আপনি কি আমাকে কিনে ফেলতে চান?
না, তা চাই না। তবে আমি তোমার ফেভার চাই। তোমার ভোর ছাড়া আমার গতি নেই। তুমি আমাকে বিয়ে করার জন্যে একটা মেয়ে জোগাড় করে দেবে। এই পবিত্র কাজটি যে আর কেউ করে দেবে সেই উপায় নেই, কারণ–আমার আর কেউ নেই।
আচ্ছা সে ব্যবস্থা হবে। আলম ভাই, ভাত কি এখনই দেব না আরো পরে?
খাবার এখন দিলে তো খেয়েই চলে যেতে হবে। পরে খাওয়াই ভাল। তবে এই ফাঁকে কফি খেতে পারি।
কফি নেই।
আমি নিয়ে এসেছি। ইনসটেন্ট কফি। এই প্যাকেটে কফি আছে। আর এই প্যাকেটে একটা শাড়ি আছে। তোমার জনে সামান্য উপহার। আমাকে যদি তোমার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে দয়া করে নতুন শাড়িটা পর। তোমার যে শাড়িটা পরে আছে সেটা খুবই সুন্দর। তবে শাড়ির ভেঁড়া অংশটা ঢেকে রাখার জন্যে যে পরিশ্রম করছ সেটা চোখে লাগছে।
নায়লা অস্বস্তি নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে গেল। কি অদ্ভুত মানুষ! ছেঁড়া শাড়ির কথা এই ভাবে কেউ বলে? না বলা উচিত? সব কিছুরই শোভন-অশোভন বলে একটা সীমা আছে। চট করে এই সীমা অতিক্রম করা কি উচিত? নায়লার খুব জ্জাও লাগছে। ভদ্রলোক দামী একটা শাড়ি উপহার নিয়ে এসেছেন ভাল কথা–তাই বলে তাঁর এমন কোন অধিকার জম্মেনি যে তিনি বিপু করা শাড়ির প্রসঙ্গ তুলেন। নতুন শাড়ি এখন পরতে ইচ্ছা করছে না। না পরলেও ভাল দেখায় না। কফি বানাতে হবে। কফি কি করে বানায় সে জানে না। তাদের বাড়িতে কফির চল ছিল না। কৌটার গায়ে কি লেখা আছে? এক কাপে কতটা করে দিতে হয়? এক চামচ?
আলম জুতা-মোজা খুলে ঘরোয়া হয়ে বসেছে। বসার ঘরে বেতের চেয়ারের সঙ্গে একটা খাট পাতা। আলম বসেছে খাটে। ঠিক বসা নয়। আধশোয়া হয়ে বসা। তার সামনেই জামান বেতের চেয়ারে বসে আছে। জামানের মাথা ধরেছ। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় হঠাৎ মাথাটা ধরে উঠল। ঘরে মাথাধরার কোন ট্যাবলেট খুব সম্ভব নেই। ট্যাবলেটের জন্যে তাকেই নিচে নামতে হবে। এখন আর তা সম্ভব না।
জামান!
হুঁ।
তুই এমন চোখ-মুখ শুকনো করে বসে আছিস কেন? ইজ এনিথিং রং?
না। মাথা ধরেছে।
শোবার ঘরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে খানিকক্ষণ শুয়ে থাক। আমার ক্রমাগত কথা শুনে মাখী ধরেনি তো? আসার পর থেকে আমি তো ক্রমাগতই কথা বলে যাচ্ছি।
জামান ক্লান্ত গলায় বলল, আমার শরীরটা বোধহয় ভাল না। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে বুকে হাঁপ ধরে। মাথাধরা তো লেগেই আছে। সামান্য পরিশ্রমেই কাহিল।
তুই কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাক। রাতের পাঁচ ঘণ্টা ঘুমে যত উপকার হয়, অন্য সময়ের দশ মিনিটের বিশ্রামেও সমান উপকার। তুই যা তো।
জামান সত্যি সত্যি উঠে গেল।
নায়লা কফি বানিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে আলম একা একা খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। নায়লা বলল, ও কোথায়?
