কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার আছে নুরুজ্জামান সাহেব।
কষ্ট সহ্য করার দরকার কি? মারুফ সাহেবের চরিত্রে অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। সেই সব ভুল-ত্রুটি আপনি যদি ভালবাসা দিয়ে ঠিক না করতে পারেন তাহলে কিসের আপনার ভালবাসা?
তিথি বিস্মিত গলায় বলল, আপনি এত সুন্দর করে কথা বলা কোথায় শিখলেন?
নুরুজ্জামান বলল, আমি আপনাদের কাউকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি। হয়ত অন্যায় করেছি, তবু করলাম।
তিথি বিস্মিত হয়ে বলল, কি করেছেন?
আমি মারুফ সাহেবকে তার বাসা থেকে নিয়ে এসেছি। উনি নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাকে ডেকে নিয়ে আসি। আপনি যেমন কাঁদছেন, উনিও কাঁদছেন। বিশ্বাস না হলে নিচে এসে দেখুন। আসবেন?
অনেকক্ষণ তিথি চুপ করে রইল। একসময় নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, যান তাঁকে ডেকে নিয়ে আসুন।
নুরুজ্জামানের ট্রেন রাত দুটায়। এখনো কিছু সময় আছে। সে যাবার আগে ইর মীরাকে পাতার বাঁশি শুনাচ্ছে। শুধু ইরা মীরা না, জাফর সাহেব এবং শায়লাও খুব আগ্রহ নিয়ে বাঁশি শুনতে এসেছেন।
তিথি কথা বলছে মারুফের সঙ্গে। থাকুক, তারা কিছুক্ষণ একা থাকুক।
তিথিদের ঘরের বাতি জ্বলছে। মারুফ কোনই কথা বলছে না। সে বসে আছে মাথা নিচু করে।
এক সময় মারুফ বলল, বিশ্রী শব্দ কোত্থেকে আসছে?
তিথি বলল, বাঁশির শব্দ। মনে হয় নুরুজ্জামান সাহেব পাতার বাঁশি বাজাচ্ছেন।
এ তো ভয়াবহ জিনিস!
তিথি হেসে ফেললো। তার হাসি আর থামছে না। মারুফও খুব হাসছে।
নুরুজ্জামান রবীন্দ্র সংগীতের সুর তোলার চেষ্টা করছে। পাতাগুলি ভাল না, সুর আসছে না–নুরুজ্জামান বাজাতে চেষ্টা করছে —
ভালবেসে যদি সুখ নাহি
তবে কেন মিছে এ ভালবাসা।
পাতার বাঁশিতে সুর না ধরলেও যাদের জন্যে এই বাণী তারা হয়ত ঠিকই বুঝেছে কারণ এক সময় তিথি কোমল গলায় বলল, তুমি কাছে আস তো, তোমার মাথার চুল আঁচড়ে দেই।