জ্বি না।
যে বেকুব সে বুদ্ধিমান ভাব ধরে। যে মূর্খ সে জ্ঞানীর ভাব ধরে। যে বেকার সে এমন ভাব ধরে থাকে যেন কোন কোম্পানীর জি এম।
ফরহাদ চুপ করে রইল। তার মেজাজ খুবই খারাপ হচ্ছিল কিন্তু আসমানীর বাবার সঙ্গে মেজাজ খারাপ করার প্রশ্নই উঠে না।
নেত্রকোনার মেয়েদের বিশেষগুণ কি বল দেখি।
বলতে পারছি না।
সেকি—তুমি নেত্রকোনার ছেলে হয়ে নেত্রকোনার মেয়েদের বিশেষ গুণ কি বলতে পারছ না? তাদের বড়গুণ হচ্ছে ঘরের কাজকর্ম তারা খুব ভাল পারে। বাংলাদেশে যত বুয়া আছে তার শতকরা ৬০ ভাগ আসে নেত্রকোনা থেকে। নেত্রকোনা হচ্ছে বাংলাদেশের বুয়া ভান্ডার। ভালমত খোঁজ নিলে দেখবে তোমার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেও দুএকজন এক্সপার্ট বুয়া বের হয়ে যাবে।
কথাগুলি অপমান করার জন্যে বলা। অপমান ফরহাদ গায়ে মাখে না তবু মনটা খারাপ হয়। সে কিছুতেই ভেবে বের করতে পারে নি নেজামত সাহেব তাকে এতটা অপছন্দ কেন করেন। তার পছন্দের মাপকাঠিটা কি?
মেয়ের প্রেমিককে অপছন্দ করা সাধারণ নিয়মের মধ্যে পড়ে। তাই বলে এত অপছন্দ? সে রাজপুত্র না, তার চেহারা পিটার ও টুলের মত না, বিদেশী কোম্পানীর ভাইস প্রেসিডেন্টও সে না। তারপরেও একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষ সামাজিক সৌজন্য বজায় রাখবে না? তার মেয়ে আজেবাজে টাইপের একটা ছেলেকে পছন্দ করেছে এই কারণে তিনি যদি রাগ করে থাকেন, সেই রাগটা তিনি করবেন মেয়ের উপর। ফরহাদের উপর না।
কলিংবেলে চাপ দিয়ে ফরহাদ খুবই অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে। সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ যে দরজা খুলবেন নেজামত সাহেব। রিটায়ার্ড করা লোকজনের উপর সংসারের আজেবাজে কাজগুলি করার দায়িত্ব এসে পরে। ছোট ছেলে হয়ত কলেজের পড়া তৈরি করছে। কলিংবেল শুনে সে যাবে না। কাজের বুয়াও যাবে না। সেও জরুরী কিছু কাজ করছে। পারাটা ভাজছে। একমাত্র কর্মহীন মানুষ হিসেবে বাড়ির কর্তাকেই যেতে হবে। বলাই বাহুল্য দরজা খুলবেন নেজামত সাহেব এবং চোখ মুখ কুঁচকে বলবেন—তুমি কে? কাকে চাও?
ফরহাদকে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলল আসমানী। নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করার জন্যেই সে মনে হয় এই ভোরবেলাতেই আসমানী রঙের একটা শাড়ি পরেছে। চুল টান টান করে মাথায় যে টাওয়েলটা পেঁচানো তার রঙও হালকা নীল। ফরহাদ মনে মনে ভাবল-মেয়েরা যদি জানতে গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচে সুন্দর লাগে—তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেত। বিউটি পার্লারে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে সাজিয়ে দেবার ব্যবস্থা থাকত।
আসমানী বলল, এই আমার চিঠি কখন পড়েছ?
রাত দুটায়।
চিঠিতে কি লেখা ছিল যখন এই চিঠি তোমার হাতে পড়বে তখনি তুমি এ বাড়িতে আসবে। লেখা ছিল না?
হুঁ।
আসনি কেন?
