অস্বস্তি দূর করাবার জন্যে হাসছেন? ফরহাদের নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে।
আরেকটা গল্প বলি শোন। এটা অবশ্যি নিশা বলে নি। কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম। এক ছেলে তার বন্ধুকে বলেছে—শেষ পর্যন্ত আমার চাচা শান্তি পেয়েছেন। চিরশান্তি। বন্ধু বলল, তোর চাচা কি মারা গেছেন? সে বলল, না চাচা মারা যান নি চাচী মারা গেছেন।
গল্প শেষ করে ভদ্রলোক আগের চেয়েও অনেক বেশী উচ্ছাস নিয়ে হাসছেন। ফরহাদ তাকিয়ে আছে। এক সময় তিনি হাসি থামিয়ে বললেন, তোমাকে পর পর দুটা মজার মজার গল্প বললাম। তুমি একটুও হাস নি। তুমি যে বললে তোমার সেন্স অব হিউমার ভাল—এটাতো তুমি ঠিক বলনি।
মাইক্রোবাসে উঠতে উঠতে আসমানী বলল, মামাকে কেমন লাগল।
ফরহাদ বলল, ভাল।
মামা হলেন সেলফ মেড ম্যান। মেট্রিক পাশ করে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিন বছর তাঁর কোন খোঁজই ছিল না। কেউ জানত না তিনি কোথায়। তিন বছর পর দেশে ফিরলেন। কলেজে ভর্তি হলেন। পাশ করলেন। ইউনির্ভাসিটিতে গেলেন। এম.এসসি শেষ করে আবারো দেশের বাইরে।
বিয়ে করেছেন?
না বিয়ে করেন নি। আমরা বিয়ে করতে বলছি! মামা বলছেন—এখন আমার বয়স চুয়ান্ন চলছে এখন বিয়ে করব কি?
আমি বললাম, মামা পিকাসোসতুর বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। মামা বললেন, আমি কি পিকাসো নাকি? আমি অতি নগন্য কামরুল ইসলাম।
আসমানী হাসতে হাসতে বলল, মামা যতই না না করুক আমরা উঠে পরে লেগেছি মামাকে বিয়ে দিয়ে দেব।
ভাল। মামা ভাগ্নির এক সঙ্গে বিয়ে।
আসমানী হাসছে। মেয়েরা তাদের হাসি যে কোন সময় চট করে থামিয়ে দিতে পারে। আসমানী পারে না। একবার হাসতে শুরু করলে সে অনেকক্ষণ হাসে। ফরহাদ বলল—আমরা কোনদিকে যাব? প্রথমে তুমি কি ডলার ভাঙ্গাবে?
ডলারতো ভাঙ্গাবই তবে প্রথমে ভাঙ্গাব না। দ্বিতীয়তে ভাঙ্গাবো। প্রথমে গাড়ি করে আমরা এক ঘন্টা ঘুরব। তোমাকে অফিসে কখন যেতে হবে?
বারোটার দিকে গেলেই হবে।
মনে থাকে যেন। জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্যে যাবেও না, সরি তোমাকে আধঘন্টা টাইম দিয়েছিলাম।
পাঁচ মিনিটের বেশী লাগবে না।
আমি তোমাকে লম্বা একটা চিঠি লিখে রেখেছিলাম। তুমি যদি আজ না আসতে এই চিঠি তোমাদের বাসায় দিয়ে আসতাম।
চিঠি কি সঙ্গে আছে?
চিঠি সঙ্গে থাকবে কেন? আমি পোস্টম্যান নাকি?
ফরহাদ সিগারেট বের করল। আসমানী বলল—তুমি দয়া করে জানালার ধার ঘেসে বস। সিগারেটের ধোয়া জানালা দিয়ে বাইরে ফেলবে।
আচ্ছা।
যেদিন বিয়ে হবে সেদিন থেকে কিন্তু তোমার সিগারেট বন্ধ। শুধু ভোরবেলা নাশতার সময় একটা, দুপুরে ভাত খাবার পর একটা এবং রাতে ঘুমুবার আগে একটা।
আচ্ছা।
তবে বিশেষ বিশেষ উৎসবে কয়েকটা সিগারেট এড করা যেতে পারে যেমন তোমার জন্মদিন, তোমার বিবাহ বার্ষিকী…
থ্যাংক য়্যু।
সিগারেটের ধোয়া তোমারতো বাইরে ফেলার কথা ছিল। তুমি ভেতরে ফেলছ কেন?
