কিন্তু তাই বলে রেগান এরকম বদলে যাবে কেন?
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বদলে যাওয়ার বিষয়টি খুবই সাধারণ। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। দুতিনশো বছর আগে কারো যদি এ রকম অবস্থা হত তাহলে সবাই ভাবতে রেগানকে বোধহয় ভূতে পেয়েছে। তখন ওঝা ডেকে আনতো।
ক্রিস অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে বলল, আমি এসব আর শুনতে চাই না, ডাক্তার।
এখনই এতটা ভেঙে পড়বেন না, মিসেস ম্যাকনীল। ওকে আমরা এক্স-রে করে দেখবো। তারপর আমার পরিচিতি একজন নিউরোসার্জন আছেন, তার সংগে যোগাযোগ করিয়ে দেব। দেখবেন সব ঠিক করে ফেলবো।
কখন করবেন এক্স-রে?
এখনই করতে চাই– চদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।
যা ভাল মনে হয় করুন। প্লীজ, ডাক্তার, মেয়েটাকে সুস্থ করে দিন।
ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন ক্রিস সন্ধ্যার দিকে ঘরে ফিরল। এক্স-রে রিপোর্ট পাওয়া যাবে দুদিন পর। লিব্রিয়ামের প্রভাবে রেগান আচ্ছন্নের মত হয়ে পড়েছে। ওকে বিছানায় শুইয়ে ক্রিস এল রান্নাঘরে। শ্যারন বলল, কফি দেবো?
দাও।
মনে হচ্ছে একটা ধকলের দিন গেছে আজ?
হ্যাঁ। কেউ খোজ করেছিল?
তোমার এজেন্ট ফোন করেছিল। ছবি পরিচালনার ব্যাপারে তুমি এখনো কিছু বলছো না দেখে সে খুব চিন্তিত।
ক্রিস গোপনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। কিছুই ভাল লাগছে না ওর।
শ্যারন বলল, মিসেস মেরি জো পেরিন রেগানের খোজ নিতে এসেছিলেন।
একটা বই দিয়ে গেলেন–একটা চিঠিও রেখে গেছেন।
ক্রিস উল্টে পাল্টে দেখল বইটা। বেশ মোটা বই। নামটা ক্রিসকে কৌতুহলী করে তুলল, প্রেত-পূজা ও প্রসঙ্গ কথা। চিঠিতে মেরি জো লিখেছেন।
প্রিয় ক্রিস,
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে হঠাৎ গিয়েছিলাম, সেখানে বইটা পেয়ে নিয়ে এলাম আপনার জন্যে। শয়তানের উপাসনা সম্পর্কে বইটিতে কয়েকটা অধ্যায় আছে। আপনি কিন্তু পুরো বইটাই পড়বেন; হয়ত অন্যান্য অংশও আপনার কাছে আকর্ষণীয় লাগবে। শিগগিরই দেখা হবে।
–মেরি জো
ক্রিস বইটা শ্যারনের দিকে এগিয়ে দিল। বলল, পড়ে শোনাও তো দেখি ব্যাপারটা কি?
রাতে দুঃস্বপ্ন দেখার খুব ইচ্ছে হয়েছে না-কি?