আলম হাসতে হাসতে বলল, খুব সম্ভবত ঘুমুচ্ছে। আমি ওকে ঘুমুতে পাঠিয়ে দিয়েছি। বলেছে, মাথা ধরেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব টায়ার্ড। আচ্ছা, ওর কি কোন অসুখ-বিসুখ আছে?
কেন বলুন তো?
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দেখি হা হা করে শ্বাস নিচ্ছে। হার্টের কোন সমস্যা থাকতে পারে বলে আমার ধারণা। যদি সমস্যা থাকে তাহলে তো সিঁড়ি ভেঙে এত দূর উঠা ঠিক না। লিফট থাকতে সিড়ি বেয়ে উঠার ব্যাপারটা আমি বুঝিনি।
আপনার না বোঝাই ভাল। নিন, কফি নিন। আমি কফি কখনো বানাইনি। কাজেই ঠিকমত হয়েছে কি না বুঝতে পারছি না। হয়ত তিতা হয়ে গেছে।
কফি তিতা হতে হয়। আমি কফি খাই গন্ধের জন্যে, স্বাদের জন্যে না। ভাবী, তুমি বোস।
নায়লা বসল। সে শাড়ি বদলেছে। নতুনটা পরেছে, কিন্তু তার ধারণা তাকে আগের শাড়িতেই অনেক বেশি সুন্দর লাগছিল।
নায়লা ভাবী!
জি।
তুমি কি রাগ করেছ আমার উপর?
রাগ করার মতো আপনি কি কিছু করেছেন?
হ্যাঁ, করেছি। আমি ছেড়া শাড়ির কথা বলেছি। এটা অভদ্রতা, অন্যায় এবং চূড়ান্ত রকম অশোভন একটা কাজ।
অশোভন যদি জানেন তাহলে কেন করলেন?
জানি না কেন করেছি। আর কোনদিন করব না। শেনি নায়লা ভাবী, এই শাড়িটায় তোমাকে মোটেই মানাচ্ছে না।
আমি জানি। বদলে কি ভেঁড়াটা পরে আসব?
প্লীজ।
নায়লা উঠে চলে গেল। আলম লক্ষ্য করলো–নায়লা বের হল অতিরিক্ত ব্যস্ততার সঙ্গে। যেন কোন রকমে পালিয়ে যেতে পারলে সে বাঁচে।
শোবার ঘরে কুণ্ডলী পাকিয়ে জামান ঘুমুচ্ছে। জ্বর আসছে না-কি? নায়লা খুব সাবধানে কপালে হাত ছুঁয়াল। না, জ্বর নেই, তবে গা একটু বোধহয় গরম। নায়লা স্বামীর পাশে খানিকক্ষণ বসল। ওকে একজন ডাক্তার দেখাতে হবে। বেচারা সিঁড়ি দিয়ে একেবারেই ওঠানামা করতে পারে না। বড় কোন অসুখ বাধায়নি তো। সংসারের যে হাল–বড় কোন অসুখ হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ফিরুর মা বাবুকে কোলে নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকল। বাবু ঘুমুচ্ছে। নায়লা সাবধানে ছেলেকে বাবার পাশে শুইয়ে দিলো। দুজনই আরাম করে ঘুমুচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে এই দুজকে! এই দৃশ্য বোধহয় অনন্তকাল ধরে দেখা যায়।
ফিরুর মা।
জি।
খাবার-দাবারগুলি সব গরম করতে থাকো।
চইদ্দবার তরকারি গরম করলে তরকারির স্বাদ নষ্ট হয়গো আম্মা।
তোমাকে যা করতে বলছি, কর। মুখে মুখে তর্ক করবে না।
পরনের শাড়িটা কি নয়া আম্মা?
হুঁ।
ব্যাটাটা যে বইয়া আছে হে আনছে?
এত কথা কেন বলছ?
ভাব-ভালবাসার দুই-একটা কথা হুনলেই ওমন গোসা হন ক্যান?
গোসা হই না। তুমি যাও।
খাবারের আয়োজন বেশ ভাল। চিকন চালের ভাত, মাছের ভর্তা, কুমড়ো ফুলের বড়া, ছোট মাছের চচ্চড়ি, কইমাছ ভাজা, একটা শুটকির আইটেম, দু পদের ডাল।