হুঁ পোকা।
পোকা নিব।
জামান ছেলেকে নামিয়ে দিল। বাবু পোকার দিকে এগুচ্ছে। তার চোখে-মুখে কি গভীর বিস্ময়।
নায়লা চা নিয়ে এসেছে। চা আর এক বাটি মুড়ি। চ-তে ভেজানো মুড়ি চামচ দিয়ে তুলে খেতে জামান পছন্দ করে। নায়লা বলল, মাঝে মাঝে বাবুর মুখে খানিকটা মুড়ি দিও তো। ও মুড়ি খায়। নায়লা নিজের জন্যেও এক কাপ চা এনেছে। পেটমোটা বিরাট একটা কাপ। এটা না-কি তার ছেলেবেলার কাপ। বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে।
নায়লা বলল, আমরা যখন খুব বড়লোক হব তখন কি করব জান? প্রতি সপ্তাহে দু-তিন হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে দোকানে যাব–যা পছন্দ হয় কিনে ফেলব।
বড় লোক হবে কি ভাবে?
জানি না কি ভাবে হব। যদি হই …
জামানের মায়া লাগছে। বেচারীকে কিছু হাতখরচ প্রতি মাসে দিতে পারলে ভাল হত। এই সৌভাগ্য কি তার কোনদিন হবে?
আজ ইস্টার্ন প্লাজায় বাবুকে নিয়ে গিয়ে কি যে মুশকিলে পড়েছি! যাই দেখবে তাই কিনবে।
জামান হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ও তো আর জানে না অর্থ বলে একটা ব্যাপার আছে। বাবুর ধারণা, সমস্ত পৃথিবীটাই তার। যতই বয়স বাড়তে থাকবে ততই তার পৃথিবী ছোট হতে থাকবে …।
হাই ঘটের কথা বাদ দাও। ইস্টার্ন প্লাজাতে গিয়ে আজ কার সঙ্গে দেখা হয়েছে জান? অরুনার সঙ্গে। অরুনাকে মনে আছে?
হ্যাঁ, মনে আছে খুব সুন্দর একটা মেয়ে।
ও আরো সুন্দর হয়েছে। এক্কেবারে জাপানি পুতুল। অরুনা আমাকে কফি খাওয়ালো। বাবুকে চকলেট কিনে দিল।
উনি এখন করছেন কি?
রিসিপশনিস্ট। তষে বলছে চাকরি ছেড়ে দেবে। চাকরি ভাল লাগে না। সবাই নাকি বিরক্ত করে।
সুন্দরী মেয়ে, কিছু বিরক্ত তো করবেই।
আমিও তাই বললাম। মাঝে মাঝে তোমার কথা আর আমার কথা এমন মিলে যায়। আচ্ছা শোন, অরুনাকে দেখার পর থেকে আমার মাথায় একটা জিনিস ঘুরছে। তোমার বন্ধুর সঙ্গে কি এই মেয়ের বিয়ে হয় না? অরুনাকে দেখে পছন্দ করবে না এমন ছেলে তো বাংলাদেশে নেই।
অরুনা আলমকে পছন্দ করবে কিনা কে জানে?
পছন্দ করবে না কেন? তোমার বন্ধু তো দেখতে সুন্দর। টাকাপয়সা আছে। পড়াশোনা করছে। আমেরিকায় থাকে …।
তুমি কি বিয়ের ব্যাপারে অরুনার সঙ্গে কথা বলেছ?
সরাসরি কিছু বলিনি–ইশারায় বলেছি। ওর বাসার ঠিকানা নিয়েছি। অরুন এখন তার ছোট মামার সঙ্গে থাকে। আমি বলেছি একদিন আমাদের এক বন্ধুকে নিয়ে ওর বাসায় যাব।
ভাল–আলমকে নিয়ে যাও।
এই শুক্রবারে গেলে কেমন হয়?
ভালই হয়।
তোমার বন্ধুকে তে খবর দেয়া দরকার।
আমি টেলিফোনে বলে দেব।
নায়লা ইতস্তত করে কলল, তারচে এক কাজ করলে কেমন হয়? চল না আমরা সবাই মিলে উনার হোটেলে উপস্থিত হই। উনি চমকে যাবেন। তাছাড়া বড় হোটেল আমি কখনো দেখিনি–দেখতে ইচ্ছা করে, …।
কবে যেতে চাও?