সরি।
তোমাকে যে চিঠি লিখেছিলাম সেটা কি সত্যি সত্যি পড়তে চাও।
সঙ্গে আছে।
পড়তে চাও কি-না সেটা বল।
অবশ্যই চাই।
পড়লে কিন্তু রাগ করবে। কারণ চিঠিতে মিষ্টি মিষ্টি কোন ব্যাপারই নেই।
না থাকুক।
আসমানী তার কোলে রাখা ব্যাগ থেকে চিঠি বের করল। চিঠির সঙ্গে ছোট্ট একটা আয়না। কিশোরীদের মত আনন্দময় গলায় বলল—চিঠি পড়ার আগে আয়নাটা দেখ। আয়নাটা সুন্দর না?
হুঁ।
না দেখেই বলে ফেললে। এটা হল বিশেষ ধরনের নাইট মেকাপ আয়না। এই আয়নায় পাওয়ারফুল সোলার ব্যাটারী আছে। দিনেরবেলায় সূর্যের আলো থেকে এই ব্যাটারী চার্জ হয়ে থাকে। রাতে বোতাম টিপলেই আয়নার বাল্ক এমনভাবে জ্বলে যে আলোটা ঠিক মুখে এসে পরে। সেই আলোতে আয়নায় মুখ দেখে মেকাপ নেয়া। সুন্দর না?
খুব সুন্দর।
হাতে নিয়ে দেখ। একটা সুন্দর জিনিস তোমার হাতে নিতে ইচ্ছা করে না?
ফরহাদ আয়না হাতে নিল। বোতাম টিপে আলো জ্বালালো। আসমানী বলল, মামা প্রতিবারই যখন বিদেশ থেকে আসে সবার জন্যে মজার মজার জিনিস নিয়ে আসে। নিশার জন্যে কি এনেছে জান? মাকড়সা!
মাকড়সা?
হুঁ। প্লাস্টিকের মাকড়সা। দূর থেকে দেয়ালে ছুঁড়ে মারলে দেয়ালে লেগে যায়। তারপর এক্কেবারে আসল মাকড়সার মত দেয়াল বেয়ে নামতে থাকে।
বল কি?
খুবই ঘিন্নাকর। দেখবে?
তুমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছ নাকি?
তোমাকে দেখাবার জন্যে এনেছি।
এখন আমি মাকড়সা দেখব না। চিঠিটা আগে পড়ি।
তুমি চিঠি পড়বে আমি কি করব?
তুমি জাপানী আয়নায় মেকাপ ঠিক কর। কিংবা মাকড়সা নিয়ে খেলা কর। ফরহাদ চিঠি পড়তে শুরু করল—
এই যে বাবু সাহেব,
আসসালামু আলায়কুম। এবার আপনি এত দেরী করে ঢাকায় ফিরলেন কেন? আমার খুবই মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আপনি কি জানেন যখন আমার আপনাকে দরকার হয় তখনি আপনি ঢাকায় থাকেন না। এবং আপনার মধ্যে আছে রাক্ষস স্বভাব। যখন আপনি বলেন দুদিনের জন্যে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি তখন আপনি এক সপ্তাহ পার করে আসেন।
বাবু সাহেব আপনি কি জানেন আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে মোটামুটি ঠিক। পুরো ব্যবস্থাটা যিনি করেছেন তিনি আমার মামা। মামা এমন মানুষ যার মুখের উপর কারোরই কিছু বলার ক্ষমতা নেই। যাই হোক পুরো ঘটনাটা—অর্থাৎ মামা কিভাবে আমার পক্ষে চলে এল সেটা বলি। আমার পুরো ঘটনাটা বলতে ইচ্ছে করছে। মন দিয়ে শোনও সরি মন দিয়ে পড়।
মামা বাসায় এসে পৌঁছলেন সন্ধ্যাবেলা। তাঁর যেদিন আসার কথা ছিল তার একদিন আগে চলে এলেন কাজেই আমরা যে তাকে হৈ চৈ করে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসব তা আর করা গেল না। তিনি বাসায় পা দিতেই চারদিকে আনন্দের বন্যা শুরু হয়ে গেল। মা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করলেন সে কান্নাও আনন্দের কান্না। এই কাঁদছেন এই হাসছেন—মোটামুটি হিস্টিরিয়ার মত অবস্থা। আমরা উপহার নিয়ে টানাটানি করছি। মামা স্যুটকেস খুলে বলেছেন—যার যেটা পছন্দ বেছে নে। এতেই সমস্যা হয়েছে। কাড়াকাড়ি পরে গেছে। সারারাত আমরা কাটালাম গল্প করে। ঘুমে যখন মামার চোখ জড়িয়ে আসে তখন কফি বানিয়ে আমরা মামার ঘুম ভাঙ্গাই। এমন অবস্থা।