রাণী রাতের খাওয়া শেষ করে তার ঘরে গিয়েছে। দাঁত মাজবে। মুখে ফেস ক্রিম দিয়ে গল্পের বই নিয়ে বিছানায় যাবে। গল্পের বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পরবে। রাতে আবার যখন ঘুম ভাঙ্গবে তখন বাতি নেভাবে। এই হল পরিকল্পনা। তখন জাহানারা ঢুকল। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, এই তোর কাছে রিলাক্সেন জাতীয় কোন ট্যাবলেট থাকলে দেতো।
ভাবটা এ রকম যেন ট্যাবলেট নিয়েই ভাবী চলে যাবে। তার এক মুহূর্ত দাঁড়াবার সময় নেই। অথচ রাণী খুব ভাল করে জানে জাহানারা কোন প্ল্যান নিয়ে এসেছে। এবং এসেছে দীর্ঘ সময় কাটাতে। রাণী ভাবীর সঙ্গে রাগারাগি করার জন্যে মনে মনে তৈরী হল। সে মুখটা হাসি হাসি করে ফেলল। এবং এক ফাঁকে দেখেও ফেলল তার হাসিমুখ আয়নায় কেমন দেখাচ্ছে। সুন্দর দেখাচ্ছে তবে ঠোটে লিপস্টিক থাকলে আরো সুন্দর দেখাতো। সে হাসতে হাসতে বলল, ভাবী এ জাতীয় কোন ট্যাবলেট আমার কাছে নেই! ভিটামিন ট্যাবলেট আছে অ্যারিস্টোভিট বি। ওটা দেব।
ভিটামিন ট্যাবলেট দিয়ে আমি কি করব?
খাবে। মানুষের শরীরে ভিটামিন দরকার আছে না। তোমারতো আরো অনেক বেশি দরকার। এত টেনশান নিয়ে বাস করছ।
আমার কিসের টেনশান?
রাণীর মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হল। সে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। তার পরিকল্পনা হচ্ছে কথা বলার এক ফাঁকে সে চট করে ঠোটে লিপস্টিক দিয়ে দেবে। এমন ভাবে দেবে যেন ভাবী হঠাৎ গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিকের হাসি দেখব। রাণী ড্রেসিং টেবিলের সামনের চেয়ারে বসেছে। সে বসেছে জাহানারাকে পেছনে রেখে। জাহানারা এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল এখন বসল। তার অর্থ হচ্ছে জাহানারা বেশ কিছুক্ষণ থাকবে।
জাহানারা বলল, তোর কথা ক্লিয়ার কর। আমার কিসের টেনশান?
তোমার বড় ভাইয়ের বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে টেনশান।
আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাইয়ার বিয়ের কি জটিলতা?
জাহানারা জবাব দিল না। আয়নায় তার লাল ঠোটের হাসি দেখে নিজেই মুগ্ধ হল।
তুই এই লিপস্টিক কখন দিলি।
রাণী খিলখিল করে হাসল। তার হাসি দেখে মনে হবার কোনই কারণ নেই যে এই মুহূর্তে রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
হাসছিস কেন বল ভাইয়ার বিয়ের কি জটিলতা?
