My dearest moonshine
কোনই মজা হল না। শুধু বাবা ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, ফানি ম্যান। ভেরী ফানি ম্যান। মনে হল বাবাই খুব মজা পাচ্ছেন। কেকটাও বাবার খুব ভাল লাগল। পাঁচ পিস কেক খেয়ে ফেললেন। বারবার বিস্মিত গলায় বললেন–মারাত্মক টেস্ট হয়েছে তো! ভাইয়া বলল, মারাত্মক টেস্ট হবার কারণ জানতে বাবা? মারাত্মক পচা ডিম ব্যবহার করা হয়েছে। কেকের স্বাদ নির্ভর করে কি ধরনের পচা ডিম ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর।
আচ্ছা, আমার কথাবার্তা শুনে আপনার কি মনে হচ্ছে আমি আমাদের এই ফানি ম্যানকে খুব পছন্দ করি? ঠিকই ধরেছেন। হ্যাঁ, আমি খুব পছন্দ করি। যদিও আমি কাউকেই খুব পছন্দ করতে পারি না, আবার কাউকে খুব অপছন্দও করতে পারি না। তবে … না থাক পরে বলব। এখন ভাইয়ার কথা বলি। ভাইয়াকে সবাই পছন্দ করে। এমন কি আমাদের বাড়িওয়ালাও। পৃথিবীর কোন বাড়িওয়ালাই ভাড়াটেদের পছন্দ করে না। যে ভাড়াটে নিয়মিত ভাড়া দেয় তাকেও না। কারণ বাড়িওয়ালার নিজের অতি আপন একটি জিনিস ভাড়াটে ব্যবহার করে। তাকে পছন্দ করার কোনই কারণ নেই। অথচ আমাদের বাড়িওয়ালা সুলায়মান সাহেব–ভাইয়াকে পছন্দ করেন। দু মাস, তিন মাস বাড়ি ভাড়া বাকি থাকে–সুলায়মান সাহেব কিছুই বলেন না–অবশ্যি এক সময় ডেকে পাঠান। ভাইয়া বিস্ময়ের ভঙ্গি করে যায় এবং অবাক হওয়া গলায় বলে, কি জন্যে ডেকেছেন চাচা?
ভাইয়ার এই বিস্ময় দেখে সুলায়মান সাহেব হকচকিয়ে যান। আমতা আমতা করে বলেন, আছ কেমন?
জ্বি ভাল। আপনি কেমন চাচা?
আছি কোনমত।
আপনার ডায়াবেটিস কি কিছু কমের দিকে?
ইনসুলিন নিচ্ছি না। ডায়েটের উপর আছি। করলা খাচ্ছি। মেথি খাচ্ছি, হাঁটাহাঁটি করছি।
আপনাকে কিন্তু আগের চেয়ে অনেক ভাল দেখাচ্ছে।
না ভাল আর কোথায় শরীরে জোর পাই না।
শরীরের জোরটা আসল না চাচা, মনের জোরটাই আসল। মনে জোর রাখবেন–মনটাকে শক্ত রাখবেন। এই দেখুন না, টাকা পয়সার কি সমস্যা আমাদের যাচ্ছে। টিকে আছি মনের জোরে। আপনাকে তিন মাস ধরে বাড়ি ভাড়া দেয়া হচ্ছে না–লজ্জায় মরে যাচ্ছি। আপনার সঙ্গে যাতে দেখা না হয় এই জন্যে খুব সাবধানে থাকি। ঐদিন দেখি আপনি বাজার করে ফিরছেন। আমি সিগারেট কিনছিলাম, ধাঁই করে গলিতে ঢুকে পড়লাম। এই যে আপনি ডেকে পাঠালেন, আমি ভয়ে অস্থির যদি বাড়িভাড়া চান কি বলব?
সুলায়মান সাহেব বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন–আরে না ঐ জন্যে তোমাকে ডাকি নি। এম্নি খবর দিয়েছি। অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। করছ কি আজকাল?
চারটা প্রাইভেট টিউশানি করছি। পত্রিকায় একটা কাজ জোগাড় করেছি–বিভিন্ন প্রতিবেদন টেন লিখি। ছাপা হলে শখানিক দেয়।
কি পত্রিকা?
ফালতু পত্রিকা। নাম হচ্ছে শতদল–এই পত্রিকার একমাত্র আকর্ষণ হল ধর্ষণের খবর। যে সপ্তাহে কোন মেয়ে রেপড় হয় না সেই সপ্তাহে আমাদের পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদকের খুব মন খারাপ থাকে।
কি বলছ এসব?
