জ্বি হবে।
আর এদিকে বড় সাহেবের সঙ্গে আমি আপনার ব্যাপারটা বলব। সৎ মানুষ এবং কাজের মানুষ–ওদের যদি চাকরি চলে যায় তাহলে তো চলবে না। তাহলে বুঝতে হবে কেয়ামত এসে গেছে।
জামান বলল, উঠি?
উঠবেন? উঠুন। মনে রাখবেন পরশু দিন সন্ধ্যা, আর ভাবীকে টাকাটা দিয়ে দেবেন। ইনার মনটা ভাল থাকা দরকার। বুঝতে পারছেন ভাই?
পারছি।
জামানের কোন কাজ নেই। বাসায় ফিরে যেতে পারে। অসময়ে বাসায় ফিরলে নায়লা খুব অবাক হবে। খুশিও হবে। বাবু কি করবে কে জানে। নিশ্চয়ই দাঁত কিড়মিড় করবে। বাড়াবাড়ি রকমের খুশি হলে বাবু দাঁত কিড়মিড় করে। বাবুর জন্যে কিছু বেলুন কিনে নিয়ে গেলে হয়। এক সঙ্গে চারটা চার রঙের গ্যাস বেলুন নিয়ে গেলে বাবু কি করবে? পাঁচ টাকা করে দাম হলে চারটা কুড়ি টাকা। এক সঙ্গে চারটা কেনার জন্য কিছু কমে হয়ত দেবে। নায়লার জন্যে কিছু কিনে নিয়ে গেলে হয়। কোন জিনিসটা তার সবচে পছন্দ জামান জানে না। কাচের চুড়ি কি পছন্দ? প্রায়ই কাচের চুড়ি কেনে।
দরজা খুলল, নায়লা। খুশি খুশি গলায় বলল, আরে তুমি? আজ সকাল সকাল চলে এলে যে?
জামান কিছু একটা জবাব দিতে যাচ্ছিল, তার প্রয়োজন হল না। নায়লা চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল–বাবু দেখে যাও কে এসেছে, দেখে যাও।
নায়লা বলল, বাবু যে কি কাণ্ড শুরু করেছে না দেখলে তুমি বিশ্বাস করবে না। সে হাঁটা ভুলে গেছে। আজ সকাল থেকে হামাগুড়ি দিচ্ছে।
সেকি?
আমি হাসতে হাসতে বাঁচি না। বাচ্চারা হামাগুড়ি থেকে হাঁটা শেখে সে হাঁটা থেকে হামাগুড়ি। বাবু কই আসতো–বাবাকে দেখে যাও।
বাবু পর্দা ফাক করে বসার ঘরে এল। সে সত্যি সত্যি হামাগুড়ি দিচ্ছে। জামান হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কোলে নিল।
নায়লা বলল, তোমাদের অফিস কি আজ সকাল সকাল ছুটি হয়ে গেছে?
হুঁ।
তুমি কি ভাত খাবে? না খেয়ে এসে?
খেয়ে এসেছি।
ক্যান্টিনে খেয়েছ নিশ্চয়ই। আজ ভাত নিয়ে যাওনি কেন? আমি রান্না শেষ করে এসে বসার ঘরে দেখি তুমি চলে গেছ।
দেরি হয়ে যাচ্ছিল…
দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলেই তুমি বুঝি আমাকে না জানিয়ে চলে যাবে। আমার এত মন খারাপ হল। আচ্ছা শোন তুমি কি আমার উপর কোন রাগ করেছ?
নাতো।
আমার ধারণা গতরাতে আমার আজ বাজে কথা শুনে তুমি আমার উপর রাগ করেছ।
আমি এত চট করে কারো উপর রাগ করি না।
সেটাও জানি। রাগ না করাটাও ভাল না। রাগ টাগ করার মত আমি যদি কিছু করি তাহলে অবশ্যই রাগ করবে। যে রাগ করতে পারে না সে ভালও বাসতে পারে al
কে বলেছে–আলম?
হুঁ।
আলম মনে হয় আমেরিকা গিয়ে খুব ওস্তাদী ধরণের কথা শিখেছে।
নায়লা হেসে ফেলল। মাকে হাসতে দেখে বাবুও হাসছে। জামান বলল, আজ বিকেলে কোথাও বেড়াতে যাবে?
নায়লা বিস্মিত হয়ে বলল, বেড়াতে যাব কেন?
এম্নি। আমিরাতো যাই না কখনো। সব সময় ঘরেই থাকি।
নায়লা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার যাবার জায়গা নেই। কাবো বসায় যাবার চেয়ে বরং দোকানের ঘুরতে ভাল লাগে।
চল দোকানে দোকানে ঘুরব। খালি হাতে?
