ছাদে প্রাস্টিকের চেয়ারে অবন্তি বসে আছে। সেও ভিজছে। অবন্তি ঠিক করল সারা রাত যদি বৃষ্টি হয় সে সারা রাতই ছাদের চেয়ারে বসে ভিজবে।
প্রহসনের এক বিচার
অবন্তির মা’র লেখা চিঠি।
হ্যালো সুইটি পাই,
মা, আমি কি তোমাকে গত মাসে চিঠি দিয়েছি? কেন জানি মনে হচ্ছে ভুলে গেছি। তোমার বাবাকে নিয়ে যে ঝামেলায় পড়েছি তাতে সব কিছু ভুলে পাগল হয়ে যাওয়া সম্ভব।
তোমার বাবার শরীর সামান্য সেরেছে। এতেই সে নানান ঝামেলা শুরু করেছে। তার ঝামেলা শুনলে তোমারও পিত্তি জ্বলে যাবে। আমি একজন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছি। আমার পরিকল্পনা দুজনে সমুদ্রের পাড়ে কিছু সময় কাটাব। তারপর ডিনার করব। রোনিও রাতে থেকে যাবে। পরদিন ভোরে আমরা যাব মিসিনিতে ভিলেজ ফেয়ারে।
তোমার বাবা নানান ঝামেলা শুরু করল। তার কথা রোনিও রাতে থাকতে পারবে না। ভাবটা এমন যে, আমি এখনো তোমার বাবার বিবাহিত স্ত্রী।
তোমার বাবার হইচই চিৎকার বাড়তেই থাকল। একপর্যায়ে সে একটা ফুলদানি আমার দিকে ছুড়ে মারল। এনটিক চায়নিজ মিং সময়ের ফুলদানি আমি কিনেছিলাম তিন হাজার ডলার দিয়ে। চোখের সামনে এই জিনিস ভেঙে চুরমার। আমি তোমার বাবাকে বললাম, গেট লস্ট! আর এক মুহূর্ত তুমি আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না।
তোমার বাবা ব্যাগ হাতে গটগট করে বের হয়ে গেল। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোটা সে নষ্ট করে দিয়ে গেল।
যাই হোক, আমার এই বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে তোমাকে বলি। তার একটা কফি শপ আছে। কফি শপের নাম ‘নিন্নি ব্ল্যাক। তার প্রধান শখ হলো ঘোড়ায় চড়া। তার তিনটা ঘোড়া আছে। রোনিওর পাল্লায় পড়ে আমাকেও ঘোড়ায় চড়া শিখতে হচ্ছে। তার গলায় পুরোপুরি ঝুলে পড়ার কথা এখনো ভাবছি না, তবে আমরা একসঙ্গে বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে চাইছে আমি তার সঙ্গে গিয়ে থাকি। দুই বেডরুমের একটা অ্যাপার্টমেন্টে সে থাকে। এটাই সমস্যা। বিশাল ভিলায় থেকে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। রোনিওর সঙ্গে বাস করলে নিশিরাতে ভিলার বারান্দা থেকে সমুদ্র দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হব। সব কিছু তো আর একসঙ্গে হয় না। রোনিওর সঙ্গে আমার কিছু মতপার্থক্যও আছে। যেমন, সে সি ফুড পছন্দ করে না। আমি হচ্ছি সি ফুড লাভার। তার লাল রঙ পছন্দ আর আমার অপছন্দের রঙ হচ্ছে লাল। রোনিওর অ্যাপার্টমেন্টের পর্দার রঙ লাল, কার্পেটের রঙ লাল। আমি তাকে পর্দা ও কার্পেট বদলাতে বলেছি। সে রাজি হচ্ছে না। কী করি বলো তো? একটা বুদ্ধি দাও।
তোমার খবর বলল। তোমাকে আমি টিকিট অনেক আগেই পাঠিয়েছি। ঢাকা থেকে দিল্লি, দিল্লি থেকে স্পেন। তুমি জানিয়েছ তোমার পাসপোর্ট নেই বলে আসতে পারছ না। তোমার দেশে পাসপোর্ট পাওয়াটা কি অতি জটিল বিষয়? প্রয়োজনে পাসপোর্টের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ব্রাইভ দাও। পৃথিবীর সব দেশে, সবসময় সব পরিস্থিতিতে টাকা কথা বলে। তোমার দেশে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ দেখি না।
তোমার বয়স হয়েছে, এই বয়সে তোমার বয়ফ্রেন্ড দরকার। অনেকের সঙ্গে মিশে পছন্দের ছেলে খুঁজে বের করো। তোমার এই অনুসন্ধানে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
তুমি বড় একটা বাড়িতে একা বাস করছ, আমিও তা-ই। এই দিক দিয়ে তোমার সঙ্গে আমার মিল আছে।
আমাকে চিঠি শেষ করতে হচ্ছে। আমি তোমার বাবার গলা শুনতে পাচ্ছি। কতটা নির্লজ্জ দেখো–আবার ফিরে এসেছে। দেখো তার কী অবস্থা করি।
ইতি তোমার মা
আন্ধা পীরের কাছে লিবিয়া থেকে কর্নেল ফারুকের পত্র (এই পত্র ইংরেজিতে লেখা, এখানে বঙ্গানুবাদ পত্রস্থ করা হলো)
পীর সাহেব, আসসালামু আলায়কুম।
আমি আপনার এক পরম ভক্ত কর্নেল ফারুক। একটি বিষয়ে আমি আপনার পরামর্শ এবং অনুমতি চাই। আমি দেশে ফিরতে চাই। আমার নেতৃত্বে অ্যুত্থান সম্পূর্ণ হয় নাই। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আপনার দোয়া ছাড়া তা কোনোক্রমেই সম্ভব না।
দেশে ফেরার ব্যাপারে আমি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা বধিরভাব ধারণ করেছে। হা-না কিছুই বলছে না। এই বিষয়েও আমি আপনার দোয়া কামনা করি।
আমি আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
আপনার পরম ভক্ত
কর্নেল ফারুক
আন্ধা পীরও বাংলাদেশ সরকারের মতো বধিরভাব ধারণ করলেন। হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না।
কর্নেল ফারুক আহ্মা হুজুরের অনুমতি না পেয়েও ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্তের পেছনে শেষরাতে দেখা একটি স্বপ্ন কাজ করছিল। তিনি স্বপ্নে দেখেন একজন বলশালী সৈনিক তাঁকে কাঁধে নিয়ে ঢাকার রাজপথে ঘুরছে। তিনটি ট্যাংক তাদের পেছন থেকে অনুসরণ করছে। প্রতিটি ট্যাংকের ওপর বেশ কিছু অস্ত্রধারী সৈনিক। তারা ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছে ‘কর্নেল ফারুক জিন্দাবাদ’।
স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, ফারুকের সামনে ঘোড়ার গাড়িতে আন্ধা হাফেজ বসে আছেন। তাঁর হাতে নীল রঙের ঘুটির তসবি। তিনি হাসিমুখে তসবি টানছেন। তসবি থেকে আলো বের হচ্ছে।
এমন চমৎকার স্বপ্ন দেখে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকা যায় না। কর্নেল ফারুক সিংগাপুর থেকে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতে মেজর রশীদকে বললেন। যে-কোনো দিন টিকিট কাটলে হবে না। টিকিট কাটতে হবে শুক্রবারে। তার জন্ম শুক্রবার। এই বিশেষ দিনে তিনি অনেক শুভ কর্ম (?) সম্পাদন করেছেন।