আমি বললাম, স্যার দৈহিক সম্পর্ক কি পবিত্রঃ।
তিনি বললেন, অবশ্যই। এই সম্পর্কের কারণে নতুন একটি প্রাণ সৃষ্টি হয়। যে কারণে একটি প্রাণের সৃষ্টি সেই কারণ অপবিত্র হবে কেন?
আমি বললাম, স্যার সবধরনের দৈহিক সম্পর্কই কি পবিত্র?
তিনি বললেন, আমি সে রকমই মনে করি।
এই কথাটা বলেই লেখক সাহেব কিন্তু ফেঁসে গেলেন। কিংবা বলা যায় তিনি আমার পাতা ফাঁদে পা দিলেন। কারণ আমি অত্যন্ত বিনীত গলায় বললাম, আচ্ছা স্যার মনে করুন আপনার স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে গর্ভবতী হয়ে গেলেন। নতুন একটি প্রাণ সৃষ্টি করলেন। এটা কি পবিত্র?
লেখক স্যার কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললেন, তোমার মাথায় কিছু চিন্তাভাবনায় গিট্টু লেগে গেছে। গিট্টু ছুটাতে হবে।
গিট্টু কে ছুটাবে?
আপনি? চেষ্টা করে দেখব।
লেখক স্যার আমার গিট্টু ছুটানোর অপেক্ষায় আছেন। তিনি এখনো জানেন না আমি কঠিন চিজ। আমি তাঁর মাথায় এমন পিটু লাগিয়ে দেব যা তিনি কোনোদিন ছুটাতে পারবেন না। আমি তার প্রেমে পড়েছি এ রকম একটা লেখা খেলব। সুন্দর সুন্দর চিঠি লিখব। গিফট কিনে পাঠাব। তারপর? তারপরেরটা তারপর।
হয়তো আমাকে খুব খারাপ মেয়ে মনে হচ্ছে। হ্যাঁ আমি সামান্য খারাপ। প্রতিহিংসার ব্যাপারটা আমার মধ্যে আছে। লেখক সাহেব আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হোটেলে নিতে যাচ্ছেন—এই ব্যাপারটা আমি নিতেই পারছি না। লেখকরা হবেন অনেক উপরের মানুষ। তাঁরা জাতির আত্মা। তারা কেন এমন হবেন?
আমার বাবা সাধারণ মানুষ। ব্যবসাপাতি নিয়ে থাকেন। একজন বিপত্মীক। তার মধ্যে তো এ রকম ছেকছুকানি নেই। একজন রূপবতী তরুণী কাজের মেয়ে কিছুদিন আমাদের বাসায় ছিল। প্রথম দিনেই বাবা তাকে বললেন, মাগো! আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দাও। কাজের মেয়েটা ধাক্কার মতো খেয়ে অনেকক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার দৃষ্টি দেখেই বুঝেছি কোনো গৃহকর্তা এর আগে তাকে মা ডাকেনি। বরং আড়ালেআবডালে অন্য ইঙ্গিত করেছে।
এখন মূল উপন্যাস শুরু করছি।
নীল কালি লেখা
সুতা কৃমি আমার প্রেমে পড়েছে। কি ভাবে বুঝলাম? মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে। এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টা চট করে বুঝে ফেলে। পুরুষের খারাপ দৃষ্টিও বুঝে। মুরুব্বি কোনো মানুষ মা মা বলে পিঠে হাত বুলাচ্ছে সেই স্পর্শ থেকেও সে বুঝে ফেলে মা ডাকের অংশে ভেজাল কতটুকু আছে।
সুতা কৃমির প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা তৃতীয় নয়নের সাহায্য ছাড়াই কি ভাবে বুঝলাম সেটা বলি। আমার মোবাইলে একটা SMS পেলাম। রোমান হরফে বাংলায় লেখা—
Apnake na Dekila amar
Boro Kosto hoi.