এক সময় আমি শুনলাম তাঁর সঙ্গে আমার বিয়ের কথা প্রায় ফাইন্যাল। বিয়ের বাজার করতে তুমি কোলকাতা যাবে এবং আমাকেও নিয়ে যাবে এরকম কথাও হল। আমি খুব খুশি—তোমার ভাইয়া ভ্যাবদা ধরনের মানুষ। এরা বর হিসেবে ভাল হয়। ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার মত সারাজীবন স্ত্রীর থলির ভেতর থাকে। মাঝে মধ্যে থলির ভেতর থেকে মাথাটা বের করে আবার সুড়ৎ করে ঢুকে পরে…।
কি ভ্যার ভ্যার করছিস। আসল কথা বল।
আসল কথা হচ্ছে আমি যখন বিয়ে নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত। বাসর রাতে বরের সঙ্গে কি কথা টথা বলব সে সব নিয়ে রিহার্সেল দিচ্ছি তখন হঠাৎ শুনি তিনি অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে রওনা হয়েছেন। আকাশী না-কি ফাকাশী এই রকম নাম।
জাহানারা গম্ভীর গলায় বলল, তুই যেমন হঠাৎ করে ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনেছিস। আমরাও হঠাৎ করে শুনেছি। বাসার কেউ জানত না। ভাইয়া কাউকে কিছু বলে নি। আসলে ওরা ট্রিকস করে অসুস্থ একটা মেয়েকে পার করতে চেয়েছিল। মেয়ের এক মামা মহাচালবাজ। ভাইয়া সহজ সাধারণ মানুষ, ঐ ধুরন্ধরের চাল কিছু বুঝতে পারে নি। ফাদে পড়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে। বিয়ের ব্যাপারটা জানাজানি হলে সমস্যা হবে এই জন্যে ওরা এমন চাল চেলেছে যে ভাইয়া কাউকে জানায়ও নি। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বিয়ে ঠিকই ভেঙ্গেছে।
রাণী বলল, শুধু যে ভেঙ্গেছে তাই না। কনের এমন অসুখ সে যে কোনদিন বিয়ের শাড়ি পরবে সেই আশাও নেই। ঠিক না ভাবী?
ঠিকতো বটেই। মেয়ের ক্যানসার হয়েছে। বড়জোড় এক দু বছর।
রাণী হাসতে হাসতে বলল, তাহলে কি আমি এক দু বছর অপেক্ষা করব? এত দিন অপেক্ষা করাওতো মুশকিল ভাবী। দেখা যাবে অন্য কোন মেয়ের ধুরন্ধর মামা তোমার ভাইয়াকে ভজিয়ে ভাজিয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবে। সেই মেয়েও অসুস্থ–হাঁপানীর রোগী। অসুস্থ মেয়েকে ট্রিকস করে পার করে দেয়া।
তোর হয়েছে কি হঠাৎ এইসব কথা আমাকে বলছিস কেন?
রাণী কিছুক্ষণ খিলখিল করে হাসল। এমন হাসি যে তার প্রায় হেঁচকি উঠে গেল। হাসি থামিয়ে বলল—একটা কাজ করলে কেমন হয় ভাবী। চল আমরা আক্তারী বেগমকে বলি যেন উনি একটা স্পেশাল দোয়ার ব্যবস্থা করেন যাতে আকাশী ম্যাডামের যন্ত্রণার দ্রুত সমাপ্তি হয়। তিনি যেন মাস তিনেকের মধ্যে সিন থেকে বিদেয় হন। আর আমরা ধুমধাম করে বিয়েটা করতে পারি।
হঠাৎ করে আমাকে এইসব কথা বলার কারণ কি?
কারণ হচ্ছে তুমি এই লাইনে চিন্তা করছ।
মেয়েটা মরে যাক আমি এই চিন্তা করছি?
তুমি চিন্তা করছ যেন তোমার ভাইয়ার সঙ্গে আমার ভেঙ্গে যাওয়া বিয়েটা আবার জোড়া লাগে।
পাগলের মত এইসব কি বলছিস?
খুবই সত্যি কথা বলছি। তুমি নিজেও জান এটা সত্যি কথা। জান না?
না জানি না।
মাঐমা হঠাৎ করে আমাকে একটা শাড়ি উপহার দিয়েছেন।
আমার মা তোকে একটা শাড়ি দিতে পারেন না?
উনি বলেছেন ফরহাদ ভাই শাড়িটা আমার জন্যে কিনে এনেছেন।
মাতো আর বাজারে গিয়ে শাড়ি কিনবে না। তার যা কেনাকাটা তা ভাইয়াকে দিয়েই করাতে হয়।
আমি শাড়ির প্যাকেট খুলে দেখি—শাড়িটা তোমার ভাই তার হবু স্ত্রী আকাশীর জন্যে কিনেছে।
শাড়িতে বুঝি তার নাম লেখা ছিল?