নায়লা সাড়ে সাতশ টাকা দিয়ে সিল্কের একটা পাঞ্জাবী কিনল। এক সঙ্গে এতগুলি টাকা চলে গেল কিন্তু তার তেমন খারাপ লাগল না। বরং পাঞ্জাবীটা কিনে ভাল লাগল। মনে হল আলমের ঋণ সে খানিকটা শোধ করেছে।
জামান শুনলে রাগ করবে কি? না রাগ করবে না। নায়লার ধারণা জামান খুশিই হবে। বেচারার বন্ধু বান্ধব একেবারেই নেই। একটি মাত্র বন্ধু–তাকে সে খুব পছন্দ করে।
আলম দরজা খুলে অবাক হয়ে বলল, আরে তুমি। বিগ সারপ্রাইজ। আমি তোমাদের এখানেই যাচ্ছিলাম।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি। এই দেখ জামা কাপড় পরে তৈরী হয়ে আছি। সঙ্গে পেষ্ট্রির প্যাকেট। তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে পেস্ট্রি নিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি কি রাগ করেছি যে রাগ ভাঙ্গাবেন?
অবশ্যই রাগ করেছ। কেন করেছ সেটাই বুঝতে পারছি না। ঐ দিন তোমার ছেলের জম্মদিনে গিয়ে লক্ষ করলাম তুমি ভীষণ রেগে আছ। কাজেই তোমাকে না ঘটিয়ে ফষ্টি নষ্টি করলাম অরুনা মেয়েটার সঙ্গে।
অরুনাকে আপনার খুব পছন্দ হয়েছে তাই না?
খুব না। তবে অপছন্দ হয় নি।
অরুনাকে বিয়ে করবেন?
ও রাজি থাকলে আমার আপত্তি নেই।
অরুনা খুব রাজি হবে।
আলম বলল, এখন বল, তুমি ঠিক সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় কোথেকে উপস্থিত হলে? নায়লা বলল, আপনার এখানে কি সন্ধ্যাবেলো আসা নিষেধ?
না নিষেধ না। তুমি এসেছ আমি ভয়ংকর খুশি হয়েছি। আমরা এক ঘণ্টা ম্যারাথন গল্প করব।
পাগল হয়েছেন? আমি এক্ষুণী বিদায় হব। আপনার জন্যে সামান্য উপহার এনেছি। উপহারটা দিয়েই বিদেয় হব।
আমার জন্যে উপহার?
হুঁ। আমি আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবী এনেছি।
আশ্চর্য। এত প্রথম কেউ আমাকে উপহার দিল। বিশ্বাস কর নায়লা। আমি বানিয়ে বলছি না, বা মিথ্যেও বলছি না। আমি কারো কাছ থেকে কোন উপহার পাইনি।
নায়লা বলল, আমি উঠি?
অসম্ভব তোমাকে উঠতে দেয়া হবে না। তুমি চুপচাপ বসো। আমি পাঞ্জাবীটা পরে আসি। তারপর পাঞ্জাবী পরে আমরা দুজন লাউঞ্জ খাব–চা খাব। গল্প করব।
না না আমি এক্ষুণী যাব। এক্ষুণী।
আলম গম্ভীর মুখে বলল, বেশ যাও।
আপনি রাগ করবেন না। আমাকে এক্ষুণী যেতে হবে।
আমি রাগ করছি না। তোমার এক্ষুণী যেতে হলে তুমি যাবে।
আপনি রাগ করছেন।
আমি তাহলে যাচ্ছি।
আচ্ছা।
ঘরের বাইরে এসেই নায়লার মনে হল সে এরকম ছেলেমানুষী কেন করল। ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে আসার মত কি কারণ ঘটেছে? মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। সেতো কিছুক্ষণ থাকতেই পারতো? যে জন্যে সে এসেছে সেটাতে হয় নি–অরুনার বড় মামা যে পাগল এই কাটাতো বলা হয়নি। সে-কি আবার ফিরে যাবে? ফিরে যেতে লজ্জা লাগবে। কিন্তু লজ্জা লাগারই বা কি আছে? সে দরজার বেল টিপবে–আলম দরজা খুলবে। সে বলবে, যে কথাটা বলার জন্যে এসেছিলাম সেটাই বলতে ভুলে গেছি … আলম বলবে, ভেতরে এসে বল। সে বলবে, না যা বলার এখানে দাড়িয়ে বলে চলে যাব। আলম বলবে, কি ছেলেমানুষী করছ? দরজায় দাড়িয়ে আবার কথা কি? ভেতরে আস। সে ভেতরে যাবে তবে খুব অল্প সময়ের জন্যে …।
