুপ যথেষ্ট হয়েছে।

স্যার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।

ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। এমন মুখরোচক ঘটনা মফস্বল শহরে সচরাচর ঘটে না। লোকজনদের উৎসাহের সীমা রইল না। সন্ধ্যা বেলায় চলে এল বাবার অতি পেয়ারের লোেকরা। তারা গভীর মুখে বলল, এইসব কি শুনছি। চৌধুরী সাহেব?

বাবা ফ্যাকাশে হাসি হেসে বললেন, কিছু না। কিছু না।

শুনলাম আপনার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে। অশ্লীল প্ৰস্তাব দিয়েছে।

না না। এসব কিছু না। অন্য ব্যাপার।

জারজ সন্তানের কাছ থেকে এরেচে বেশি কি আশা করা যায়? এখন বলুন কি করব?

কিছু করার দরকার নেই। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। আর কি?

আপনি ক্ষমা করলেতো হবে না। আমাদের একটা দায়িত্ব কর্তব্য আছে না?

বাদ দেন। ঘটনা যা ভাবছেন তা না। বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। ভদ্র ভাবেই দিয়েছিল।

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোন দরকার নাই চৌধুরী সাহেব। ঘটনা সবই জানি। আপনি কাটান দেয়ার চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। উচিত শিক্ষা দেয়া হবে।

লোকজন বাড়তেই লাগল। সবাই আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। মা আমাকে নিয়ে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখলেন। অন্তুকে পাঠানো হল পোস্টাপিস থেকে বড় মামাকে টেলিফোন করার জন্যে। তিনি যেন এক্ষুণি চলে আসেন।

রাত দুটার দিকে হাজার হাজার মানুষ গিয়ে স্যারকে ধরে নিয়ে এল। আমি কাঁদছি এবং সমুদ্রের গর্জনের মত মানুষের গর্জন শুনছি। কি হচ্ছে বাইরে? সব কোলাহল ছাপিয়ে স্যারের গলা শুনলাম— আতংকে অস্থির হয়ে তিনি চিৎকার করে ডাকছেন— নবনী! নবনী।

তাকে তখন রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়েছে। একদল মানুষ চেষ্টা করছে ইট দিয়ে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। মা ছুটে গেলেন স্যারকে বাঁচানোর জন্যে। ইরাও ছুটে গেল।

স্যারের মৃত্যু হয় সীমাহীন অপমান ও সীমাহীন যন্ত্রণায়। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নেত্রকোনা হাসপাতালে। সেখানের ডাক্তাররা জবাব দেবার পর তাঁকে পুলিশ প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহে। পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে স্যারকে যে ট্রেনে ময়মনসিংহ নেয়া হচ্ছিল। আমিও সেই ট্রেনেই বড় মামার সঙ্গে ময়মনসিংহ যাচ্ছি। অথচ আমি কিছুই জানতাম না। আমাকে বলা হয়েছে স্যার নেত্রকোনা হাসপাতালে আছেন। মাথায় চোট পেয়েছেন। তবে এখন ভাল হওয়ার পথে। ভয়ের কিছু নেই।

 

সে বছর আমার পরীক্ষা দেয়া হয় নি, কারণ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। সে অসুখ বিচিত্র এবং ভয়াবহ। আমি মাঝে মাঝেই কাউকে চিনতে পারতাম না। পরিচিত কারো সঙ্গে হয়ত কথা বলছি, হঠাৎ এক সময় অস্বস্তি এবং বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি, যার সঙ্গে কথা বলছি তাকে চিনতে পারছি না। ভয়ে শরীর যেন কেমন করতে থাকে। আমি কথা বলা বন্ধ করে দেই, আর তখনি দেখি দু-তিনটা কাক অপরিচিত মানুষটার চারদিকে গম্ভীর ভঙ্গিতে হাঁটছে। এদের মধ্যে একটা কাককে আমি চিনি-বুড়ো কাক। কাকগুলো হাঁটে অবিকল মানুষের মত। যেন এরা কাক না। ছোট ছোট মানুষ যারা কালো রঙের চাদর গায়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে আমি স্যারকেও দেখতাম-। তাকে দেখে মোটেও ভয় লাগত না। বরং ভরসা পাওয়া যেত। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন এমনভাবে যেন তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা হত খুব ঘরোয়া ধরনের। যেমন, তিনি এসে বললেন, নবনী, পেন্সিলটা কোথায় রাখলাম দেখেছ?

আমি বললাম, না তো। কলম আছে। কলমে হবে?

না, হবে না। আমার দরকার পেন্সিল। একটু আগে কাজ করছিলাম। হঠাৎ কোথায় গেল! বাবু নিয়ে যায় নি তো?

নিতে পারে।

ছেলে তো বড় দুষ্ট হয়েছে। ডাক তো দেখি। আজ একটা ধমক দেব।

না না, ধমকাতে পারবে না। ছেলেমানুষ।

অতিরিক্ত আদর দিয়ে তুমি ওকে নষ্ট করছ।

নষ্ট করছি ভাল করছি। আরো নষ্ট করব।

এ কি! রেগে গেলে কেন?

রেগেছি। ভাল করেছি। আরো রাগব…

আমাদের সঙ্গে সব সময় একটা শিশু থাকত। কখনো সে ছেলে, তার নাম বাবু; কখনো-বা মেয়ে, নাম টিনটিন। এদের অবশ্যি আমি কখনো দেখি নি।

আমি কতদিন অসুখে ভুগেছি। আমি নিজেও জানি না। কেউ আমাকে কখনো পরিষ্কার করে কিছু বলে নি। আমি শুধু অস্পষ্টভাবে জানি, আমার এই অসুখ দীর্ঘদিন ছিল। বড় মামা আমাকে চিকিৎসা করান। আমার পেছনে টাকা

বাসা ভাড়া করে থাকতেন। কেউ যেন অসুস্থ অবস্থায় আমাকে বিরক্ত করতে না পারে সে জন্যে ঐ বাসার ঠিকানাও তিনি কাউকে দেন নি। বাবা-মা, ইরা, অন্তু কেউই আমাকে দেখতে যেতে পারত না। এক সময় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। বড় মামা আমাকে ফিরিয়ে দেন। বাবা-মার কাছে।

Page 28 of 35
Prev1...272829...35Next
Previous Post

নন্দিত নরকে – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

নলিনী বাবু B.Sc. – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

নলিনী বাবু B.Sc. - হুমায়ূন আহমেদ

গীতালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In