আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান
কবিতা ছাপিয়ে কাজের মেয়ের গলা পাওয়া গেল। আফা আপনে এইখানে, আমি সারাবাড়ি খুঁজতেছি। এত ঘটনা যে ঘটছে আমি কিছুই জানি না। ঝড়-তুফান যে হইছে হেই খবরও নাই। আফা মার্ডার নাকি হইছে?
হুঁ।
কেমন দেশে বাস করি দেখছেন আফা? পথেঘাটে মার্ডার। চা খাবেন আফা।
খেতে পারি।
গত কাইলই লোকটারে দেখছি চায়ের কাপে টোস্ট বিসকুট ড়ুবায়া চা খাইতেছে—আইজ মার্ডার। বারান্দায় বইসা আছেন কেন আফা, বৃষ্টির ছিট আসতাছে।
আসুক তুমি চা নিয়ে এসো।
সনজুদের বাসার দরজা খোলা। ভেতরে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। কেউ যেন সুইচ টিপে বাতি জ্বালাল। ঐ বাসায় কেউ নেই। সবাই হাসপাতালে। তাহলে বাতি কে জ্বালাবে? ঘরের ভেতর থেকে কুচকুচে কালো রঙের একটা বিড়াল এসে বারান্দায় আলোতে বসেছে। এই বিড়ালটাকে তরু আগে দেখেনি। মনে হচ্ছে ভৌতিক বেড়াল। বিড়ালটাই কি ঘরের ভেতরের বাতি জ্বালিয়ে বারান্দায় এসে আলোতে বসেছে? এডগার এ্যালেন পোর বিড়াল?
আফা! চা নেন। মোবাইলটা ধরেন। একটু পরে পরে বাজতাছে।
তরু চায়ের কাপ এবং মোবাইল হাতে নিল। কাজের মেয়ে বলল, কারেন্ট আসছে আফা। বারিন্দার বাতি জ্বালায়ে দিব?
তরু বলল, না।
সে চায়ের কাপে চুমুক দিল। বিড়ালটা তাকাচ্ছে তার দিকে। তরু ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। বেড়ালটাকে ঘিরে যে রহস্যময়তা তৈরি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে। কারেন্ট এসেছে বলেই সনজুদের ঘরের বাতি জ্বলে উঠেছে। বেড়ালের এখানে কোনো ভূমিকা নেই। তরুর মোবাইল টেলিফোন আবার বেজে উঠেছে।
সনজু হবার সম্ভাবনী। হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটল তার বর্ণনা দেবার জন্যে সনজু নিশ্চয়ই ব্যস্ত হয়ে আছে। হত্যাকারী মৃতদেহের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। মুন্সিগঞ্জের হেমন্ত হয়তো হাসপাতালের সামনেই হাঁটাহাঁটি করছে। সনজু এক পর্যায়ে হেমন্ত বাবুকেও টেলিফোনে ধরিয়ে দিতে পারে।
তরু টেলিফোনের বোতাম টিপে বলল, হ্যালো কে?
ওপাশে ধরেছেন লেখক স্যার। তিনি থমথমে গলায় বললেন, তরু! তুমি এই কাজটা কেন করলে?
তরু বলল, কোন কাজটা স্যার?
কোন কাজটা তুমি জানো না? স্টুপিড মেয়ে।
গালাগালি করছেন কেন স্যার। লেখকের মুখে গালাগালি মানায় না। লেখকরা মিষ্টি করে কথা বলবেন। স্যার আপনি কল্পনা করুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কারো উপর রাগ করে বললেন—এই শালা। দূর হ! তখন কেমন লাগবে?
