নোমান হাসি মুখে বলল, কি জিনিসটা সুন্দর না?
আমি বললাম, সুন্দর। খুব সুন্দর।
সস্তায় পেয়ে গেছি। সেগুন কাঠ। ঘুণ ধরবে না। দুশ বছর পরেও কিছু उश नां।।
আমি বললাম, দুশ বছর পর্যন্ত আমাদের কোন ড্রেসিং টেবিল কিনতে হবে। না। এটা দিয়েই চালিয়ে দেব।
সে তাকিয়ে রইল। তার চোখে মুখে অস্বস্তি। আমার রসিকতটা বোধহয় বুঝতে পারছে না। এটা দোষের কিছু না। অধিকাংশ মানুষই রসিকতা বুঝতে পারে না। আমার বাবাও পারেন না। অথচ তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান।
নোমানকেও আমার বুদ্ধিমান মনে হয়। সরল ধরনের বুদ্ধি। এই জাতীয় বুদ্ধির মানুষ রসিকতা করতেও পারে না। রসিকতা বুঝতেও পারে না। এরা খুব কর্মঠ হয়। বিশ্বস্ত হয়। এরা যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করে সেই প্রতিষ্ঠানের জন্যেই অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তবে তাদের কোন উন্নতি হয় না। নিজের অবস্থার উন্নতির জন্যে এদের মাথা ব্যথা থাকে না। এরা অল্পতেই তুষ্ট।
ড্রেসিং টেবিলটা ঘরে আসার পর থেকে তার হাসিমুখ দেখে আমার খুব মজা লাগছে। এর মধ্যে গামছা দিয়ে সে দুবার এটা মুছল। কাছ থেকে, দূর থেকে নানান ভঙ্গিমায় নিজেকে দেখল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব কায়দা করে চুল আঁচড়াল তার চুল আঁচড়ানোই ছিল— দুই হাতে সেই চুল আউলা ঝাউলা করে আবার আঁচড়াল। আশ্চর্য ছেলেমানুষী।
নবনী।
বল।
ড্রেসিং টেবিলের জন্যে একটা ঢাকনি বানানো দরকার। নয়ত ধুলা পড়ে পালিশ নষ্ট হয়ে যাবে।
ড্রেসিং টেবিলে ঢাকনি থাকে না।
কে বলল থাকে না। ড্রেসিং টেবিলে ঢাকনি বেশি দরকার। রাতের বেলা আয়না ঢেকে রাখতে হয়। রাতের বেলা আয়নায় মুখ দেখা খুবই অলক্ষণ। তুমি বোধহয় এসব বিশ্বাস কর না?
না।
পামিস্ট্রি বিশ্বাস কর? হাত দেখা।
না।
অহনা আবার এসব খুব বিশ্বাস করে। কেউ হাত দেখতে জানে বললেই হল সে হাত মেলে দিবে।
ও আচ্ছা।
একবার সে খবর পেয়েছে হ্নীলা বলে একটা জায়গা আছে সেখানে খুব বড় একজন পামিস্ট্র থাকেন। যুগানন্দ আচার্য। স্কুলের সংস্কৃতের টিচার। সে সেখানে যাবেই। সফিক বিরক্ত হয়ে বলল, নোমান তুই ওকে নিয়ে যা। ঝামেলা চুকিয়ে আয়।
তুমি নিয়ে গেলে?
না নিয়ে উপায় আছে? অহনা মুখ দিয়ে যা বলবে তা করে ছাড়বে। সে বিরাট ইতিহাস। জায়গাটা হল টেকনাফের কাছাকাছি। অতি দুৰ্গম। আমি মাইক্ৰবাস নিয়ে আগে চলে গেলাম। অহনা প্লেনে করে গেল কক্সবাজার। সেখান থেকে ওকে নিয়ে মাইক্রবাসে করে রওনা হলাম। রাস্তা গেছে পানিতে ডুবে। রাস্তার দুই ধারে লাল ফ্ল্যাগ পুঁতে রেখেছে। ফ্ল্যাগ দেখে দেখে যাওয়া। এর মধ্যে টায়ার গেল পাংচার হয়ে।
শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল যুগান্দ আচার্যকে?