নায়লা করিডোরে সঁড়িয়ে আছে। সে মন ঠিক করতে পারছে না–কি করবে। পেতলের বোতামদেয়া নীল কোট পরে হোটেলের এক কর্মচারী নায়লার কাছে এগিয়ে এসে বলল, আপনি কার কাছে যাবেন।
নায়লা খতমত খেয়ে বলল, কারো কাছে যাব না। হোটেল থেকে বেরুব।
ম্যাডাম লিফট ডান দিকে।
থ্যাংক য়্যু।
নায়লা যন্ত্রের মত লিফটের দিকে এগুচ্ছে। তার এখন আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছে না। একা একা শহরে কিছুক্ষণ ঘুরতে ইচ্ছা করছে। ভাড়ায় টেক্সি যে সব পাওয়া যায় তার একটা ঘণ্টাখানিকের জন্যে ভাড়া করে শহরে ঘুরলে কেমন হয়? ঐ সব টেক্সির ভাড়া কত?
ঘন হয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। নায়লা ফুটপাথ ধরে হাটছে। সে যাচ্ছে ফার্মগেটের দিকে। ফার্মগেটে তার পরিচিত কেউ থাকে না। তবু সে ঐ দিকে কেন যাচ্ছে নিজেও জানে না।
রাত দশটার মত বাজে। নায়লা এখনো বাসায় ফিরেনি। জামান খুবই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে। শীতের সময় রাত দশটা অনেক রাত। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় রাত আটটার মধ্যে তারপরেও এত রাত পর্যন্ত নায়লা বাইরে কি করছে? কোন বিপদ আপদ হয়নিতো? হয়তো কোন এক্সিডেন্ট করেছে কিংবা কোন বদলেকের পাল্লায় পড়েছে।
বাবু খুব কান্নাকাটি করছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে কিছুক্ষণ আগে একগাদা বমি করেছে। বমি করে এখন প্রায় নেতিয়ে পড়েছে। মাম্রাট মান্নাট বলে–এখন সে আর কাদছে না, তবে চোখ বড় বড় করে চারদিকে দেখছে হয়ত আশা করছে যে কোন মুহূর্তে মাকে সে দেখতে পাবে।
ফিরুর মা।
জি ভাইজান?
কি করি বলতো? নায়লাতো এখনো অসিছে না।
ভাইজান চিন্তা কইরেন না। আইস্যা পড়ব।
তুমি কি একটু বাবুকে রাখবে আমি খুঁজে আসি।
কই খুঁজবেন ভাইজান ঢাকা শহরতো আফনের ছোড মোড় জাগা না।
খুবই সত্যি কথা। জামনি কোথায় খুঁজবে? না খুঁজে ঘরেই বা বসে থাকে কি ভাবে?
ভাইজান।
হুঁ।
আম্মারে আফনে ভাল ডাক্তার কবিরাজ দেখান। আম্মার ভাবগতিকে ভাল ঠেকে না।
কেন?
আম্মা রাইত ঘুমায় না।
কি বল তুমি?
কাইল শেষ রাইত দেখছি বসার ঘরে চিয়ারে চুপচাপ বসা। তার আগের রাইতেও দেখছি।
তুমি একটু বাবুকে রাখতো আমি দেখি খোঁজ নিয়ে।
বাবু ফিরুর মার কাছে যেতে তেমন আপত্তি করল না। মনে হচ্ছে সে বুঝতে পারছে তার বাবা যাচ্ছে মাআঁটকে আনতে।
জামান এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের গেটের কাছে আসতেই নায়লার দেখা পাওয়া গেল। সে বেবীটেক্সির ভাড়া মেটাচ্ছে। জামান বলল, এত দেরি?