না হই না। আমরা মজা করে ঘুরব আর ঐ বেচারা একা ঘরে থাকবে?
মাঝে মাঝে এই কাজটা করবে, নয়ত দেখবে একদিন জামান তোমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তোমার কথা মনে হলেই তার মনে মাতৃমূর্তি ভেসে উঠছে–প্রেমিক-মূর্তি না।
আপনার উপদেশ মনে রাখব। এখন চলুন বাসায় যাই।
আমি কিন্তু চলেই যেতে চেয়েছিলাম, এখানে এসেছি তোমার আগ্রহে।
আমার আগ্রহ শেষ হয়েছে, এখন চলুন ফেরত যাই।
চল যাই। তার আগে ছবি বিটা শেষ করে ফেলি–অল্প কটা ছবি বাকি। রিল শেষ করলেই প্রিন্ট করতে দেব। তবে ছবি ভাল হবে না–সূর্য একেবারে মাখার উপর।
নায়লা মনে মনে বলল, ছবি একেবারে না উঠলেই সবচে ভাল হয়।
হাতী-ঘোড়া সহ আলম নায়লাকে তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে। খালি বাসা। ফিরুর মাও নেই। জামান কি তাকেও রেখে এসেছে? তালা দেয়া ঘর খুলতে কেমন জানি লাগে। এতক্ষণ সে একা একা থাকবে? আগে কথা ছিল অরুণীর বাসা থেকে সে মার বাসায় চলে যাবে। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরবে। সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে। খিদেও লেগেছে। শুধু নিজের জন্যে রান্না করতে ইচ্ছা করছে না।
অনেক সময় নিয়ে নায়লা গোসল করল। বাথরুমে তার কেমন ভয় ভয় লাগছে। কেন জানি মনে হচ্ছে গোসল শেষ করে বাথরুমের দরজা খুলতে গিয়ে দেখবে, দরজা খুলতে পারছে না।
দুপুরে সে অভুক্ত অবস্থায় বিছানায় শুয়ে রইল। দিনে ঘুমিয়ে তার অভ্যাস নেই–তবু বিছানায় শোয়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যেই বাজে ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখল। দুঃস্বপ্নটা বাজে এবং নোংরা যেন তার স্বামী আলম, জামান নয়। সে আলমের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছে। আলম ছবি তুলবে, কোত্থেকে শুটকা ধরনের একটা লোকটা ধরে নিয়ে এসেছে। তাকে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলছে, অটোফোকাস ক্যামেরা। শুধু বাটন টিপলেই হবে।
লোকটা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়েছে। অলিম তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে। তার একটু অস্বস্তি লাগছে, কারণ বাইরের একটা লোক, সে কি জানি মনে করছে। তারচেয়েও বড় কথা–নায়লা দাঁড়িয়ে আছে শুধু পেটিকোট পরে। তার গায়ে আর কোন কাপড় নেই। অথচ এই ব্যাপারটায় কেউ কিছু মনে করছে না। যেন এটাই স্বাভাবিক। শুধু নায়লা একাই লজ্জায় মরে যাচ্ছে।
নায়লার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার পর। জামান অফিস থেকে এসে দরজা ঠক ঠক করছে, তখনো নায়লা ঘুমে। ঘর অন্ধকার। মুখের চারপাশে মশা ভন ভুন করছে …। উত্তরের জানালা খোলা জানালা দিয়ে শীতের হাওয়া আসছে। শরীর কাঁপছে শীতে। নায়লা উঠে দরজা খুলল।
জামান বলল, কি ব্যাপার, শরীর খারাপ?
হুঁ।
ঘর অন্ধকার করে রেখেছ–ঘুমুচ্ছিলে?
হুঁ। বাবুকে আননি?
