মঞ্জুর গায়ে ইস্ত্রী করা সার্ট প্যান্ট। জুতা জোড়া চকচক করছে, কিন্তু তাকে দেখাচ্ছে কানা তাড়য়ার মত। যে কেউ তাকে দেখে বলবে—তার জীবনের উপর দিয়ে প্রবল ঝড় বয়ে গেছে।
মঞ্জু মাকে দেখে বড়বড় করে বলল, মা আমাকে বাঁচাও। দুই দিনের মধ্যে চল্লিশ হাজার টাকা জোগাড় করতে না পারলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে। সত্যি জানে মেরে ফেলবে। আমি যে এখানে আছি—এখানেও আমার পেছনে লোক লাগানো আছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
রাহেলা শুকনো গলায় বললেন, আমি টাকা পাব কোথায়?
তোমার কাছে টাকা আছে আমি জানি। দাদাজানের চন্দ্রহারটাও তোমার কাছে। এইগুলো দাও–আর তোমার মেয়ের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে আমাকে দাও।
তুই কি মদ খেয়ে এসেছিস? মদ ফদ কিছুই খাই নি। মদ খেতে পয়সা লাগে। মাগনা কেউ মদ খাওয়ায়। মা তুমি সময় নষ্ট করো না।
তোকেতো বললাম, আমার কাছে কিছুই নেই।
ধানাই পানাই করে লাভ হবে না মা। আমি টাকা না নিয়ে যাব না।
রাহেলা আতংক অস্থির হলেন। মঞ্জু বিশ্রী ভাবে তাকাচ্ছে। তার চোখ লাল। মুখ থেকে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে। সে স্থির হয়ে বসতেও পারছে না। এই বসছে, এই উঠে দাঁড়াচ্ছে। রাহেলা কেঁদে ফেললেন।
মঞ্জু বলল, কেঁদে লাভ হবে না মা। বললামতো টাকা না নিয়ে আমি যাব না।
চিলড্রেন্স রাইমস পার্ট টু বইটা পাওয়া গেছে
চিলড্রেন্স রাইমস পার্ট টু বইটা পাওয়া গেছে। ফরহাদ বই নিয়ে ছাত্রীর বাসায় গিয়েছে।
ছাত্রীর মা বই হাতে নিয়ে বললেন, থ্যাংকস। বই পাচ্ছিলাম না, পাচ্ছিলাম না এখন দু কপি হয়ে গেছে। আমি আমার এক বান্ধবীকেও এই বইটা জোগাড় করতে বলেছিলাম। সেও এনেছে। অসুবিধা নেই। ফরহাদ সাহেব আপনি যাবার সময় বই এর দাম নিয়ে যাবেন।
ফরহাদ বলল, দাম দিতে হবে না। আমি বই ফেরত দিয়ে দেব।
ফেরত নেবে?
অবশ্যই ফেরত নেবে।
আপনার ছাত্রী বলেছে সে আজ পড়বে না। তার না-কি মাথা ধরেছে। সব বানানো কথা। আপনি চেষ্টা করে দেখুন। যদি পড়তে না চায় আজ ছুটি দিয়ে দেবেন।
জ্বি আচ্ছা।
ফরহাদের ছাত্রীর বয়স ছয়। মেয়েটা এতই সুন্দর যে দেখলেই হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। সুন্দরী মেয়েরা গম্ভীর প্রকৃতির হয়। এও সে রকম। যখন তখন ভুরু কুঁচকে বড়দের মত তাকায়। মেয়েটির নাম লীলাবতী। অতি আধুনিক যুগের ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া মেয়ের জন্যে নামটা খুবই পুরানো। নিশ্চয়ই এই নাম। রাখার পেছনে কোন গল্প আছে। গল্পটা একদিন জেনে নিতে হবে। ফরহাদ বলল, তোমার মাথা ধরা কি খুব বেশি?
লীলাবতী চুল ঝাঁকিয়ে বলল, বেশি না অল্প।
আজ পড়তে ইচ্ছা করছে না?
না।
তাহলে থাক পড়তে হবে না। আমারো পড়াতে ইচ্ছা করছে না।
আজ আমাদের দুজনেরই ছুটি তাই না স্যার?