তরু! তুমি অতিরিক্ত চালাক সাজার চেষ্টা করছ। তোমাকে দোষ দিচ্ছি। এই সময়কার তরুণী মেয়েদের জেনারেল স্টাইল অতিরিক্ত চালাকি করা। তারা বন্ধুবান্ধবদের সামনে অবলীলায় বলবে—পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা কর। আমি মুততে গেলাম। বলে বাথরুমে ঢুকবে এবং ভাববে অতি স্মার্ট একটা কাজ করা হলো।
ঠিক বলেছেন স্যার।
শোনো তরু! আমাকে উদ্ধার করো। আমার স্ত্রী যে কি সমস্যা তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে কি ভয়ংকর কাজকর্ম করবে বা তোমার কল্পনাতেও নেই। আমার অনুরোধ তুমি আমাকে উদ্ধার করো।
কিভাবে উদ্ধার করব?
আমার স্ত্রীকে বলবে সবই তোমার সাজানো। তুমি একবার আমাকে প্রেম নিবেদন করেছিলে, আমি তখন খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম বলেই এইভাবে শোধ নিয়েছ।
বললেই বিশ্বাস করবেন?
অবশ্যই বিশ্বাস করবে। সে বিশ্বাস করার জন্যেই অপেক্ষা করছে। বিশ্বাস করা ছাড়া তার আর কোনো সেকেন্ড অপশন নেই।
স্যার আমি আজ দিনের মধ্যেই বলব।
থ্যাংক য়্যু। ফ্রম মাই হার্ট থ্যাংক য়্যু।
তরু বলল, স্যার আপনার সঙ্গে আমি যা করেছি তার জন্যে এখন লজ্জা লাগছে। আপনি চাইলে আমি কিছু নিরিবিলি সময় আপনার সঙ্গে কাটাব। এবার আর ম্যাডাম উদয় হবেন না। ঐ হোটেলেও যেতে পারি। আপনার নিশ্চয়ই বুকিং আছে। বুকিং আছে না স্যার?
হুঁ।
তরু গলা নামিয়ে বলল, ম্যাডাম স্বপ্নেও ভাববেন না যে ঘটনার পরদিনই আবার আপনি হোটেলে যাবেন এবং কাউকে ডেকে পাঠাবেন। স্যার আজ কি আসব?
তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না।
স্যার বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর। আপনি ইশারা করলেই আমি আসব।
আগে তুমি তোমার ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঠিক করে তারপর দেখা যাবে।
যদি কথা বলে ঠিক করতে পারি তাহলে কি আসব? কখন আসব বলুন?
বিকালের দিকে আসতে পারো If You really want that.
বিকাল মানে কখন? সময়টা বলুন।
হঠাৎ তুমি এত ব্যস্ত হলে কেন?
আপনার উপর যে অন্যায়টা আমি করেছি তার প্রতিকার করতে চাই। তাছাড়া স্যার, আমি আপনার চোখে তৃষ্ণা দেখেছি। লেখকের চোখের তৃষ্ণা খুব খারাপ জিনিস। চোখে তৃষ্ণা নিয়ে লেখক লিখতে পারেন না।
তুমি চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে চলে এসো।
থ্যাংক য়্যু স্যার।
তরু টেলিফোন নামিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশে ভোরের আলো ফুটছে। তরু আগ্রহ নিয়ে ভোর হওয়া দেখছে।
খালেক বিকালের মধ্যে সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেললেন। ডাক্তারের রিপোর্ট, সুরতহাল, কবর দেয়ার জন্যে ওসি সাহেবের অনুমতি সব জোগাড় হয়ে গেল। আজিমপুর গোরস্থানে কবর দিয়ে তিনি বাসায় ফিরে মোটামুটি হাসিমুখে তরুকে বললেন, কড়া করে এক কাপ চা দে তো মা। চা খেয়ে গরম পানিতে হেভি গোসল দেব।
তরু বলল, বাবা! তোমাকে আনন্দিত মনে হচ্ছে কেন?
খালেক বললেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু কত ভয়াবহ এটা জানিস? নানান ফ্যাকড়া। পুলিশ থাকে টাকা খাওয়ার ধান্ধায়। তাদের সামাল দেয়া বিরাট ব্যাপার।