আচ্ছা, তুমি আমাকে আগে কিছু বলনি কেন?
আগে কি বলব?
এই যে মেয়েটার চেহারার সঙ্গে আমার চেহারার এত মিল–এটা।
বলে কি হবে? বলার কি আছে?
আমার সঙ্গে তুমি কথা বলে কোন আরাম পাও না, তাই না?
জামান তাকিয়ে আছে। নায়লা কি বলতে চাচ্ছে সে ঠিক বুঝতে পারছে না। নায়লা হাই তুলতে তুলতে বলল, আমাকে বিয়ে না করে অন্য কাউকে বিয়ে করলে তুমি অনেক সুখি হতে। এটা বলায় রাগ করলে নাকি?
না।
তোমার এই গুণটা ভাল। কিছুতেই রাগ কর না। যার যা ইচ্ছে বলুক, তোমার কিছু যায় আসে না।
জামান বলল, নায়লা, তুমি এখন বাসায় চলে যাও–আমি কিছু কাজকর্ম করি।
কাজকর্ম তে সারাজীবনই করলে, একদিন না হয় না করলে। আজ ছুটি নিয়ে নাও না। চল আজ দুজনে ঘুরে বেড়াই।
কোথায় যাব?
সাভার স্মৃতিসৌধে যাব। এত সুন্দর জায়গাটা! ঐখানে পর্যটনের একটা রেস্টুরেন্ট আছে। চল আজ বিকেলের চটা ঐ রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে খাব।
আরেকদিন যাব নায়লা। অনেক কাজ আছে। অফিসের অবস্থা ভাল না। নানা রকম গুজব শোনা যাচ্ছে। এবার নাকি অনেক ছাটাই হবে।
সারা বছর কাজ করেছ, একদিন শুধু আধবেলা কাজ না করার জন্যে তুমি ছাটাই হয়ে যাবে?
তা না।
তাহলে চল।
আজ থাক লায়লা। বড় সাহেব আমাকে একটা ফাইল দিয়েছেন–ফাইলটা আজই শেষ করে উনাকে দিতে হবে।
উনাকে গিয়ে বল–স্যার, আজ আমার স্ত্রীর জন্মদিন। ও এসে বসে আছে। ওকে নিয়ে একটু বাইরে না গেলে পারিবারিক সমস্যা হবে। তুমি বলতে না পারলে আমি বলি।
জামান বলল, আজ তোমার জন্মদিন নাকি?
না। সামান্য একটু মিথ্যা না হয় স্ত্রীর কারণে বললে।
জামান বলল, সামনের শুক্রবারে চল সাভার থেকে ঘুরে আসব। টেনশান নিয়ে কোথাও যাওয়া ঠিক না।
নায়লা ক্লান্ত গলায় বলল, আচ্ছা। তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রাখছে। আজ সত্যি তার জন্মদিন।
একা একা সে কি করবে? রাস্তায় হাঁটবে? আচ্ছা, সে যদি আলমের হোটেলে উপস্থিত হয়ে বলে–আচ্ছা শুনুন, আজ আমার জন্মদিন। আজ সারাদিন আমি আপনাকে নিয়ে ঘুরব? তাহলে কেমন হয়?
নায়লা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। মানুষ যা ভাবে খুব কম সময়ই তা করতে পারে।
আচ্ছা, একা একা সাভার চলে গেলে কেমন হয়?
রাস্তায় নেমে নায়লা চোখ মুছতে লাগল। বার বার তার চোখ পানিতে ভিজে উঠছে।
নায়লা চোখ বড় বড় করে বলল
নায়লা চোখ বড় বড় করে বলল, আপনি এত বড় গাড়ি নিয়ে এসেছেন? আমরা যাব পুরানো ঢাকায়। এত বড় গাড়ি তো গলি দিয়ে চকুবে না।
আলম বলল, যতদূর যাওয়া যায় চল যাই, তারপর না হয় রিকশা নিয়ে নেব। জামান যাচ্ছে না?
