চিন্তা শেষ করার আগেই সুনজু উপস্থিত হলো। তরু বলল, ঘটনা তো ঘটে নাই।
সনজু বলল, আগামী বুধবার ঘটবে। আজ হারুন ভাইয়ের একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। উনার বড় বোনের মেয়েটা খাট থেকে পড়ে মাথায় ব্যথা পেয়েছে। তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। বাচ্চাটার বয়স দেড় বছর। হারুন ভাই তাকে খুবই পছন্দ করেন।
তরু বলল, বুধবারে ঘটনা ঘটবে তো?
অবশ্যই। উনাকে কিছু খরচও দিয়েছি। এক হাজার টাকা দিয়েছি। অনোর কাছ থেকে উনি অনেক বেশি টাকা নেন। আমি বন্ধু বিধায় নামমাত্র টাকা নিয়েছেন। আপনার কোনো কাজ লাগলে বলবেন করায়ে দেব।
তরু হাই তুলতে তুলতে বলল, ক্ষুর চালাচালির কাজ লাগবে না তবে অন্য একটা কাজ করে দিলে ভালো হয়।
বলেন কি কাজ। কাল দিনের মধ্যে করে ফেলব।
একটা নকল ছবি বানিয়ে দিতে হবে। কম্পিউটারে খুব সহজেই কাজটা করা যায়। আমি আমার একটা ছবি দিব আর ওসমান চাচার একটা ছবি দেব। দুটা ছবি মিলিয়ে এমন করতে হবে যে নকল ছবিটাতে দেখা যাবে আমি ওসমান চাচার কোলে বসে আছি। পারবে না?
সনজু জবাব দিল না। তাকিয়ে রইল। তরু বলল, আমি অনেকগুলো ছবি দেব যেটা কাজে লাগে। সকালে এসে ছবি নিয়ে যেও।
বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর
বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর থেকে খালেক মেয়েকে তরু ডাকছেন না। ভালো নামে মিষ্টি করে ডাকছেন–মা, শামসুন নাহার। মেয়ের সঙ্গে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিচ্ছেন। বাইরে কাজে গেলে টেলিফোন করছেন। ঘুমুতে যাবার আগে মেয়ের ঘরে বসে পান খাচ্ছেন। তরু নিজেও বাবার সঙ্গে পান খাচ্ছে। তরু রাতের পান খাওয়ার একটা নামও দিয়েছে—নৈশকালিন পান উৎসব।
পান উৎসবে কথাবার্তা যা হয় সবই বিয়ে নিয়ে। খালেকের মাথায় মেয়ের বিয়ের নানান পরিকল্পনা। পরিকল্পনা নিয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে তার ভালো লাগে। তখন তাঁকে যথেষ্ট উত্তেজিত মনে হয়। যদিও শুরু বেশিরভাগ পরিকল্পনাই বাতিল করে দেয়।
শামসুন নাহার, মা চল বাপ-বেটি মিলে কোলকাতা যাই।
তরু বলল, এই গরমে কোলকাতা যাব কেন?
বিয়ের বাজার করব। তোর শাড়ি, জামাইয়ের জন্যে পাঞ্জাবি। স্যুটের কাপড়।
শাড়ি-পাঞ্জাবি, স্যুটের কাপড় সবই দেশে পাওয়া যায়। খামাখা কোলকাতা যাবার দরকার কি?
সবাই তো যায়।
আমি এর মধ্যে নাই।
না গেলে দেশেই কেনাকাটা শুরু করে দে। সময় তো বেশি নাই। কাল থেকে শুরু কর। কাল দিন ভালো—বৃহস্পতিবার।
তরু বলল, আচ্ছা। শুরু করব।
বিয়ের রান্নার জন্যে সিদ্দিক বাবুর্চিকে খবর দিয়েছি। তার মতো ভালো কাচ্চি পাক-ভারত উপমহাদেশে কেউ রানতে পারে না।
কাচ্চি বিরানি খাব না বাবা।
কি খেতে চাস?
খাসির রেজালা–মুরগির রোস্ট।
গরুর ঝাল মাংস থাকবে?
থাকুক।
কিছু বুড়ো মানুষ আছে—বিয়ে বাড়ির রেজালা পোলাও খেতে চায় না। তাদের জন্যে সাদা ভাত, সজি, ডাল, মুরগির ঝোল। ঠিক আছে না?
