বড় খুকী!
জ্বি মামা।
জামাইয়ের জন্যে স্যুটের কাপড় কিনে দেব বলে ঠিক করেছিলাম। ওকে সাথে নিয়েই কেনার ইচ্ছা ছিল। স্যুট কিনে দোকানে দিয়ে দরজির খরচটাও দিয়ে দেয়া। নয়ত খাজনার থেকে বাজনা বড় হয়ে যায়। এখন কি করি বলতো।
সুটের কাপড় লাগবে না মামা। ও সুট পরে না। ছোট চাকরি করে। এই চাকরিতে স্যুট পরলে লোকে হাসবে।
ওর ছোট চাকরির জন্যে মন খারাপ করিস না মা।
এম্নি বললাম। আমার মন খারাপ না। আলহামদুলিল্লাহ শুনে ভাল লাগল। আচ্ছা পরের বার যখন আসব। তখন বানিয়ে দিয়ে যাব।
মামা আপনার শরীর কেমন?
আছে ভালই আছে। মাথা ব্যথাটা হয়। টিউমার হয়েছে কি-না কে জানে। আমাদের এখানে একজন ডাক্তার আছেন ওয়াদুদ সাহেব–বন্ধু মানুষ। তিনি বলছিলেন টিউমারের টেস্ট ফেস্ট করাতে। কাগজে কি সব লিখেও দিয়েছেন।
করাবেন না?
করাব। পরের বার করাব। ও আচ্ছা ভুলে গেছি–ছোট খুকীর চিঠিটা নে। জবাব লিখে রাখিস। বার বার বলে দিয়েছে জবাব নিয়ে যেতে। জবাব ছাড়া গেলে খুব রাগ করবে। আর মদিনাকে কিছু খেতে দে। ওর বোধহয় ক্ষিধে পেয়েছে। এদের কিন্তু পেটের আন্দাজ নেই। যা দিবি তাই খেয়ে পেটের অসুখ বাঁধাবে। হিসেব করে দিস। আমি এখন উঠি রে মা…
মদিনাকে খেতে দিয়ে আমি ইরার চিঠি নিয়ে বসলাম। ইরা লিখেছে–
আপা,
তোমার চিঠি লিখতে এত দেরী হল কেন? তোমার এত কি কাজ? তুমি বিশ্বাস করবে না, আমি নিজে প্রতিদিন একবার পোস্টাপিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি— চিঠি এসেছে কি-না!
এর মধ্যে এমন এক কাণ্ড হল–বাবা গভীর রাতে চেঁচামেচি শুরু করলেন–নবনী এসেছে। নবনী এসেছে। সে কি হৈ চৈ। আমরা দরজা খুললাম। কেউ নেই। আসলে বাবা স্বপ্ন-টপ্ল দেখে এই কাণ্ড করেছেন। বাবার শরীর আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে।। হলে কি হবে চিকিৎসা করাবেন না। এখন কোন ওষুধ খাচ্ছেন না। একজন জ্বীন সাধকের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে ওষুধ নিচ্ছেন। সেই ওষুধ না-কি জুীনারা এনে দিচ্ছে কোহিকাফা নগর থেকে। গাছের কি সব শিকড় বাকড়। মা সেসব হামানদিস্তায় পিষে পিষে দিচ্ছেন। আমি খানিকটা চোখে দেখেছি–বিশ্রণী দুৰ্গন্ধ। খানিকটা মুখে দিলে মুখ আঠা আঠা হয়ে থাকে।
ভাল কথা–মা স্বপ্নে দেখেছেন তোমার ছেলে হয়েছে। ছেলের নামও স্বপ্নে দেখেছেন। ছেলের নাম জুলহাস। আমি মাকে বললাম— ছেলে হওয়া স্বপ্নে দেখেছ ভাল কথা। ছেলের নাম কিভাবে স্বপ্নে দেখলে? আর দেখলেই যখন একটু ভাল নাম দেখতে পারলে না?