মজাতো এই খানেই। কেউ এই লোকের নামও শুনে নাই। স্কুলই নেই। স্কুল টিচার কোত্থেকে আসবে?
তোমরা কি করলে ফিরে এলে?
ফিরে আসব কি করে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঐ সব অঞ্চলে সন্ধ্যার পর গাড়ি ঘোড়া চলে না। ডাকাত পড়ে। তারচেয়ে বড় কথা কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে বুনো হাতি নেমেছে, তিনটা মানুষ মেরেছে। আমারতো মাথায় বাড়ি। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। হোটেল নেই রেস্ট হাউস নেই। কিছুই নেই। গেলাম টেকনাফ। সেখানে বনবিভাগের একটা রেষ্ট হাউস পাওয়া গেল। একটাই রুম। আহনাকে সেখানে রেখে আমি মাইক্রবাসের ভেতর শুয়ে আছি। খবর পাওয়া গেছে রাস্তায় হাতি নেমে গেছে। সব বাতি টাতি নিভিয়ে দিতে বলেছে। বাতি দেখলেই না-কি হাতি ছুটে আসে। কত কাণ্ড! চা করতো নবনী।
চা খাই! আর তুমি এক কাজ কর পাউডার টাউডার এইসব দিয়ে ড্রেসিং টেবিলটা সুন্দর করে সাজাও অহনা দেখতে আসবে।
উনি এই ড্রেসিং টেবিল দেখতে আসবেন?
হ্যাঁ। তাকেও বলেছি।
ভাল করেছ।
আমি চা বানাতে গেলাম। নোমান একটা মোড়া নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রইল। আনন্দিত মুখ, সুখী সুখী চেহারা।
আজ তার অফিস আছে। অথচ সারাদিন দিব্যি অফিস বাদ দিয়ে ঘরে বসে আছে। অফিসে তার কাজটা কি আমি জানি না। আমার ক্ষীণ সন্দেহ তার প্রধান কাজ বন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে থাকা। ফুট ফরমাশ খাটা। একদিন জিজ্ঞেসও করেছিলাম–অফিসে তোমার কাজটা কি বলতো?
সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। যেন খুব বোকার মত প্রশ্ন করেছি। তারপর গম্ভীর মুখে বলল, যখন যে কাজ দেয় সেটাই করতে হয়। ধরা বাধা কিছু না। এড ফ্লিম করার জন্যে আর্টিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ তাদের আনা নেয়া–কাজের কি শেষ আছে? প্রয়োজনে লাইটবয়ের কাজও করতে হয়।
সেটা কি?
আর্টিস্টের উপর লাইট ফেলা।
ও আচ্ছা। খুব কঠিন কাজ?
দেখে মনে হবে খুব সহজ কাজ আসলে তা না। কঠিন আছে। টেকনিক্যাল কাজ সবই কঠিন।
তুমি যে কাজটা কর সেটার নাম কি?
তোমার কথাই বুঝতে পারছি না— নাম আবার কি?
অফিসে কত রকম পোস্ট আছে–কেউ ম্যানেজার, কেউ সুপারভাইজার, কেউ ক্যাশিয়ার, হেড ক্লার্ক… তুমি কি?
ও আমার অজ্ঞতায় হো হো করে কিছুক্ষণ হেসে বলল— আমাদের এসব কিছু নেই। তবে আমার বেতন হয় অহনার পি এ এই খাতে।
তুমি অহনার পি এ?
কাগজে কলমে তাই। আসলে অফিসের কাজ করে ফুরসুত পাই না।
আজ অফিসে গেলে না? আমার হল স্বাধীন চাকরির মত— ইচ্ছা হল গেলাম ইচ্ছা হল গেলাম না। আজ ছুটি নিলাম। চল বিকালে তোমাকে নিয়ে বের হব মিরপুরের দিকে যাব।
তুমি না বললে— অহনা আসবেন।
সে এলেও আসবে রাত নটার পরে। তার লেডিস ক্লাবের মিটিং আছে।
অহনার সঙ্গে তার স্বামীর যে সমস্যা ছিল সেটা মিটে গেছে?