না। ও বাবুকে ডাক্তারের কাছে নিয়েছে। বাবুর কাশি হয়েছে। কাল রাতে খুব কেশেছে। অবশ্যি বাবু সুস্থ থাকলেও সে যেত না। ওর নকি মেয়ে দেখতে যেতে ভাল লাগে না।
আলম খানিকটা অবাক হয়ে নায়লাকে দেখছে। নায়লা কেমন হড়বড় করে কথা বলে যাচ্ছে।
আমাদের বিয়ের সময়ও কিন্তু ও আমাকে আগে দেখেনি।
চোখ বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে?
অনেকটা সে রকম।
তাহলে চল রওনা হই। তুমি যা সাজ দিয়েছ, তোমার পাশে তো অরি অন্য কোন মেয়েকে ভাল লাগবে না।
নায়লা লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। হালকা গোলাপি রঙের সুতির শাড়ি পরেছে। সাজের মধ্যে সাজ হল–চোখে কাজল। নিজেই কাজলদানে কাজল বানিয়ে চোখে দিয়েছে। প্রথমে হাতে দুগাছি সোনার চুড়ি পরেছিল। তাকিয়ে দেখে হাত খালি খালি লাগছে। হাত ভর্তি সোনার চুড়ি থাকলে একটা কথা। এত চুড়ি সে পাবে কোথায়? বিয়ের সময় বাবা যা দিয়েছিলেন তাই। সেখান থেকেও কিছু নষ্ট হয়েছে। বাবুর জন্মের সময় গলার হারটা বিক্রি করতে হল।
নায়লা সোনার চুড়িগুলি খুলে ফেলে হাত ভর্তি কাচের চুড়ি পরল। সবুজ রঙের চুড়ি। সবুজ পাথর বসানো একটা আঙটি হাতে থাকলে খুব মানাতো?
আলম বলল, নায়লা, একটা কাজ করা যাক। রওনা হবার আগে চল কোন কফি হাউসে বসে এক কাপ কালো কফি খাই। কফি খেতে খেতে আমাদের স্ট্রাটেজি ঠিক করে নেই।
স্ট্র্যাটেজি কিসের?
একটা পরিকল্পনা করতে হবে না যাতে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে? ফাস্ট ইমপ্রেশন ভাল না হলে খেলা ড্র হয়ে যাবে।
বেশ তো, চলুন কফি খাই।
আর গাড়িটাও বদলাতে হবে, ছেটি গাড়ি নিতে হবে। আমার পোশাক-আশাক কি ঠিক আছে?
হ্যাঁ ঠিক আছে।
আমার নিজের কাছে ভাল লাগছে না। তোমার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করছে না। তুমি পরেছ খাঁটি বাঙালী পোশাক–আমি জিনসের প্যান্ট, রঙচঙা শার্ট। আমিও বাঙালী পোশাক পরব।
বাঙালী পোশাকটা কি? লুঙ্গি-গেঞ্জি?
ছেলেদের বাঙালী পোশাক হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি, কাধে চাদর। পায়ে চটি জুতা …।
আগে ছিল, এখন আর এইসব কেউ পরে না।
তুমি তাহলে বলছ আমার ড্রেস ঠিক আছে?
হুঁ।
গায়ে সেন্ট মেখেছি, বুঝতে পারছ তো? সেন্টটা কোন সমস্যা করবে না তো?
নায়লা বিস্মিত হয়ে বলল, সেন্ট সমস্যা করবে কেন?
অনেক মেয়ে আছে–ছেলেদের সেন্ট মাখা একেবারেই পছন্দ করে না। তারা ভাবে, এটা হল এফিমিনেট–মেয়েলী ব্যাপার। পুরুষদের গায়ে ঘামের কড়া গন্ধে তাদের কিছু যায়-আসে না, কিন্তু আফটার শেভের মিষ্টি গন্ধ তাদের পছন্দ না।
অপিনি বুঝি মেয়েদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে খুব চিন্তা করেন?
আগে করতাম না। এখন করি। বিয়ের চেষ্টা যে আমি এখন শুরু করেছি তা না। বেশ কিছু দিন থেকেই করছি। বিদেশেও বাঙালী মেয়েরা আছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তাও এগিয়েছিল–শেষে তারা পিছিয়ে গেল। আমি হলাম ঘরপোড়া গরু–কাজেই এবার আমি খুব সাবধান …।