রাত দুটার সময় চলে আসব?
অবশ্যই।
তোমাদের ফ্ল্যাটবাড়ির দারোয়ান এত রাতে আমাকে কম্পাউণ্ডের ভেতরই আসতে দিত না। সে গেট খুলত না।
গেট না খুললেও ইন্টারকমে খবর পাঠাতে। আমি নিজে এসে তোমাকে নিয়ে যেতাম। তুমি মস্ত একটা সুযোগ নষ্ট করেছ।
কি সুযোগ?
আমার প্রতি তোমার ভালবাসা যে কত তীব্র তা প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালে। এ রকম সুযোগ আর পাবে না।
পাব।
উঁহু পাবে না। দুদিন পর আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে। বিয়ের পর তুমি আমার জন্যে যত পাগলামীই কর কোন পাগলামী এখনকার মত ভাল লাগবে না। নাশতা খেয়ে এসেছ?
না।
ভাল করেছ। মামার সঙ্গে নাশতা খাও। খেতে খেতে গল্প কর। তারপর তোমাকে নিয়ে আমি বের হব।
কোথায়?
বিয়ের শপিং করব। আমি আজ দশটা শাড়ি কিনব শাড়িগুলি তুমি পছন্দ করে দেবে। আর তোমার জন্য সার্ট পেন্ট এই সব আমি পছন্দ করে কিনব। মামা আমাকে এক হাজার ডলার দিয়েছেন। আচ্ছা শোন–ডলার কোথায় ভাঙ্গাতে হয় তুমি জান?
জানি।
আজ সারাদিনের জন্যে মামা আমাকে একটা গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছেন। মাইক্রোবাস। দুজন মাইক্রোবাসে সারাদিন ঘুরব। তোমার অফিস নেইতো?
অফিস আছে।
একদিন অফিসে না যাবার জন্যে নিশ্চয়ই তোমার চাকরি চলে যাবে না?
তা যাবে না। শুধু পাঁচ মিনিটের জন্যে একবার দেখা দিয়ে আসতে হবে।
পাঁচ মিনিট কেন তুমি আধঘন্টার জন্যে দেখা দিয়ে এসো। আমি গাড়িতে বসে কোক খাব আর তুমি আধঘন্টার জন্যে যাবে। হবে না?
হবে।
তোমাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন?
চিন্তিত না। রাতে ভাল ঘুম হয় নি।
আসমানী হাসতে হাসতে বলল—বিয়ের ডেট ফাইন্যাল হবার পর মেয়েরা রাতে এক ফোটা ঘুমুতে পারে না। ছেলেরা নাক ডাকিয়ে ভোস ভোস করে ঘুমায়। তোমার ব্যাপারে দেখি উল্টোটা হচ্ছে।
বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে নাকি?
ইয়েস স্যার। আগামী শুক্রবার।
আসমানী হাসছে। ফরহাদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর করে কোন মেয়ে হাসতে পারে তাই তার কল্পনায় ছিল না। বিয়ের পর আসমানীকে যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে প্রতিদিন ভোরে নাশতা খাবার আগে তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে তার সামনে বসে (উঁহু দাঁড়িয়ে) হাসতে হবে। হাসি থামতে না বলা পর্যন্ত হাসি থামানো যাবে না।
ফরহাদ বলল, তোমার মামা লোক কেমন?
ভয়ংকর টাইপ। একটু উনিশ বিশ করেছ কি তোমাকে কপ করে গিলে ফেলবে।
তোমার বাবার চেয়েও ভয়ংকর?
বাবা ভয়ংকর কোথায়? বাবা খুবই অর্ডিনারী টাইপ মানুষ। সামান্য বোকা। শিক্ষিত বোকা। শিক্ষিত বোকারা যেমন জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলেন। বাবাও তাই করেন। এটাই তার একমাত্র দোষ। রিটায়ার্ড করার পর অফিসে বোকামী করার সুযোগ পাচ্ছে না। যা করার বাসায় করছে।