না। আমি ভাবলাম তুমি নিয়ে আসবে।
জামান বাথরুমে ঢুকে গেল। কোন কৌতূহল নেই, কোন আগ্রহ নেই। আশ্চর্য মানুষ তো! অরুণাকে আলমের পছন্দ হয়েছে কি না জানতে চাইবে না? ঘরের ভিতরে বিশাল আকৃতির মাটির ঘোড়া, মাটির হাতী। সেদিকেও লক্ষ্য নেই। একবার তো জিজ্ঞেস করবে–এগুলি কোখেকে এসেছে? নায়লা রান্নাঘরে ঢুকল। জামানকে চা দেবে। ঘরে খাবার কি কিছু আছে? মুড়ি থাকার কথা। মিইয়ে গেছে কিনা কে জানে। বাবুকে আনতে যেতে হবে। জামানকেই আনতে যেতে হবে।
ঘরে মুড়ি ছিল না। একটা টিনে কয়েকটা টোস্ট বিসকিট। সব কটা মিইয়ে গেছে। চায়ে ভিজিয়ে খাওয়া যাবে কি? নায়লা চা ও টোস্ট বিসকিট দিয়েছে। জামান সেই মিয়ানো টোস্ট আগ্রহ করে খাচ্ছে।
জামান বলল, মাটির এত বড় খেলনা আলম কিনেছে?
হ্যাঁ।
এতবড় খেলনা হয় জানতাম না। আমাদের সময় ছোট ছোট ছিল।
নায়লা বলল, চা খেয়ে বাবুকে নিয়ে এসো।
আচ্ছা।
নায়লা নিজের থেকেই বলল, অরুণীর কাছে শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। দেরি হয়ে গেল।
জামান বলল, ও আচ্ছা। তোমার বন্ধু আবার আমাকে নিয়ে যেতেও চায় না। একজন মেয়েকে নিয়ে আরেকজন মেয়েকে দেখতে যেতে তার নাকি ইচ্ছা করে না।
OP দেখ তো আমার ঘর কি-না।
জামান কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখল। জ্বর আছে কি-না তা বলল না। বোধহয় নেই। জ্বর থাকলে বল তো। নায়লা বলল, আজ খুব ঘুরেছি।
কোথায়?
নিউ মার্কেটে?
ও আচ্ছা।
জামান ওঠে পড়েছে। সে বাবুকে আনতে যাবে। নায়লা তীব্র অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে। তার ধারণা, জামান জানতে চাইবে নিউ মার্কেটে কি আলমের সঙ্গে পূরেছে? জামান কিছু বলল না। ফট করে মিথ্যা কথাটা সে কেন বলল? সে তো নিউ মার্কেটে যায়নি, সে গিয়েছে সাভারে। সত্যি কথাটা বললে জামান কি রাগ করতে? মোটেই না। নায়লার বলা উচিত ছিল–তোমার বন্ধু আজ আমাকে বিরক্ত করে মেরেছে। তার জন্যেই দেরি হয়ে গেছে, অরুণার কাছে যেতে পারিনি। আবার তার জন্যেই যেতে হয়েছে সাভার–সেখান থেকে সে নাকি বাবুর জন্যে মাটির হাতী ঘোড়া কিনবে। এই সহজ সত্য সে বলতে পারল না কেন? তার নিজের মনে কি কোন অপরাধবোধ আছে? অপরাধবোধ থাকার তো কোন কারণ নেই।
তবে স্বামীকে যে সব কিছু খুলে বলতে হবে তাও তো না। সব মানুষের কিছু গোপন ব্যাপার থাকে যেগুলি কাউকে বলতে নেই। জামানের আগে এক বার বিয়ে ঠিক হয়েছিল–মার্চেন্টশীপের এক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে–রফিকুল ইসলাম। লম্বাচওড়া ছেলে–সুন্দর দেখতে। সব সময় সানগ্লাস পরে বের হত। ঐ ছেলের সঙ্গে নায়লার এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। এনগেজমেন্টে তারা নায়লাকে একটা সবুজ রঙের কাতান, সবুজ পান্না আংটি এবং সবুজ বেল্টের এক জোড়া হিল জুতা দিল। আংটি শাড়ি না, সবুজ জুতা দেখে সবাই মুগ্ধ।