“কী ভাবছিলে?”
“আমাকে ভয় দেখানোর জন্যে যদি তোকে কিডন্যাপ করে নেয়। তাই বলছিলাম খুব সাবধানে থাকবি। ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে।”
“আজকে বাসায় এসে যখন দেখলাম এরকম তুলকালাম হচ্ছে আমি ভেবেছিলাম বুঝি তোকে ধরে নিয়ে গেছে, যা ভয়টা পেয়েছিলাম! ওহ!”
বুবুন আম্মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, কেন আজকে এত বড় ঘটনার পরেও আম্মা একটুও রাগ করেননি হঠাৎ করে পরিষ্কার হয়ে গেল বুবুনের কাছে।
০৯. কিডন্যাপ
সবাই মিলে স্কুলে যেতে যেতে কথা বলছিল, হঠাৎ করে বুবুন সবাইকে থামিয়ে বলল, “কাল রাতে আম্মা কী বলেছে জান?”
“কী?”
“খবিরউদ্দিনের দল আমাকে কিডন্যাপ করে নেবে!” সুমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বলল, “যাহ্! গুল মারছিস!”
“আমার কথা বিশ্বাস হল না? আম্মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো।”
“কেন? তোকে কেন কিডন্যাপ করবে?”
“আম্মাকে ভয় দেখানোর জন্য। আম্মা তো মেয়েদের স্কুলের জন্যে কাজ করেন–এইজন্যে খবিরউদ্দিনের খুব রাগ আম্মার উপরে।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। মাঝে মাঝে আম্মার কাছে চিঠি লেখে খবিরউদ্দিনের দলবল।”
“কী লেখা থাকে চিঠিতে?”
“জানি না–আম্মা আমাকে কখনো দেখায় না। নানারকম ভয়ের জিনিস থাকে তো!”
গাব্বু একটা চিউয়িংগাম চিবুতে চিবুতে সুমি আর বুবুনের কথা শুনছিল, এবারে এগিয়ে এসে চোখ বড় বড় করে বলল, “ইশ! কী মজাটাই-না হবে!”
সুমি অবাক হয়ে বলল, “কখন মজা হবে?”
“যখন বুবুনকে ধরে নিয়ে যাবে।”
“মজা হবে?”বুবুন একটু রেগে গেল, “মজা হবে কেন?”
“খালি ডিটেকটিভ বইয়ে পড়েছি মানুষকে কিডন্যাপ করে নেয়, তাকে যখন নেবে তখন সত্যি সত্যি দেখব।”
“সেটা মজা হল?”
“মজা হবে না। আমরা সবাই মিলে তোকে উদ্ধার করে আনব। একেবারে অ্যাডভেঞ্চার বইয়ের মতো!”
“আর যদি না পারিস? আমার রগ যদি কেটে ফেলে?”
“ধুর! রগ কাটতে দেব নাকি আমরা! তার আগেই তোকে উদ্ধার করে ফেলব না?”
পিয়াল বলল, “গাব্বু ঠিকই বলেছে। আসলেই যদি তোকে কিডন্যাপ করে নেয় আর আমরা যদি তোকে উদ্ধার করি কী মজাটাই-না হবে!”
সুমিও মাথা নাড়ল, “সেটা ঠিক।”
গাব্বু পিচিক করে থুতুর সাথে চিউয়িংগামটা ফেলে দিয়ে বলল, “আমাদের জীবনটা একেবারে পানশে হয়ে গেছে। কোনোই আনন্দ নাই। কিছু-একটা না হলে আর মজা লাগছে না। সত্যি সত্যি তোকে কিডন্যাপ করবে তো?”
বুবুন হেসে ফেলল, “তোকে মজা লাগানোর জন্যে আমাকে কিডন্যাপ হতে হবে?”
পিয়াল হঠাৎ চোখ বড় বড় করে বলল, “আমরা আগে থেকে শুরু করতে পারি না?”
সুমি ভুরু কুঁচকে বলল, “আগে থেকে কী শুরু করবি?”
“মনে কর পিয়ালকে হাইজ্যাক করে নিল। তখন আমাদের কী করতে হবে?”
সুমি মাথা চুলকাল, “ইয়ে, সেটা তো বলা মুশকিল!”