খালি হাতে?
না খালি হাতে না। এই টাকার রাখ তোমার কাছে। ইচ্ছামত খরচ কর।
নায়লা হতভম্ভ গলায় বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিসের টাকা।
অফিসে থেকে হঠাৎ কিছু টাকা পেয়ে গেলাম। তোমাকেতো খরচ করার মত নগদ টাকা পয়সা কিছু দিতে পারি না।
তুমি কি সত্যি টাকাটা আমাকে দিচ্ছ?
হ্যাঁ।
এতো অনেক টাকা।
অনেক না। সামন্যই। তুমি ইচ্ছামত খরচ কর আমি দেখি।
আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বোধহয় স্বপ্ন টপ্ন দেখছি।
জামান লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, সামান্য কয়েকটা টাকা কি যে তুমি বল।
সব টাকাটা যদি আমি আজ সন্ধ্যার মধ্যে খরচ করে ফেলি তুমি কিছু বলবে না?
না।
বেশ আজ সন্ধ্যার মধ্যে খরচ করব। আমি একা নিউমার্কেটে যাব। তুমি বাবুকে নিয়ে থাকবে। তুমি সঙ্গে থাকলে সব সময় মনের মধ্যে খচখচানি খাকবে–বাবুও বাতিস দুদু বাতিস দুদু করবে।
তুমি যাও। আমি বাবুকে রাখব।
জামান বাবুকে নিয়ে খাটে বসে আছে। একটু দূরে জামানের দিকে পিঠ দিয়ে গভীর আনন্দে টাকা গুনছে নায়লা। দৃশ্যটা এত সুন্দর লাগছে জামানের। আহা তরি যদি কিছু বেশি টাকা থাকতো। সে যদি প্রতিমাসে অন্তত একবার নায়লাকে এমন খুশি করতে পারতো।
নায়লা বিকেল থেকেই নিউমার্কেটে ঘুরছে
নায়লা বিকেল থেকেই নিউমার্কেটে ঘুরছে। অন্যদিন যা দেখে সবই কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে। আজ আর কিছুই কিনতে ইচ্ছা করছে না। বাবুর জন্যে লাল টুকটুকে একটা বল শুধু কেনা হয়েছে। ছটা চিনামাটির প্লেট কেনার জন্যে এলিফেন্ট রোডের দোকানগুলিতে অনেক হাঁটাহাঁটি করল। পছন্দও করল। শেষ পর্যন্ত কিনল না। আজই কিনতে হবে এমনতো কোন কথা না। পরে কিনলেও হবে। বরং জামানের জন্যে একটা শার্ট কেনা যাক। রঙচঙা সার্ট, যা গায়ে দিলেই চট করে বয়স দশ বছর কমে যায়। ও পরতে চাইবে না। জোর করে পরাতে হবে।
শার্ট কিনতে গিয়ে নায়লার মনে হল আলমের জন্যেও একটা কিছু কেনা উচিত। সে এত উপহার দিয়েছে তাকে একটা কিছু না দিলে ভাল দেখায় না। ঐদিন যে পাঞ্জাবী পরে এসেছিল সেটা তেমন ভাল ছিল না। কত সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবী বের হয়েছে। সিল্কের কিছু প্রিন পাঞ্জাবী আড়ং এ পাওয়া যায়–এত সুন্দর। গায়ে দিলে দামী কিছুই দিতে হয়।
সন্ধ্যা হতে এখনো ঘণ্টা খানিক বাকি। এরমধ্যে পাঞ্জাবী কিনে আলমকে হোটেলে দিয়ে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা যাবে। তা ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে কতদূর কি হল সেটাও জানা দরকার। সে অরুনার সঙ্গে এসব নিয়ে আলাপ করেছে কি না তা জানার প্রয়োজন আছে। একটা ব্যাপার জামানকে বলতে সে ভুলে গেছে। অরুনাদের ফ্যামিলিতে পাগল আছে। অরুনার বড় মামা বদ্ধ উন্মাদ। মাঝে মাঝে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। পাগলামী বংশগত রোগ। বংশে একজনের থাকলে পরবর্তী জেনারেশনে কারোর না কারোর দেখা যায়। সত্যি আবার এটা জেনে শুনেও যদি আলম বিয়ে করতে চায় করবে। তবে তাকে যদি মতামত জিজ্ঞেস করে সে কলবে–না। রিস্ক নেয়ার প্রয়োজন কি? বাংলাদেশে কি মেয়ের অভাব হয়েছে। খুঁজলে অরুনার চেয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাওয়া যাবে।