হ্যাঁ দুজনেরই ছুটি।
স্যার আপনারও কি শরীর খারাপ?
শরীর খারাপ না। মন খারাপ।
কেন?
আমার একজন অতি প্রিয় মানুষ ছিল। তার প্রচণ্ড শরীর খারাপ। সে চিকিৎসার জন্যে আজ দেশের বাইরে চলে গেছে। এই জন্যেই মনটা খারাপ। যাবার সময় তার সঙ্গে আমার দেখাও হয় নি। তোমার খুব প্রিয়জন কেউ যদি বাইরে চয়ে যায় তোমার মন খারাপ হবে না?
হবে।
লীলাবতী আজ উঠি?
লীলাবতী ঘাড় কাত করে সায় দিল। কিন্তু ফরহাদের উঠে যেতে ইচ্ছা করছে। বাচ্চা এই মেয়েটার সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছা করছে। তাকে বলা যেতে পারে—লীলাবতী আমি যে সার্টটা পরে আছি এটা সুন্দর না। কি সুন্দর লাল রঙ আজ রোববারতো কাজেই আজকের জন্যে এই সার্ট। অসুস্থ যে মানুষটার কথা আমি বললাম, সে সপ্তাহের সাতদিনের জন্যে সাতটা সার্ট কিনে দিয়েছে। তার নাম হল আসমানী। দেখিতো তোমার কেমন বুদ্ধি। আসমানীর ইংরেজি কি বল।…
ফরহাদ উঠে দাঁড়াল। এখন কোথায় যাবে সে বুঝতে পারছে না। আসমানী বিহীন শহরটা কেমন দেখার জন্যে সারাদিন ঢাকা শহরে হেঁটে বেড়ানো যেতে পারে। হাঁটতে হাঁটতে কোন আইসক্রীমওয়ালার সঙ্গে দেখা হলে আইসক্রীম কিনতে হবে। আগে সে যখন আসমানীর সঙ্গে হাঁটতো, আসমানী আইসক্রীম খেতো। সে খেতো না। আসমানী খুব রাগ করতোলীলাবতী মেয়েটার মত ভুরু কুঁচকে বলত—তুমি এমন কেন বলত? কি হয় আমার সঙ্গে একটা আইসক্রীম খেলে। দুজন বয়স্ক মানুষ বাচ্চাদের মত আইসক্রীম খেতে খেতে যাচ্ছে মজার দৃশ্য না? না, আজ আইসক্রীম খেতে হবে।
শুধু আইসক্রীম খেলে হবে না আজ নাপিতের দোকানে গিয়ে চুলও কাটতে হবে।
আসমানীর খুব শখের দৃশ্য না-কি ছেলেদের চুল কাটার দৃশ্য। সে বলত—আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের বাসার সঙ্গেই ছিল একটা নাপিতের দোকান। নাপিত কচ কচ করে চুল কাটতো দেখতে আমার এত মজা লাগত। এখনো মজা লাগে। আমরা মেয়েরা মাথার লম্বা চুল কাটতে পারি না বলে ছেলেদের লম্বা চুল কাটা হচ্ছে দেখে মজা পাই। আমি কি ঠিক করেছি জান? চুল কাটা শিখে নেব। তোমার চুল যতবার লম্বা হবে ততবার কেটে দেব। চুল কাটা শেষ হবার পর নাপিতদের মত মাথা বানিয়ে দেব।
ফরহাদের কাছে মনে হচ্ছে সে সারাজীবন খুব পরিশ্রম করেছে। নিঃশ্বাস ফেলার মত সময়ও তার ছিল না। আজ ছুটি পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড কর্ম ব্যস্ত এ শহরে আজ তার কাজ নেই। আজ সারাদিন রাস্তায় হাঁটা। পার্কে বসে থাকা। নাপিতের দোকানে গিয়ে চুল কাটানো, মাথা মালিশ করানো। পুরানো বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা করা যেতে পারে। অফিসে চলে যাওয়া যায়। ক্যাশিয়ার সিদ্দিক সাহেবের সঙ্গে বসে এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। বিদেশে তার মেয়েটা কেমন পড়াশোনা করছে সে সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। দেশের পলিটিকস নিয়েও কথা বলা যায়। কথা বলার বিষয় বস্তুর কোন অভাব নেই।