আজই চল। নতুন হ্যাটটা বাবুর মাথায় পরিয়ে দেব। তোমার জন্যে একটা স্যুয়েটার কিনেছি, তুমি স্যুয়েটারটা পরবে … যাবে?
জামানের কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু নায়লার উৎসাহ দেখে মায়া লাগছে।
নায়লা বলল, বাবুকে কাপড় পরাবো?
পরাও।
আমি কোন্ শাড়িটা পরব?
এত আগ্রহ করে নায়লা প্রশ্ন করেছে। উত্তর দিতে হয় … জামান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। নায়লার কি শাড়ি আছে তাও সে জানে না। শাড়ি তো তেমন থাকার কথাও না। বিয়ের পর সে কি কোন শাড়ি কিনে দিয়েছে? মনে পড়ছে না। গত ঈদে শাড়ি দেয়া হয়নি। শ্বশুরবাড়ি থেকে একটা শাড়ি এলো। নায়লা বলল, আর লাগবে না। যদিও সেই শাড়ি নায়লার পছন্দ হয়নি। পরার পর মন খারাপ করে বলেছে–জংলি একটা প্রিন্ট। কি বিশ্রী লাগছে।
নায়লা বলল, চুপ করে আছ কেন? বল না কোন্ শাড়িটা পরব?
আলমের দেয়া শাড়িটা পর। সুন্দর শাড়ি।
ওটার ব্লাউজ নাই যে।
যেসব ব্লাউজ আছে তার সঙ্গে পরা যায় না?
উঁহু। আচ্ছা এক কাজ করি, রিকশা করে নিউমার্কেট চলে যাই, দেখি সেখানে রেডিমেড কিছু পাওয়া যায় কিনা। যাব?
যাও।
জাম্মানের ঘুম পাচ্ছে। সে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে পড়ল দেখতে দেখতে।
আলমের গলায় মুগ্ধ বিস্ময়
আমি কি চোখে ভুল দেখছি?
আলমের গলায় মুগ্ধ বিস্ময়। সে সত্যি সত্যি বিস্মিত। সেজেগুজে তিনজন তার হোটেলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। নায়লা শ্যামলা ধরনের মেয়ে–প্রথমদিন তাকে যতটা সুন্দর লাগছিল আজ তারচেয়ে হাজার গুণ সুন্দর লাগছে। প্রথম দিন নায়লার চোখে-মুখে চাপা অস্বস্তি ছিল। আজ সেই অস্বস্তি নেই–ঝলমলে ছটফটে ভাব।
আলম বলল, জামান, আমি কি স্বপ্ন-টপ্ন দেখছি? না কি তোরা সত্যি এসেছিস?
নায়লা বলল, আপনি কি দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকবেন, না আমাদের ভেতরে আসতে দেবেন?
এসো ভাবী, এসো। এখন থেকে আমি কিন্তু পুরোপুরি তুমি বলব–রাগ করলে করবে। কিচ্ছু আসে যায় না।
আচ্ছা বলবেন।
এবং ভাবী বলাও বন্ধ। এখন থেকে শুধুই নায়লা। জামান মনে মনে রাগ করবে। কিন্তু কোন উপায় নেই–রূপবতীকে ভাবী ডাকা যায় না। নায়লা, তোমার বাচ্চাটাকে
আমার কোলে দাও। ও কি আসবে আমার কোলে?
হাত বাড়াতেই বাবু কোলে ঝাপিয়ে পড়ল। যেন সে এর জন্যেই অপেক্ষা করছিল। আলম বলল, জামান শোন, তোকে একটা ভাল উপদেশ দিচ্ছি–বৌকে নিয়ে বাইরে যখন বেড়াতে যাবি তখন বাচ্চা রাখবি সব সময় নিজের কাছে। মারা বাড়িতে সারাক্ষণ বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে–বাইরে গেলেও বাচ্চা-কাচ্চা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া খুব অন্যায়। অয়ি, তারা ভেতরে আয়।