কেন বলুনতো?
লক্ষ্য করেছ কি-না বল।
রোজইতো দেখি।
সেই দেখা না– ভাল করে দেখেছ কি-না। ওর শরীর এখন কেমন ভার ভারন্ত মনে হয় না?
আমি তাকিয়ে আছি পান্নাভাবী গলা আরো নামিয়ে প্রায় ফিস ফিস করে বললেন –মনে হয় কোন একটা কান্ড হারামজাদী বাঁধিয়েছে– কাকে সন্দেহ করছি বলব? শুনে আকাশ থেকে পড়বেনা– সন্দেহ না, আমি জানি — মূল নায়ক আমার কর্তা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক নাজমুল হক পি এইচ ডি –গবেষক — পন্ডিত –যিনি মেয়েদের দিকে চোখ ভুলেও তাকান না।
কি যে বলেন ভাবী।
না জেনে কিছু বলি না –জেনে শুনে বলি। ঐদিন কি হয়েছে শোন তোমার নাজমুল ভাই বই পড়ছে –আমি রাণীকে বললাম –যাও খালুকে চা দিয়ে আস। সে চায়ের কাপ নিয়ে যাচ্ছে আমি আড়াল থেকে দেখছি। কি দেখলাম জান রাণী চায়ের কাপ নামিয়ে রাখল, তারপর চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাসি। স্ত্রী রাধিকার লীলা।
ভাবী এসব আপনার কল্পনা।
কল্পনা না বাস্তব পঞ্চাশটা টাকা খরচ করলেই ধরা পড়ে যাবে। প্রেগনেন্সি টেস্টে পঞ্চাশ টাকা লাগে। আমি চুপ করে আছি, কিছু বলছি না। কয়েকটা দিন যাক তারপর তোমার গবেষক ভাই বুঝবে রাত দুপুরে মেয়েমানুষ নিয়ে গবেষণা করলে কি হয়। আমি কি করব শুনতে চাও?
জি না আমি শুনতে চাচ্ছি না।
শোন। শোন –আমি মারামারি কাটাকাটির মধ্যে নেই ঐসব আমি করব না। আমি কাজী ডেকে এনে বিয়ে পড়িয়ে দেব। বিয়ে হয়ে গেলে কাজের মেয়ের সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। কাজের মেয়েতো বেশিদিন থাকে না — আজ এই বাড়ি –কাল ঐ বাড়ি … পরশু গার্মেন্টস বিয়ে হয়ে গেলে স্বামীর সংসারে থাকবে।
পান্নাভাবী চা খাচ্ছেন না। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। আমি হতভম্ব হয়ে শুনছি।
রাত্রি উঠি ফুলের দোকান বোধহয় খুলেছে।
পান্নাভাবী ঠাণ্ডা চা, এক চুমুকে শেষ করে উঠে পরলেন। ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন ফুলের খোঁজে। রান্নাঘর থেকে বের হতেই তার দেখা হল বাবলুর সঙ্গে –তিনি আন্তরিক ভঙ্গিতে বললেন, কি রে বাবলু ভাল আছিস? তিনি বাবলুকে তুই করে বলেন। বাবলুর সঙ্গে তার আলাদা খাতির। বাবলু তার উত্তরে কি বলল বোঝা গেলো না।
কাল রাতে এমন হৈ চৈ শুরু করলি কেন?
আমি যা ভেবেছিলাম তাই। পান্নাভাবী কাল রাতের হৈ চৈ পুরাটাই শুনেছেন ভালমতই শুনেছেন।
বাবলু কাল রাত হয়েছিল কি?
কিছুই না। নাথিং।
বাবলু বলতো ফুলের দোকান খুলেছে কি না?
ফুলের দোকান দিয়ে কি করবে?
তোর দুলাভাইয়ের জন্মদিন –ফুল কিনব। তোর কি এখন কোন কাজ আছে?