মোটামুটি বাংলা হবে, আপনাকে না দেখলে আমার বড় কষ্ট হয়।
সে যদি লেখত, তোমাকে না দেখলে আমার বড় কষ্ট হয় তাহলে কিছু রাখঢাক থাকত। আমার মনে হতো অন্য কেউ পাঠিয়েছে। সুতা কৃমি আমাকে আপনি করে বলে। SMS-এ সে এই কাজই করেছে।
আমি তাকে ডেকে পাঠালাম। সে আমার সামনে জড়সড় হয়ে দাঁড়াল। আমি বললাম, খবর কি?
সে বলল, ভালো।
আমি বললাম, তুমি কি আমার কাছে ফোনে এসএমএস পাঠিয়েছ?
সে বলল, না তো। আমার কোনো মোবাইল টেলিফোন নাই।
আমি বললাম, এসএমএস করার জন্যে মোবাইল ফোন থাকতে হয় না। কোনো মোবাইলের দোকানে পাঁচ টাকা দিলেই তারা এই কাজটা করতে দেয়।
সুতা কৃমি বিড়বিড় করে বলল; অল্লাহর কসম এই কাজটা আমি করি নাই।
আমি বললাম, মনে হচ্ছে আমার ভুল হয়েছে। তুমি যাও।
সে প্রায় ছুটে বের হয়ে গেল। যাবার সময় দরজায় বাড়ি খেয়ে মাথা ফুলিয়ে ফেলল। আমি ভালো মেয়ে হলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যেত। যেহেতু আমি সামান্য খারাপ মেয়ে, আমি ব্যাপারটা এখানে শেষ হতে দিলাম না। পরদিন তাকে আবার ডেকে পাঠালাম। আমি বললাম, আমার ধারণা তুমি আমার প্রেমে হাবুড়ুবু খাচ্ছ। ধারণাটা কি ঠিক?
সে জবাব দিল না। ভীত চোখে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, প্রেম আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটা যদি One sided হয় তাহলে তার গুরুত্ব আরো বেশি। তোমার গভীর প্রেমে সাড়া দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, তবে তুমি ইচ্ছা করলে একবার আমাকে চুমু খেতে পারো। চাও?
সুতা কৃমি ঘামতে শুরু করল। আমি বললাম, এক মিনিটের জন্যে আমি চোখ বন্ধ করছি। চুমু খেতে চাইলে চুমু খেয়ে বিদায় হও। আমি চোখ বন্ধ করার আগেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এবারো সিড়ি ঘরের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফাটাল।
এই পর্যন্ত লিখে তরু হাই তুলল। আজকের মতো লেখা শেষ। আর লিখতে ইচ্ছা করছে না। লেখার শেষ অংশটা বানানো। সুতা কৃমিকে সে চুমু খেতে বলেনি। অসম্ভব একটা বিষয়। উপন্যাসকে ইন্টারেস্টিং করার জন্যে লেখা। যা করেছে তা হলো—সে বলেছে। তুমি এক মিনিটের জন্যে আমার হাত ধরতে পারো। বলেই সে তার হাত বাড়িয়েছে। হাত বাড়াতে দেখে সুতা কৃমি দৌড়ে পালিয়েছে। দরজায় বাড়ি খেয়ে মাথা ফাটিয়েছে।
আপু খানা খাবেন না?
কাজের মেয়ে সফুরা কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে সে জানে না। সফুরা নিঃশব্দে হাঁটে। তারপরেও একজন পেছনে দাঁড়াবে সে টের পাবে না তা হয় না। একজন লেখকের পর্যবেক্ষণ শক্তি যেমন বেশি থাকবে তেমনি অনুভব শক্তিও বেশি থাকতে হবে।
খান লাগাব আপু?
তরু বলল, খানার আবার লাগালাগি কি? সুন্দর করে বলবে টেবিলে খাবার দিব?
সফুরা বলল, টেবিলে খাবার দিব?