তিন মাইল রাস্তা ছুটে যাওয়া সোজা কথা নয়। তারিকের বাসায় গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে তারিককে ডেকে বের করে আনল।
তারিক ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে রে দীপু?
দীপু খবরের কাগজটা ওর সামনে খুলে ধরল।
পুরোটা পড়তে পারল না তারিক, তার আগেই দীপুকে ধরে ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলল। মানুষ খুশি হলে কেন যে কাঁদে কে জানে, দীপু অবাক হয়ে নিজের চোখও মুছে নেয় সাবধানে।
.
অনেকদিন পার হয়ে গেছে। বছর ঘুরে শেষ হয়ে হয়েছে প্রায়। ফাইনাল পরীক্ষার দেরি নেই আর। আব্বা আবার ছটফট করছেন, মন বসছে না আর তার এখানে। দীপুকে তাগাদা দেন শুধু।
কত দেরি তোর?
কিসের?
পরীক্ষার। শেষ কর তাড়াতাড়ি, যাব অন্য জায়গায়।
কোথায় যাবে আব্বা?
ঠিক করিনি এখনও। পাহাড়ের কাছে কাছে। রাঙামাটি না হয় বান্দরবন।
দীপু পড়ায় আর মন দিতে পারে না, বই খুলে রেখে দৈকে মণ্ডের চোখের সামনে দিয়ে সব ভেসে যায়। মাত্র এক বছর আগে এসেছিল এখানে, অথচ মনে হয় কতকাল পার হয়ে গেছে। কত কী হল এখানে—স্কুলে, খেলার মাঠে, কালাচিতায়। কত বন্ধুরা আছে এখানে। কত ঝগড়া, মারামারি, আবার। মিটমাট হয়ে হৈচৈ, চেঁচামেচি, ফুটবল খেলা। দীপু ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে তাকে চলে যেতে হবে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, ওর বন্ধুরা যখন শুনবে কী বলবে তারা? তারিক নিশ্চয়ই মন খারাপ করবে। ওর আম্মা নাকি ভাল হয়ে যাচ্ছেন, কয়দিন থেকেই তারিক বলছে ওর আম্মা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই ও দাওয়াত করে। খাওয়াবে দীপুকে। ওর আম্মা নাকি খুব ভাল রাঁধতে পারেন।
দীপু নিশ্চয়ই আসবে এখানে আবার। নিশ্চয়ই আসবে।