“দেখলি তুই জানিস না! তার মানে যদি সত্যি সত্যি বুবুনকে ধরে নিয়ে যায় তখন কী করতে হবে আমরা বুঝতেই পারব না। কাজেই আগে থেকে যদি কাজ এগিয়ে রাখি–”
গাব্বু হাতে কিল দিয়ে আনন্দে হেসে ফেলে বলল, “ঠিক বলেছিস। এখন থেকেই শুরু করে দিই! বুবুনকে হাইজ্যাক না করলেও ক্ষতি নাই–আমরা ধরে নেব হাইজ্যাক হয়ে গেছে।”
“কিন্তু কী করা শুরু করবি?”
পিয়াল মুখ গম্ভীর করে বলল, “যেমন মনে কর আমরা একটা ওয়ারলেস ট্রান্সমিটার তৈরি করে ফেলতে পারি। সেইটা বুবুনের পকেটে থাকবে, কাজেই তাকে যেখানেই নেবে আমরা বাইরে থেকে সেটা বুঝে ফেলব।”
সুমি ভুরু কুঁচকে বলল, “বানাতে পারবি তুই?” পিয়াল মুখে তাচ্ছিল্যের একটা ভাব করে বলল, “এইটা বানানো কঠিন কী? একেবারে পানিভাত! আমার কাছে সার্কিট আছে।”
গাব্বু বলল, “আমরা আগে থেকে খবিরউদ্দিনের দলবলের লিস্ট করে ফেলতে পারি।”
পিয়াল মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ। তা হলে যখন পুলিশ ধরতে আসবে তখন কাকে কাকে ধরতে হবে বুঝতে কোনো অসুবিধাই হবে না।”
গাব্বুর চোখ চকচক করতে থাকে, “আমাদের যখন ফাঁইট দিতে হবে তখন ব্যবহার করার জন্য কিছু ডেঞ্জারাস অস্ত্র জোগাড় করতে পারি।”
“হ্যাঁ, আর বুবুন যেন পালিয়ে আসতে পারে সেইজন্যে তার হাতে একটা হ্যাঁকস দিতে হবে। শিকল কেটে চলে আসতে পারবে। তার সাথে টর্চলাইট। আর চাকু।”
গাব্বু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তার সাথে কয়েকটা পেট্রোল বোমা।”
বুবুন চোখ কপালে তুলে বলল, “পেট্রোল বোমা?”
“হ্যাঁ। পেট্রোল বোমা ছাড়া কোন অ্যাডভেঞ্চার করাই ঠিক না।”
বুবুন বলল, “আসলে যদি খবিরউদ্দিনের আস্তানাগুলো আগে থেকে বের করে রাখতে পারি তা হলেই অনেক বড় কাজ হবে।”
পিয়াল বলল, “মুশকিল হল আমরা তো খবিরউদ্দিনকেই কোনোদিন দেখি নাই।”
বুবুন হঠাৎ চমকে উঠে বলল, “কিন্তু আমরা তো তার এক সাগরেদকে দেখেছি, মনে নেই?”
“কোন সাগরেদ?”
“ঐ যে টিলার উপরে দেখেছিলাম ইঁদুরের মতো দেখতে! আমরা শিয়াল দেখতে গিয়ে ফিরে আসছিলাম, তখন একজন জিজ্ঞেস করল রওশান নামের মেয়েলোকটার বাসা কোথায়?”
পিয়াল বলল, “ও! ও! সেই লোকটা? আমি তো ওকে আরও দেখেছি?”
“কোথায় দেখেছ?””আমাদের স্কুলের সামনে যে একটা ফার্মেসি আছে সেখানে বসেছিল।”
সুমি চোখ বড় বড় করে বলল, “মনে হয় বুবুনকে হাইজ্যাক করার জন্যে এসেছিল।”
“হতে পারে।”
বুবুন গম্ভীর হয়ে বলল, “আম্মা বলেছে, এদেরকে কোনো বিশ্বাস নাই।’
“খুব সাবধানে থাকতে হবে বুবুনকে।” সুমি গম্ভীর হয়ে বলল, “পাহারা দিয়ে রাখতে হবে সবসময়।”