অন্তু ভাইয়ারও খবর আছে। সে ফুটবল খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছে।
লোকজন বল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পায়। ভাইয়ার সবই উল্টা সে চোট পেয়েছে মাথায়। তোমার ঘরটা এখন ভাইয়ার দখলে। এত সুন্দর ঘরটা সে যে কি করেছে তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। তার উপর একদিন তার ঘরে ঢুকে দেখি–না থাক এখন বলব না। খুবই মজার ব্যাপার মুখোমুখি বলতে হবে।
আপা তুমি কবে আসছে? আমি দুলাভাইকে তার অফিসের ঠিকানায় খুব করুণ একটা চিঠি লিখেছি। এত করুণ যে চিঠি পড়ার পরপরই অন্তত কিছুদিনের জন্যে দুলাভাই তোমাকে আমাদের এখানে রেখে যাবেন।
আমার যে বিয়ের কথা হচ্ছে তা নিশ্চয়ই এর মধ্যে বড় মামা তোমাকে বলেছেন। ছেলে নিজেই আমাকে দেখতে এসেছে। গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করল–রবীন্দ্রনাথ কবে নবেল পুরস্কার পান বলতে পারেন?
আমার এমন রাগ লাগছিল যে ইচ্ছা করল বলি–রবীন্দ্ৰনাথ কে? নাম শুনিনিতো? এরকম বলতে পারি নি। শুধু বলেছি কবে নবেল পুরস্কার পেয়েছেন জানি না।
আপা তুমি কি জান? আমার মনে হয় এখন আমার একটা সাধারণ জ্ঞানের বই দরকার। নিয়ত কখন কি প্রশ্ন করবে–জবাব দিতে পারব না। বিয়ে আটকে যাবে।
তবে জবাব দিতে না পারলেও ঐ লোক আমাকে পছন্দ করেছে। সেটা আমি ঐ লোকের ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা থেকেই বুঝেছি। বড় কোন সমস্যা না হলে এই শীতে বিয়ে হয়ে যাবে। আপা কিছু ভাল লাগছে না। তুমি আস।
মামা বিকেলে একটা ইলিশ মাছ হাতে নিয়ে এলেন। তাঁর গায়ে জ্বর। বেশ জ্বর। ইফতার কিছু খেতে পারলেন না। আমি বললাম, চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকুন। কাল যাবেন। মামা রাজি হলেন না। রাজি হবেন না জানতাম। তাকে ফেরানো মুশকিল। নিজে যা ভাল মনে করবেন। তাই করবেন। অন্যের কোন
কথাই শুনবেন না।
বড় খুকী!
জ্বি মামা।
ছোট খুকীর বিয়েটা মনে হয় হয়েই যাবে। ওরা মুখে অবশ্যি কিছু বলে নাই। ছোট খুকীকে কি সব প্রশ্ন ট্রশ্ন করেছে উত্তর দিতে পারে নাই। তারপরেও মনে হয় পছন্দ হয়েছে বিয়েটা হয়ে গেলে দায়িত্ব শেষ হয়। একটু দোয়া করিস মা।
দোয়ায় কি কাজ হয় মামা?
অবশ্যই হয়। হবে না কেন?
আপনাকে লেবুর সরবত বানিয়ে দেব?
দে। লেবুর সরবত বলকারক। ঘরে কি লেবু আছে?
আছে।
আমি লেবুর সরবত বানিয়ে এনে দেখি দরজায় হাতুড়ি পেটার শব্দ হচ্ছে। বড়মামা ঘরে ঢোকার মূল দরজায় হাতুড়ি দিয়ে কি যেন করছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি করছেন মামা? ছিটিকিনি লাগাচ্ছি। ডাবল প্ৰটেকশান থাকা দরকার। আগের ছিটকানিটা দুর্বল।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম মামা হাতুড়ি, ছিটিকিনি সব কিনে এনেছেন। একটা স্কু ড্রাইভারও আছে। কি আশ্চর্য মানুষ।
হাতুড়ি টাতুড়ি সব কিনে নিয়ে এসেছেন? হুঁ। কাজ ফেলে রাখলেতো হয় নারে মা। যখনকার কাজ তখন করতে হয়। মামা ছিটিকিনি ফিট করে খাটটা ঠিক করলেন। খাটের পায়ার নিচে কাগজ দিয়ে পাগুলি সমান করলেন। লেবুর সরবত খেলেন। মদিনাকে দশটা টাকা দিয়ে নানান উপদেশ দিলেন। বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে আমার মাথায় ফুঁ দিয়ে বললেন, এবার তাহলে যেতে হয় রে বড় খুকী। একটা চিঠি আন। জামাইকে দু লাইনের চিঠি লিখে যাই।