রান্না কি?
কই মাছ।
আরো গুছিয়ে বললাকৈ মাছ কিভাবে রান্না হয়েছে?
মটরশুঁটি দিয়ে।
আরো গুছিয়ে বলো। ঝোল ঝোল করে রান্না, না-কি পাতলা করে?
সফুরা হেসে ফেলল। তরু বলল, হাসছ কেন?
সফুরা বলল, আপনার কথাবার্তা শুনলে মাঝে মধ্যে হাসি আসে।
আমার কথাবার্তা শুনে কখনোই তো তোমাকে হাসতে দেখি না। আজ প্রথম দেখলাম। সামনে থেকে যাও, টেবিলে খাবার দাও।
টেলিফোন বাজছে। মোবাইল টেলিফোনের অনেক মজার মজার ব্যাপার আছে। রিং টোনে নিজের পছন্দের মিউজিক ছাড়াও কথাবার্তাও ঢুকানো যায়। তরুর মোবাইল যখন বাজে তখন তরুর গলা শোনা যায়। এই তরু এই। সে নিজেই নিজেকে ডাকে। এই রিং টোন সে শুধু তার বাবার জন্যে রেখেছে। অন্যদের জন্যে সাধারণ রিং টোন। তরু টেলিফোন ধরে বলল, বাবা! বাসায় আসবে না?
দেরি হবে। ঝামেলায় আছি। তুই খেয়ে নে। আমার জন্যে জেগে থাকিস না।
আচ্ছা।
বড় বড় কৈ মাছ এনেছিলাম। ঠিকমত বেঁধেছে কি-না কে জানে। যত্ন করে যে মাছই কিনি ওরা নষ্ট করে ফেলে। ওসমান সাহেবকে দুইটা মাছ পাঠিয়ে দিস।
আচ্ছা।
নিজে নিয়ে যাবি। কাজের মেয়েকে দিয়ে পাঠাৰি না। এটা অভদ্রতা।
সনজুকে দিয়ে পাঠিয়ে দেই?
ঠিক আছে। ভালো কথা মনে করেছিস সনজুকে একটা মাছ পাঠিয়ে দে। বাজার করার সময় সঙ্গে ছিল।
ওদের বাসায় মানুষ তিনজন, একটা মাছ পাঠাব কি ভাবে? ওকে বরং এখানে ডেকে খাইয়ে দেই।
বুদ্ধি খারাপ না। মা, টেলিফোন রাখি?
তরু বলল, বাবা শোনো, যত রাতই হোক আমি জেগে থাকব।
বললাম তো দরকার নাই।
তরু বলল, দরকার না থাকলেও জেগে থাকব।
বাবার সঙ্গে কথা শেষ করে সে সনজুকে খবর পাঠাল। রাতে খেতে বলল। দুটা কৈ মাছ ওসমান সাহেবকে দেয়ার কথা। তার নিজের নিয়ে খওয়ার কথা। সে সফুরাকে পাঠাল। সঙ্গে ছোট্ট চিঠি–
দুটা কৈ মাছ পাঠালাম। এরা স্বামী-স্ত্রী। অর্থাৎ একটি
পুরুষ মাছ একটি মেয়ে মাছ। ইতি তরু।
সনজু খেতে বসেছে। তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। সে চোখ তুলে তাকাচ্ছেও না।
সনজু বলল, আমি কৈ মাছ খাই না।
তরু বলল, কেন খাও না?
কাটা বাছতে পারি না। এই জন্যে খাই না।
তরু বলল, আমি কাঁটা বেছে দেই?
সনজু ভীত গলায় বলল, না!
তরু বলল, তুমি বাচ্চা ছেলে না। আমার সামনে কাটা বাছবে এবং খাবে। গলায় কাঁটা লাগলে লাগবে।
আচ্ছা।
সনজু কৈ মাছের কাঁটা বাছছে, তরু তাকিয়ে আছে। তরু লক্ষ করল সনজুর হাত সামান্য কাঁপছে। তরু বলল, তুমি আমার বাবার কৈ মাছ খাওয়া দেখেছ?
না।
দেখার মতো দৃশ্য। বাবা পুরো মাছটা মুখের ভেতর ঢুকিয়ে মাথা ধরে টান দেন। পুরো কাঁটাটা চলে আসে। কাঁটাগুলি তিনি ফেলে দেন না। মাথাসুদ্ধ সব কাঁটা মুখে দিয়ে চিবাতে থাকেন। আমাদের বাসায় কোনো বিড়াল থাকলে এই দৃশ্য দেখে হার্টফেল করত।
সনজু বলল, কেন?