আমি দুএকটা সংখ্যা দিয়ে যাব, পড়লেই বুঝবেন। ধর্ষণের এত সুন্দর বর্ণনা আপনি কোন পত্রিকায় পাবেন না। আমরা কোন ডিটেইল বাদ দেই না।
বল কি? হচ্ছে কি দেশটার? খুবই চিন্তার কথা।
চাচা আজ তাহলে উঠি। আমার আবার একটা ইন্টার নিতে হবে। রেপড় হয়েছে এমন একটা মেয়ে।
শুনলে সবার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে–আমরা পাঁচ বছর এ বাড়িতে আছি–বাড়ির ভাড়া বাড়ে নি। কেন বাড়েনি জানেন? ভাইয়ার জন্য। একবার চারশ টাকা ভাড়া বাড়ল। সুলায়মান সাহেব নিজে এসে বাবাকে এই খবর দিয়ে গেলেন। হাত টাত কচলে বললেন, কি করব ভাই বলুন–প্রপার্টি ট্যাক্স ডাবল করে দিয়েছে। প্রপার্টি বলতে তো এই বাড়ি ভাড়ার উপর বেঁচে আছি। মেয়েগুলিকে বিয়ে দিয়েছি–একা মানুষ বলে কোন রকমে চলে যায়। এমন সমস্যা কি আর বলব আপনাকে–জামাইরা প্রতি মাসে টাকার জন্য আসে। ফকিরেরও অধম। ভাড়া না বাড়িয়ে তো পারছি না। চারশ টাকা করে বেশী দিতে হবে সামনের মাস থেকে। তিন ঘর ভাড়াটের সবার ভাড়াই চারশ করে বাড়িয়েছি।
বাবা বললেন–আচ্ছা ঠিক আছে।
সব কিছুতেই রাজি হয়ে যাওয়া বাবার স্বভাব। তিনি এমন ভাব করলেন যে চারশ টাকা কিছুই না। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আমাদের। চারশ টাকা বাড়তি দেয়া একেবারেই অসম্ভব। ভাইয়া বলল, কোন চিন্তা নেই, আমি ঠিক করে দেব।
সন্ধ্যাবেলা সে গেল। মুখ কাঁচু মাচু করে বলল, চাচা আপনি নাকি আমাদের বের করে দিচ্ছেন?
সুলায়মান সাহেব হতভশ্য হয়ে বললেন–সেকি। তোমাদের বের করব কেন? ছিঃ ছিঃ–কার কাছে শুনেছ এসব কথা?
বাড়িভাড়া চারশ বাড়িয়েছেন–আমাদের বের হয়ে না যাওয়া ছাড়া উপায় কি? কোত্থেকে দেব বাড়তি চারশ টাকা? যা ভাড়া তাই দিতে পারি না। দুদিন পরে পরে বাকি পড়ে।
সুলায়মান সাহেব বিব্রত গলায় বললেন–আচ্ছা আচ্ছা থাক। বাদ দাও। যা আছে তাই। অন্য ভাড়াটেদের কিছু জানিও না।
ভাইয়া দরাজ গলায় বলল, আমার একটা চাকরি বাকরি হোক। তারপর দেখবেন, আপনাকে বলতে হবে না। পাঁচশ টাকা বাড়তি আপনার হাতে খুলে দিয়ে
যাব।
সুলায়মান সাহেব বললেন–আচ্ছা আচ্ছা–ঠিক আছে। একবার তো বললাম ঠিক আছে।
আপনার ব্যবহারে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি চাচা।
আহা বাদ দাও না। চা খাও। কই নসু—বাবা আমাদের দুজনকে চা দাও তা।
সুলায়মান সাহেব ভাইয়াকে কেন এত পছন্দ করেন আমি জানি না। এত বাড়াবাড়ি ধরনের পছন্দ দেখা যায় না বলে ব্যাপারটাকে অনেকদিন আমরা সন্দেহের চোখে দেখতাম। আমাদের ধারণা দিল–সুলায়মান সাহেবের কোন আত্মীয়ার সঙ্গে তিনি ভাইয়ার বিয়ে দিতে চান। সেই আত্মীয়ার এমনিতে বিয়ে হবার সম্ভাবনা নেই। হয়ত এসিডে পুড়ে মুখ ঝলসে গেছে কিংবা পঙ্গু। আমাদের সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সুলায়মান সাহেবের ভাল লাগার পেছনে তেমন কোন স্বার্থ নেই। এটাও খুব অস্বস্তিকর। স্বার্থ ছাড়া ভালবাসে এমন মানুষ আমরা দেখি না। হঠাৎ কাউকে দেখলে খানিকটা অস্বস্তি লেগেই থাকে।