“হ্যাঁ।”
“এই অন্ধকারে লটারি করবি কেমন করে?”
“সোজা। একজন বাম হাতে না হয় ডান হাতে একটা জিনিস রাখবে, অন্যজন বলবে কোন হাতে, যদি ঠিক ঠিক বলতে পারে তা হলে লটারিতে জিতে গেল।”
“যদি সবাই জিতে যায়!”
‘তা হলে আবার হবে লটারি। যতক্ষণ পর্যন্ত দুইজন না জিতছে ততক্ষণ লটারি হবে।”
“ঠিক আছে।”
“আগে থেকে বলে রাখছি কেউ পরে আপত্তি করতে পারবি না কিন্তু!”
“ঠিক আছে।”
লটারি কয়েকবার করতে হল এবং শেষ পর্যন্ত জিতে গেল বুবুন আর সুমি। যদিও আপত্তি করবে না বলে আগে কথা দিয়েছিল তবু পিয়াল আর গাব্বু একটু আপত্তি করার টেষ্টা করল, তাতে অবিশ্যি কোনো লাভ হল না।
ট্রান্সমিটারটা রাখল বুবুনের পকেটে। অন্য জিনিসপত্রগুলি দুটি ব্যাগে ভাগাভাগি করে নেওয়া হল। ব্যাগগুলো বেশ ভারী হয়েছে কারণ সুমি বাসা থেকে তার ব্যাগে অনেক জিনিস এনেছে। বাইরে থেকে আটকে দেওয়ার জন্যে বেশ কয়েকটা তালা, বোতলের মাঝে কেরাসিন তেল, সাবান, পানি, ম্যাচ, দড়ি, ছোটবড় ঢেলা। কোন জিনিসটা কোন কাজে লাগবে সেটা এখনও সবার কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার নয় কিন্তু সুমি ভালোভাবে প্রস্তুত না হয়ে ভিতরে ঢুকতে রাজি নয়।
ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে নিয়েছে দুইজন, জুতোর ফিতা ভালো করে বেঁধেছে। বুবুন তার চশমাটা সুতো দিয়ে পিছনে বেঁধে নিয়েছে, খুলে গেলেও যেন পড়ে না যায়। বুবুনের শার্টটা হালকা রঙের ছিল, অন্ধকারে যেন দেখা না যায় সেজন্যে গাব্বু নীল রঙের শার্টের সাথে বদলে নিয়েছে। সবকিছু ঠিক আছে কি না দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করে নিয়ে বুবুন বলল, “আমরা গেলাম তা হলে।”
পিয়াল বলল, “যা। কোনো চিন্তা করিস না। আমরা আছি বাইরে।”
গাব্বু বলল, “বিপদ দেখলেই আমরা বাসায় খবর দেব।”
বুবুন আর সুমি দেয়াল টপকানোর জন্যে ভালো একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে দাঁড়াল। অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখা যায় না তা-ই সুমির মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না, বুবুন যদিও জানে এখন নিশ্চয়ই তার মুখটাও পাথরের মতো শক্ত। দেয়ালে ইটের ফাঁকে পা দেওয়ার আগে মনে-মনে বলল, “খোদা, তুমি আমাদের রক্ষা করো।”
১১. অ্যাডভেঞ্চার
প্রথমে বুবুন এবং তার কয়েক সেকেন্ড পরে সুমি ভিতরে লাফিয়ে পড়ল। দুজনেই খানিকক্ষণ গুটিসুটি মেরে বসে থেকে যখন নিশ্চিত হল কেউ তাদের দেখতে পায়নি তখন তারা গুঁড়ি মেরে ভিতরে বাসাটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
বাসাটার কাছাকাছি গিয়ে তারা দেয়ালে কান লাগিয়ে ভিতরের কথাবার্তা শুনতে চেষ্টা করল, যদি কোনোভাবে আব্বার গলার আওয়াজ শুনতে পারে তা হলে সাথে সাথে ট্রান্সমিটারের সুইচটা অন করে দিয়ে ঠিক যেভাবে গোপনে এসে ঢুকেছে সেভাবে গোপনে বের হয়ে যাবে।
বুবুন ফিসফিস করে বলল, “সুমি!”
“কী হল?”
“দুজন এক জায়গায় থাক ঠিক না। হঠাৎ করে যদি ধরা পড়ে যাই তা হলে দু’জনেই একসাথে ধরা পড়ে যাব।”
“ঠিকই বলেছিস।”
“তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি পুরো বাসাটা একবার চক্কর দিয়ে আসি।”
“ঠিক আছে।”
বুবুন পুরো বাসাটা একবার চক্কর দিয়ে এল, জানালার নিচে দাঁড়িয়ে ভিতরের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করল, ফাঁকফোকর দিয়ে সাবধানে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু কোনো লাভ হল না। আগের জায়গায় ফিরে এসে দেখল সুমি সেখানে নেই, বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে বুবুনের। ধরা পড়ে গেল নাকি? তা হলে অবিশ্যি হৈচৈ দৌড়াদৌড়ি হত, কিন্তু সেরকম কিছুই তো শোনেনি। নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছে, এক্ষুনি ফিরে আসবে।
সত্যি সত্যি কিছুক্ষণের মাঝে সুমি ফিরে এল, কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “ভিতরে ঢোকার একটা উপায় পেয়েছি।”
“ভিতরে ঢোকার?”
“হ্যাঁ।”
“কীভাবে ঢুকবে?”
“বৃষ্টির পানির যে পাইপ রয়েছে সেটা বেয়ে ছাদে যাব, তারপর ছাদ থেকে ভিতরের বারান্দায়।”
বুবুনের পেটের ভিতরে কেমন জানি পাক খেয়ে ওঠে। ঢোক গিলে বলল, “কোনো বিপদ হবে না তো?”
“হলে হবে। আয়, আর দেরি করিস না।”
কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা গেল প্রথমে সুমি এবং তার পিছুপিছু বুবুন পানির পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে যাচ্ছে। এধরনের একটি কাজ যে বুবুন করতে পারবে তার বিশ্বাস ছিল না, কিন্তু সুমি দেখে তার নিজের উপর খানিকটা বিশ্বাস ফিরে আসে। পাইপটা শক্ত করে ধরে রেখে নিচের দিকে না তাকিয়ে হাঁচড়-পাঁচড় করে দুজন উপরে উঠে এল। ছাদে পানির একটা ট্যাংক রয়েছে, দুজনে সেটার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাসার ভিতরে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল। আবছা অন্ধকার, ভিতরে নির্জন সুমসাম, কোনো মানুষ আছে বলেই মনে হল না। দুই পাশে দুটি ঘরে আলো জ্বলছে, সেখানে হয়তো কেউ থাকতে পারে। সুমি ফিসফিস করে বলল, “ছাদে থেকে ভালো করে নিচে তাকিয়ে দেখ।”
“কী দেখব?”
“কিছু দেখা যায় কি না। কতজন মানুষ আছে কী সমাচার।”
দুজনে ছাদ থেকে নিচে উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে। বাসাটা কত বড়, কয়টা রুম, কোথায় বারান্দা, কোথায় লুকানোর জায়গা আছে, কোথায় আলো, কোথায় অন্ধকার, হঠাৎ করে কেউ তাড়া করলে কোনদিকে পালিয়ে যাবে এই ধরনের ব্যাপারগুলো ছাদে বসেই আন্দাজ করার চেষ্টা করে। যখন বাসাটা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হল তখন সুমি বলল, “চল, নিচে যাই।”
“কীভাবে যাবে?”
“কার্নিস ধরে ঝুলে নিচে রেলিঙের উপর নেমে পড়ব।”