শ্যারন টেবিলের ওপর থেকে বইটা তুলেও দেখল না। চলে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে নিতে ভুলে গেল। আসলে আজ রাতে বইটা পড়ে কাল সকালে ক্রিসকে শোনাবে এটাই ছিল শ্যারনের ইচ্ছা। টেবিলে বইটা পড়ে থাকতে দেখে ক্রিস নিজেই পড়বে বলে ভাবল, কিন্তু না– খুব অবসন্ন বোধ করছে ও। ওপরে গিয়ে রেগানকে দেখে এল, অঘোরে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ টিভি দেখল চুপচাপ, তারপর ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে কিন্তু প্রেত-উপাসনা সংক্রান্ত বইটা আর দেখা গেল না। কখন সেটা অদৃশ্য হয়েছে কেউ লক্ষ্য করেনি।
২.৩
এক্স-রে প্লেটগুলো সারি করে সাজানো। ডাঃ ক্লীন ও নিওরোলজিস্ট দুজনেই গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছেন প্লেটগুলো। তাদের লক্ষ্য এমন কিছু দেখা যায় কি না যার দ্বারা মনে হতে পারে পিনিয়াল গ্ল্যাণ্ড নড়ে গেছে। তেমন কিছু অবশ্য দেখা গেল না। কোথাও এমন কোন ইংগিত নেই যা থেকে বোঝা যেতে পারে রেগানের মস্তিষ্কে কোন রকম চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
না, কোন কিছু নেই। সব স্বাভাবিক। নিওরোলজিস্ট এক সময় চশমা খুলে পকেটে রেখে শান্ত স্বরে বললেন, ডাঃ ক্লীন, আমি তো কিছুই দেখলাম না।
গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লেন ডাঃ ক্লীন।
কিছু একটা তো দেখতে পাওয়া উচিত।
আরেক দফা এক্স রে নেয়ার কি কোন দরকার আছে?
উহুঁ। তার চেয়ে বরং একটা এল পি করা যাক।
হ্যাঁ, সেটা করা যেতে পারে।
নিউরোলজিস্ট হঠাৎ বললেন, মেয়েটাকে আমি একবার দেখতে চাই।
নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। আজ কি আপনার সময় আছে?
না আজ একটু …
নিউরোলজিস্টের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেলিফোন বেজে উঠল।
ডাঃ ক্লীন?
হ্যাঁ, কি ব্যাপার?
মিসেস ম্যাকনীল আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। খুব নাকি জরুরী।
কোন লাইনে আছেন?
বারো নম্বরে।
ঠিক আছে।
ডাঃ ক্লীন বোতাম টিপলেন, মিসেস ম্যাকনীল, আমি ক্লীন বলছি। কি ব্যাপার?
ডাঃ, আপনি কি এই মুহূর্তে একবার আসতে পারেন? ক্রিসের কণ্ঠস্বর খুব উত্তেজিত শোনাচ্ছে। গলার স্বর কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে।
কি হয়েছে?
হায় ঈশ্বর– আপনি এখনই চলে আসুন। রেগান যেন কেমন করছে–
রেগান?
হ্যাঁ, আমি বলতে পারছি না। আপনাকে আসতে হবে। এখনই আসতে হবে। প্লীজ, ডাক্তার, প্লীজ।
ডাঃ ক্লীন ও নিউরোলজিস্ট দুজনেই চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হলেন। শ্যারন দরজা খুলে দিল। রেগানের ঘর থেকে তখন এক ধরনের বীভৎস আওয়াজ আসছে। অনেকটা যন্ত্রণাকাতর পশুর আর্তনাদের মতো। শ্যারনের মুখ কাগজের মত সাদা। সে ঠিকমত কথাও বলতে পারছে না।
আমি … আমি … শ্যারন স্পেনসার। ক্রিস ওপরে আছে। আপনারা আসুন আমার সঙ্গে।
রেগানের ঘরের দরজার কাছে আসতেই ক্রিস বেরিয়ে এল। আতংকগ্রস্ত মানুষের চেহারা। চোখে-মুখে দিশেহারা ভাব।
ডাঃ ক্লীন, আসুন–নিজের চোখে দেখুন। বলতে বলতে ক্রিস কান্নায় ভেঙে পড়ল।
ডাঃ ক্লীন ঘরে ঢুকে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন একটা ব্যাপার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন।
রেগান তার বিছানা থেকে ওপরে উঠে যাচ্ছে, আবার নেমে আসছে। একবার-দুবার নয়, বার বার। কেউ যেন ওকে দুহাতে সজোরে ধরে ওপরে তুলছে, আবার ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে নিচে। আতরে কাকুতি-মিনতি করছে রেগান, ও আমাকে মেরে ফেলবে। ওকে থামাও, ওকে থামাও। মা, প্লীজ, ওকে থামাও।