ঠিক আছে।
বাচ্চাদের জন্যে চায়নিজ আইটেম করব? বাচ্চারা চায়নিজ পছন্দ করে। ফ্রয়েড রাইস, চায়নিজ আর স্প্রিং ফ্রায়েড দিবেন।
আইসক্রিম থাকবে না?
সবার জন্যে থাকবে না। শুধু বাচ্চাদের জন্যে। সবাইকে আইসক্রিম খাওয়া পুষাবে না।
খালেক নিজেই দশ বারোটা দাওয়াতের কার্ড দেখে একটা কার্ড ছাপিয়ে এনেছে। কার্ডের ছবি একটা ঘড়ি পরা ছেলের হাত সোনার চুড়ি পরা একটা মেয়ের হাত ধরে আছে। দুজনের হাত থেকে ফুলের একটা মালা ঝুলছে। এখানেই শেষ না, দুই হাতের উপর রঙিন প্রজাপতি উড়ছে। প্রজাপতির ডানায় লেখা শুভ বিবাহ।
আনিস নামের যুবকটির সঙ্গে একদিন তরু চায়নিজ খেয়ে এসেছে। সব হবু স্বামী স্ত্রীকে মুগ্ধ করার চেষ্টায় থাকে। আনিস তার ব্যতিক্রম না। সে রীতিমত কুইজ প্রোগ্রাম শুরু করল।
তরু আফগানিস্তান সম্পর্কে কি জানো?
তেমন কিছু জানি না।
আফগানিস্তান হচ্ছে এমন এক দেশ যাকে কোনো বিদেশি দেশ দখল করতে পারে নি।
তরু বলল,ও রকম দেশ তো আরো আছে। চীন এবং আবিসিনিয়া। এই দুটি দেশকেও কেউ দখল করতে পারে নি।
আনিস বলল, কে বলেছে তোমাকে?
পঙ্গু বলেছে।
পঙ্গুটা কে?
ছাদে যিনি থাকেন। পঙ্গু চাচা।
তাকে তুমি পঙ্গু চাচা ডাকো না-কি?
তরু বলল, যে পঙ্গু তাকে পঙ্গু ডাকব না?
খাবার চলে এসেছে। আনিস আবারো কুইজ প্রোগ্রামে চলে গেল।
তরু চায়নিজ রান্নায় বিশেষত্ব কি জানো?
তরু বলল, বিশেষত্ব হচ্ছে ঠাণ্ডা হলে এই খাবার খাওয়া যায় না।
আনিস বলল, ভালো ধরেছ।
তরু বলল, আপনি কি বলতে পারবেন ঠাণ্ডা হলে কেন এই খাবার খাওয়া যায় না?
না।
তরু বলল, চায়নিজ খাবার মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট নামের লবণ দেয়া হয়। ঠাণ্ডা হলে লবণটা জমাট বেঁধে যায়। খাবারের স্বাদ নষ্ট করে দেয়।
আনিস বলল, কে বলেছেন? তোমার পঙ্গু চাচা?
হুঁ।
তিনি কি তোমার টিচার না-কি?
জ্ঞানী মানুষ সবারই টিচার। আপনি তার কাছে গেলে আপনাকেও তিনি অনেক কিছু শেখাবেন।
আনিস বলল, বুড়োটার নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবে না। বুড়োটাকে কেন জানি সহ্য করতে পারছি নি। বুড়ো ছাড়া অন্য যে কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করো। তোমার একটা লেখা আনতে বলেছিলাম এনেছ?
এনেছি। গল্প এনেছি। গল্পের নাম সিন্দাবাদের দৈত্য।
রূপকথার গল্প?
আধুনিক রূপকথার গল্প। মুখে বলব?
বলো।
তরু বলল, অল্পবয়েসি একটা মেয়ে একজন বৃদ্ধের প্রেমে পড়েছে। কঠিন প্রেম। মেয়েটা বুদ্ধিমতী সে বৃদ্ধকে বিয়ে করবে না। কিন্তু প্রেমের কারণে বৃদ্ধটাকে ঘাড় থেকে ফেলতেও পারছে না। বুড়োটা এখন তার কাছে সিন্দাবাদের দৈত্য। গল্পের আইডিয়া সুন্দর না?