অবশ্যই আমি একা একা থাকার জন্যে ফ্ল্যাট কিনেছি। পর্বত পাশে নিয়ে ঘুমানোনার জন্যে ফ্ল্যাট কিনি নি।
আপা এই ফ্ল্যাট দেখে নি?
কোত্থেকে দেখবে? ইচ্ছে করলেও তো ঢুকতে পারবে না। গেটেই আটকে দেবে। তাছাড়া তার যে সাইজ হয়েছে, লিফটের দরজা দিয়েও সে ঢুকবে না। ধাক্কাধাক্কি করে ঢোকাতে হবে। কার ঠেকা পড়েছে তাকে ধাক্কাধাক্কি করার? ফরগেট ইওর বড় আপা, তুমি আমার সঙ্গে এসো ফ্ল্যাটটা আগে ভালোমতো দেখাই–গাইডেড ট্যুর। আসলেই দর্শনীয়। প্রথম কী দেখবে? কিচেন?
যা দেখাবেন তাই দেখব।
দিলু কিচেন দেখে মুগ্ধ গলায় বলল, কিচেনেও কি এয়ারকুলার লাগিয়েছেন না কি?
ওটা এয়ারকুলার না দিলু। রান্নার ধোয়া শুষে নেবার ব্যবস্থা।
টেবিলটা কি শ্বেতপাথরের দুলাভাই?
হ্যাঁ শ্বেতপাথরের। রান্নাঘরে বসে যেন দুজন খেতে পারে সেই ব্যবস্থা। কিচেনে টেবিল থাকলে ফরম্যাল ডাইনিং রুমে যাবার দরকার হয় না।
আপাকে তো আনছেন না– দুজন পাচ্ছেন কোথায়?
এই তো তোমাকে পেলাম। আজ এই শ্বেতপাথরের টেবিল উদ্বোধন করব। দুজন এখানে ডিনার করব। কী খেতে চাও বলো– ইন্টারকমে খবর দিয়ে দেব। ওরা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসবে। এখন এসো তোমাকে মাস্টার টয়লেট দেখাব। দর্শনীয়। গোল একটা বাথটাব ফিট করা হয়েছে। বাথটাবটার ডিজাইন এমন যে দুজন গোসল করতে পারে। বিদেশীদের আইডিয়া কত সুন্দর দেখ। এরা জানে জীবনকে কীভাবে উপভোগ করতে হয়। আমরা শুধু টাকা রোজগার করতেই জানি, খরচ করতে জানি না।
আপনি তো মনে হয় খরচ করতেও জানেন।
আমি এখনো জানি না। তবে আমি শিখছি। বাচব আর কতদিন, মরে গেলেই তো সব শেষ। ঠিক না? বাথরুমটা পছন্দ হয়েছে?
খুব সুন্দর।
এসো বারান্দা দেখাই। তোমার মনে হতে পারে আর্কিটেক্ট জায়গা নষ্ট করেছে- আসলে তা না। বারান্দাটাই বাড়ির বিউটি। দুজনে বসার জন্যে লো হাইট সোফা রাখা হয়েছে বারান্দায়। বারান্দায় বসে বসে চাঁদের আলো দেখবে– হাতে থাকবে মিষ্টি শেরির গ্লাস, ক্যাসেটে বাজবে সিম্ফোনি– দ্যাটস লাইফ। ঠিক না?
বুঝতে পারছি না। হয়তো ঠিক।
এসো বারান্দায় বসি, না চল শোবার ঘরে চল–এই একটি ঘরেই এসি আছে। একবার ভেবেছিলাম শোবার ঘরে ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট দেব। তারপর মনে হলো গরমের দেশে কার্পেট ভালো লাগবে না। ঝকঝকে হোয়াইট সিমেন্টই ভালো। এখন কী দেব বলো? চা, না ঠাণ্ডা কিছু?
