মারুফের কোন যুক্তিই তার কাছে গ্রহণ যোগ্য মনে হয়নি। তিথির মনে হয়েছে মারুফ নানান সমস্যায় বিব্রত। সমস্যাগুলি কি তাও পরিস্কার করে বলছে না। বললে সমস্যার সমাধান না দিতে পারলেও মানসিক ভরসা সে দিতে পারত। মারুফ বোধ হয় তা চায় না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজের সমস্যা নিজের মধ্যেই রাখতে চায়। অন্যকে সমস্যায় জড়াতে চায় না। মারুফ কি তাদের একজন? তিথি এখনো পুরোপুরি জানে না।
সেদিন মারুফের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে বেশ কষ্ট পেয়েছে। নিজের জন্যে কষ্ট না মারুফের জন্যে কষ্ট। মারুফকে মনে হচ্ছে মহাচিন্তিত। মুখ টুখ শুকিয়ে কি হয়েছে। চোখের নিচে কালি। তিথি বলল, কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
আমার পেটে গ্যাস হচ্ছে।
মনে হচ্ছে তুমি খুব চিন্তিত।
পেটে গ্যাস হলে চিন্তিত হব না? পেটের গ্যাস থেকে কত কি যে হতে পারে তা তুমি জান?
এ ছাড়া অন্য কোন সমস্যা নেই।
আছে সামান্য সমসয়। সেই সমস্যার সমাধান তুমি করতে পারবে না।
সমাধান না করতে পারি সমস্যা শুনতে তো বাধা নেই।
মিনিষ্ট্রি অব এড়ুকেশন ঘাপলা করছে। ভয়ে ভয়ে আছি হয়ত দেখা যাবে শেষ মুহুর্তে একটা ফ্যাকড় তুলবে। নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিল না। প্লেনে উঠতে পারলাম না।
এরকম সম্ভাবনা কি আছে?
না নেই। তবে এদেশে সবই সম্ভব। এরকমও হয়েছে যে স্কলারশীপ পেয়েছে একজন, চলে গেছে অন্যজন। এর নাম হল বঙ্গদেশ–সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ।
তিথি বলল, এ রকম সম্ভাবনা থাকলে আমি বাবাকে বলি। বড় মামাকে বলি। তারা একটু খোঁজ খবর করুক। বড় মামা অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজনদের চেনেন।
মারুফ বিরক্ত স্বরে বলল, অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকে আমিও চিনি। বাংলাদেশ খুব ছোট্ট জায়গা। এই জায়গায় সবাই সবাইকে চেনে। খোদ যে এড়ুকেশন মিনিষ্টার তাকে আমি নিজে চিনি না কিন্তু আমার বাবা চেনেন। তিনি আমার বাবার ছাত্র ছিলেন। আমি যতদূর জানি তার পড়াশোনার মূল খরচ আমার বাবা চালিয়েছেন।
তাহলে তোমার সমস্যা কি?
আছে সমস্যা আছে। আমি পুরানো প্রসঙ্গ টেনে সুবিধা কেন নেব? ধর কোন কারণে যদি মিনিষ্ট্রি অব এড়ুকেশন আমার স্কলারশীপ বাতিলও করে দেয় আমিতো তা নিয়ে মন্ত্রীকে বলতে যাব না। নিজের জন্যেতো কখনোই না। অন্যের জন্যে যাওয়া যায়, নিজের জন্যে যাওয়া যায় না।
তিথি বলল, তুমি তাহলে আমাদের নুরুজ্জামান সাহেবের একটা কাজ যদি পার করে দিও। বেচারা ঢাকায় এসেছেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্যে। প্রথম প্রথম বাবাকে অনুরোধ করেছে। এখন আর করে না। বুঝে ফেলেছে বাবাকে বলে কিছু হবে না।
ঐ ব্যাটা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কি করবে?