তরু বলল, বিড়ালদের হার্ট খুব দুর্বল থাকে। কাউকে কাঁটা খেতে দেখলে তারা হার্টফেল করে।
এটা জানতাম না। নতুন জিনিস জানলাম।
তরু বলল, বোকার অভিনয় আমার সামনে না করলে ভালো হয়। তুমি ঠিকই বুঝেছ আমি কেন বলেছি, বিড়াল হার্টফেল করত। বুঝনি?
বুঝেছি।
বোকা সাজলে কেন?
দুলাভাইয়ের সামনে সবসময় বোকা সেজে থাকতে থাকতে এ রকম হয়েছে।
বোকা সাজায় লাভ কিছু হচ্ছে?
হচ্ছে।
কি লাভ হচ্ছে?
এখন দুলাভাই আমাকে হিসাবে ধরেন না। আমার সামনেই গোপন টেলিফোনগুলি করেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
গোপন টেলিফোন মানে কি?
একটা মেয়েকে তিনি প্রায়ই হোটেলে নিয়ে যান। মেয়েটার নাম নীলু।
তোমার আপা কিছু জানেন না?
না।
তুমি তোমার আপাকে কিছু জানাবে না?
না। আমিই ব্যবস্থা নিব।
কি ব্যবস্থা নিবে ঠিক করেছ?
হ্যাঁ।
আমাকে বলবে?
না।
যা করার একা একাই করবে?
একা করব না। আমার কিছু আজেবাজে বন্ধু-বান্ধব আছে। তারা সাহায্য করবে।
আজেবাজে মানে কি? কি ধরনের আজেবাজে?
খুবই খারাপ ধরনের। ভিডিওর দোকানে কাজ করে। ফেনসিডিল খায়।
তুমি ওদের সঙ্গে জুটলে কি ভাবে?
সনজু জবাব দিল না। সে একমনে খাচ্ছে। তরু বলল, কৈ মাছ খেতে কেমন লাগছে?
ভালো।
তোমাদের বাসায় আজ কি রান্না হয়েছে?
রান্না হয় নি।
কেন?
দুলাভাই আপাকে মারধোর করেছে। এইজন্যে রান্না হয় নি। আমি দুলাভাইয়ের জন্যে তেহেরি কিনে এনেছি। দুলাভাই তাই খেয়েছেন।
তোমার আপা কিছু খান নি?
ভাই খেয়হয় নি। আমি
না।
আপাকে ফেলে একা আরাম করে খাচ্ছ খারাপ লাগছে না?
না।
তোমার দুলাভাইকে শিক্ষা দেবার পরিকল্পনায় আমার সাহায্য লাগলে বলবে।
সাহায্য লাগবে না। খবিসটাকে আমি নেংটা করে রাস্তায় হাঁটাব।
এইটাই শাস্তি?
আরো আছে।
আর কি?
সেটা আপনাকে বলা যাবে না। যখন হবে তখন দেখবেন।
উনি যদি টের পান শাস্তি প্রক্রিয়ায় তুমি যুক্ত তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছ?
দুলাভাই টের পাবে না। তার ধারণা আমি মহাগাধা।
তুমি মহাগাধা না?
এক সময় ছিলাম। এখন না।
ফেনসিডিল খেয়ে বুদ্ধি খুলেছে?
আমি ফেনসিডিল খাই আপনাকে কে বলল?
তোমার বন্ধুরা যখন খায় তখন তুমিও খাও।
মাঝে মধ্যে খাই।
আজ খেয়েছ?
হুঁ। সন্ধ্যাবেলা খেয়েছি।
কতটুকু খেয়েছ?
বেশি ছিল না। তিন বোতল চারজন ভাগ করে খেয়েছি।
আমার জন্যে এক বোতল নিয়ে এসো খেয়ে দেখব।
সনজু খাওয়া বন্ধ করে চোখ তুলে তাকাল। তরু বলল, ছেলেরা নেশা করলে মেয়েরাও করতে পারে। পারে না?
না।
না কেন? তোমরা দুনিয়ার হুজ্জত করবে আর চাইবে বাড়ির মেয়ের মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকবে। তসবি টানবে। তা কি ঠিক? অবশ্যই আমাকে এক বোতল ফেনসিডিল এনে দেবে।