দুলাভাই আজ সারাদিন আমি বাইরে, জরুরি কিছু কথা বলে চলে যাব।
বলো তোমার জরুরি কথা।
আজ ভিসা পেয়েছি।
একসেলেন্ট। আসল হার্ভেল হচ্ছে ভিসা।
ঠিক করেছি পরশু টিকিট কাটব।
পরশু কেন? হোয়াই নট টুমরো? আমার এক বন্ধুর ট্রাভেল এজেন্সি আছে। এরা কোনোরকম কমিশন না কেটে টিকিট দেবে। হাজার দশেক টাকা সেভ করতে পারবে।
থ্যাংক য়্যু দুলাভাই। তারচে’ আমার যেটা বেশি দরকার তা হচ্ছে…।
আমি তোমাকে যে টাকা প্রমিস করেছিলাম সেটা তো?
জি।
আজ তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। কারেন্ট অ্যাকাউন্টের চেক বই এইখানেই আছে। আমি এক্ষুনি চেক লিখে দিচ্ছি। যেহেতু কারেন্ট অ্যাকাউন্টের চেক তুমি কালই ভাঙাতে পারবে।
দুলাভাই, আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব- বুঝতে পারছি না।
মেয়ে সুস্থ হয়ে আসুক তারপর ধন্যবাদ দেবে। এখন বলল যা দেব বলেছিলাম তাতে হবে, না আরো কিছু লাগবে? ফিল ফ্রি।
যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে আরো এক বাড়িয়ে দিন।
তোমার জন্যে সবই সম্ভব। যাও এটাকে চার করে দিচ্ছি। এখন বলল রাতে চায়নিজ খাবে, না বাংলাদেশী ফুড– ডাল ভাত। গুলশানে একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে একসেলেন্ট বাংলাদেশী ফুড করে। বিদেশীরা লাইন দিয়ে খায়।
দুলাভাই, আজ আমি চলে যাব। আরেকদিন এসে আপনার সঙ্গে ডিনার করব।
পাগল হয়েছ! তোমাকে যেতে দেব না। তোমাকে দিয়ে রান্নাঘরের শ্বেতপাথরের টেবিল উদ্বোধন করা এবং গোল বাথটাব উদ্বোধন করাব। হা হা হা।
দিলশাদ অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কী বলার চেষ্টা করছে?
ওয়াদুদুর রহমান বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। ঠোঁটে সিগারেট খুঁজতে খুঁজতে বলল, দিলু, আমি হচ্ছি খুব ফ্রাস্টেটেড একজন মানুষ। পুরোপুরি হতাশাগ্রস্ত। এক অর্থে তুমিও হতাশাগ্রস্ত। দুজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ যদি কিছু সময় আনন্দে কাটায় তাতে জগতের কোনো ক্ষতি হয়।
দুলাভাই, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না।
বুঝতে না পারার তত কোনো কথা না দিলু। তুমি তো বোকা মেয়ে নও। তোমার জায়গায় তোমার আপা হলে ভিন্ন কথা ছিল। সে কিছুই বুঝত না। বিয়ের পর পর কী ঘটনা ঘটল শোন রাত একটার দিকে তোমার আপাকে ডেকে তুলে বললাম, তৃষ্ণা পেয়েছে। পানি খাব। সে ভাবল পানির তৃষ্ণাই বুঝি পেয়েছে। সে বিস্মিত হয়ে বলল, টেবিলেই তো পানির জগ আছে। গ্লাস আছে। খেয়ে নিলেই পারতে। আমাকে শুধু শুধু ডাকলে কেন? আমি তখন বললাম…।
দিলশাদ বলল, আমাকে এসব কেন শুনাচ্ছেন?
ওয়াদুদুর রহমান ডানহাত বাড়িয়ে দিলশাদের গালে রাখল। আদর করার ভঙ্গিতে হাত রাখা। দিলশাদ নিজের মুখ সরিয়ে নিল না, সে স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। ওয়াদুদুর রহমানের ডানহাতের আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটের ধোয়ায় দিলশাদের মাথা ঘুরতে শুরু করেছে।