হাতমুখ ধোব। নাস্তা খাব।
হাতমুখ পরে ধুলেও হবে। তুই আয়তো আমার সঙ্গে ফুল কিনব। ফুল পছন্দ করে দিবি।
ফুলের আবার পছন্দ অপছন্দ কি? ফুল দেখতে সব এক রকম।
তুই চলতো।
মুখ ধুইনিতো।
কুলি করে নে। কুলি করলেই হবে –তুই আজ আমার সঙ্গে নাশতা খাবি।
ওকে ভাবী। ওকে।
আমি মনে মনে হাসলাম। পান্নাভাবী আজ আর বাবলুকে ছাড়বেন না। জেঁকের মত পেছনে লেগে থাকবেন। কাল রাতে কি হয়েছিল তা খুঁটে খুঁটে বের করবেন। আমাকে মিথ্যা কথাটা বলার দরকার ছিল কি? কেন বললেন –কাল রাতে হিপনল খেয়ে মরার মত ঘুমিয়েছেন।
.
বাবাকে নাশতা দিতে গেলাম। বাবা বললেন, বাবলু খেয়েছে?
ও পান্না ভাবীর সঙ্গে ফুল কিনতে গেছে।
বাবলুর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।
কথা থাকলে কথা বলবে। ও আসুক তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলি।
বাবা নাশতা খেলেন না –খালি পেটে চায়ে চুমুক দিলেন –আমি চাইনা ও এ বাড়িতে বাস করুক।
এ বাড়িতে বাস না করলে কোথায় বাস করবে?
ওর বন্ধু বান্ধব আছে। ওরকি থাকার জায়গার অভাব আছে?
বাবা তুমি রাগের কথা বলছ।
রাগের কথা বলাটাকি অন্যায় হচ্ছে?
হ্যাঁ অন্যায় হচ্ছে।
আমাকে তুই কি করতে বলিস?
চুপ করে থাকতে বলি।
চুপ করেইতো আছি।
আরো চুপ করে যাও।
বাবলুর কি হবে?
ওকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বাবা। খুব মন্দ হবার কোন ক্ষমতা ওর নেই। ওর দৌড় মাঝে মাঝে নেশা ভাং করে হৈ চৈ করা পর্যন্ত।
নেশা ভাং করাটা তোর কাছে তেমন গুরুত্ব পূর্ণ কিছু মনে হচ্ছে না? বাইশ তেইশ বছরের একটা ছেলে নেশা করে বাসায় আসবে?
ওর একটাই সমস্যা বাবা। ও বোকা। ও যা করছে বোকা বলেই করছে। বুদ্ধি থাকলে ও নেশা ঠিকই করতো –কিন্তু নেশা করে বাসায় আসত না। বোকা হবার। দায় দায়িত্ব তার না। কাজেই ওকে সামলাতে হবে অন্য ভাবে।
কি ভাবে?
চিন্তা করছি। তুমি কিছু ভেবো না। শুধু চা খাচ্ছ কেন বাবা –নাশতা খাও।
কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।
বাবলুকে নিয়ে আমার তেমন কোন চিন্তা নেই বাবা। আমার চিন্তা তোমাকে নিয়ে।
আমাকে নিয়ে কিসের চিন্তা?
অবসর সময়ে মানুষকে কাজে কর্মে ব্যস্ত হতে হয়। ব্যস্ত না হলে নানান সমস্যা– তুমি কিছুই করছ না। দিন রাত বসে থাক। ব্যস্ততা বাড়াও বাবা।
কি করব?
সেটা তুমি ভেবে বের কর। আমরা সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে কেমন হয় বাবা? খামার বাড়ির মত কর। হাঁস মুরগী, গরু বাছুর এইসব থাকবে। শাক শজি ফলাবে। আমিও তোমার সঙ্গে থাকব। বাবলু থাকবে। ব্যাক টু দ্যা ভিলেজ।
এইসব বলা খুব সহজ মা। করা কঠিণ।
যে টা সহজে বলা যায় সেটা সহজে করাও যায়। কেউ করতে চায় না, কারণ মনে করে করা যাবে না।
তুই যা ভাবিস তা করতে পারিস?
হ্যাঁ পারি। কাল রাত থেকে ভাবছি –আজ দুপুরে আমি টুকুনকে নিয়ে আসব। টুকুন আমার সঙ্গে কয়েকদিন থাকবে।