মেয়েদের একটা স্কুল দেবে।
এইসব ফালতু ব্যাপার নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে বলবে নাতো। আমার হয়েছে–মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা।
তবু তোমার সামান্য পরিশ্রমে যদি অন্য একজনের উপকার হয়।
দেখি।
দেখ আর না দেখ। মরার মত বিছানায় শুয়ে থাকবে না। উঠে বসতো। আজ আবার দাড়ি কামাওনি ব্যাপার কি?
ব্রণ।
তুমি এক কাজ কর দাড়ি রেখে ফেল। দাড়িতে তোমাকে খারাপ দেখায় না। হি হি হি।
হাসবে না তিথি। কারোর হাসিই আমার এখন সহ্য হয় না।
আচ্ছা যওি হাসব না। এসো দুজনে মিলে কাদি।
মারুফ হাসল। তিথি বলল, আমার পাসপোর্ট হয়ে গেছে। বাবা ২৪ ঘণ্টায় পাসপোর্ট বের করেছেন, তিন হাজার টাকা ঘুস দিয়ে। চিন্তা কর–বাবার মত সৎ মানুষ ঘুস দিচ্ছে।
মারুফ হাই তুলতে তুলতে বলল, সৎ মানুষরাই বেশি ঘুস দেয়। ঘুস ব্যাপারটা টিকে আছে সৎ মানুষদের কল্যাণে।
তুমি কি যে সিনিকেল কথা বল।
গভীর দুঃখ ও বেদনা থেকে বলি বুঝলে? এই যে তুমি পাসপোর্ট টাসপোর্ট করে বসে আছ–তোমার যাওয়াতো দূরের কথা দেখা যাবে আমি নিজেই যেতে পারছি না।
না যেতে পারলে নেই। বিদেশ এমন কোন বড় ব্যাপার না। তুমি এমন গ্রুমি ভাব ধরে বসে থাকবে না। বল আমি কি করলে তোমার মনটা ভাল হবে।
চুমু খেয়ে দেখতে পার।
তিথি লজ্জিত গলায় বলল, ছিঃ নির্বিকার ভাবে কি করে এরকম কথা বল।
মারুফ বলল, বাইরে কাউকে বলি না। আমি আমার স্ত্রীকে বলি। শুনুন মাই ডিয়ারেস্ট–আমার মন ভাল করার একটা অষুধই আছে। এই অষুধ ব্যবহার করুন। খুব বেশি লজ্জা লাগলে দরজা ভিজিয়ে দিন।
তিথি দরজা ভিজিয়ে দিল।
মারুফ হাসি মুখে বলল, শোন তিথি তোমার এই act of kindness এর কারণে তোমার হলুদ কোটের কাজটা করে দেব। মন্ত্রীকে বলব তার কথা।
তিথি কোমল গলায় বলল, থ্যাংক য়্যু।
শায়লার বুকে ধ্বক করে একটা ধাক্কা লাগল
শায়লার বুকে ধ্বক করে একটা ধাক্কা লাগল।
কি সুন্দর লাগছে তিথিকে। তার মেয়েটা এত সুন্দর? আশ্চর্য এত সুন্দর তার এই মেয়ে? এতদিন কেন তা চোখে পড়ল না।
তিথি পা তুলে মাথা নিচু করে খাটে বসে আছে। আজ তার গায়ে হলুদ তাকে সাজানো হয়েছে ফুলের মালায়। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বিছানায় একটা লালপদ্ম ফুটে আছে। শায়লার চোখে পানি এসে গেল। ঘর ভর্তি মানুষ। তিনি তাদের অগ্রাহ্য করেই শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন। তিথি চোখ তুলে তাকাল। শায়লা বললেন, তোমরা সবাই এই ঘর থেকে যাওতো। সবাই যাও। আমি আমার মেয়ের সঙ্গে একটু কথা বলব।
সবাই চলে গেল। শায়লা বললেন, মা তুই খানিকক্ষণ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতো।
তিথি বলল, কেন মা?