চঞ্চল বলল, “এই মিশকাত মঞ্জিলই হতে পারে আমাদের গোপন আস্তানা।”
টিটন বলল, “কক্ষনো না।”
“কেন না?”
“আমরা কী ভূতের বাচ্চা না মানুষের বাচ্চা? ভূতের বাচ্চা হলে ঠিক আছে, মানুষের বাচ্চা হলে ঠিক নাই।”
“দেখছিস না কতো জায়গা খালি পড়ে আছে। বড় বড় গাছগুলোর কোনো একটাতে বানাব ট্রি হাউজ!”
টিটন মুখ শক্ত করে বলল, “আমার ট্রি হাউজের দরকার নাই। খালি জাগারও দরকার নাই।”
ঠিক তখন হুটোপুটির একটা শব্দ হল আর হঠাৎ করে দেখলাম ছোটখাটো ছাই রঙের একটা জন্তু কোথা থেকে যেন ছুটে বের হয়ে গেল। আমরা সবাই চমকে উঠলাম, টিটন ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল।
চঞ্চল বলল, “বেজি!”
টিটন বলল, “এখন বেজি বের হয়েছে। একটু পরে বের হবে শেয়াল। তারপর বের হবে বাঘ।”
বেজিটা যেখান থেকে বের হয়েছে চঞ্চল সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “আজব ব্যাপার!”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী আজব ব্যাপার?”
“বেজিটা কোথা থেকে এলো? এখানে তো দেয়াল। দেয়ালের ভেতর থেকে বেজি বের হয় কেমন করে?”
টিটন বলল, “মনে হয় ওটা বেজি ছিল না। ওটা ভূত ছিল।”
“ভূতের আর কাজ নাই, বেজি সেজে ঘুরে বেড়াবে!”
চঞ্চল দেয়ালটার কাছে গিয়ে দেয়ালটা পরীক্ষা করল, আমিও তার সাথে পরীক্ষা করলাম। নিচে একটু গর্ত, যে গর্তটা দিয়ে বেজিটা বের হয়েছে। আমি বললাম, “এই যে এই ফুটো দিয়ে বের হয়েছে।”
“কিন্তু ফুটোর অন্যদিকে কী আছে? বেজিটা থাকে কোথায়?”
“পাশের ঘরে।”
“তা হলে সে পাশের ঘর দিয়ে পালাল না কেন? এদিক দিয়ে পালাল কেন?”
অনু বলল, “তার কারণ বেজিটা তোর মতো সায়েন্টিস্ট না। সে জানে না তার দিক দিয়ে বের হওয়ার কথা। সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অনুষ্ঠান দেখে নাই।”
“ফাজলেমি করবি না। পশু-পাখির বুদ্ধি তোর থেকে বেশি।”
আমি বললাম, “পাশের ঘরটা দেখলেই বোঝা যাবে কেন সেদিক দিয়ে বের হয় নাই। আয় দেখি।”
আমরা পাশের ঘরে গেলাম, টিটন খুব বিরক্ত হয়ে আমাদের পিছু পিছু এলো, ঘরের দেয়ালটা দেখে আমরা বুঝতে পারলাম কেন বেজি এদিক দিয়ে বের হয়নি। তার কারণ এদিকের দেয়ালে কোনো ফুটো নেই! টিটন পর্যন্ত অবাক হয়ে বলল, “আজব ব্যাপার!”
আমরা তখন আবার আগের ঘরে গেলাম, ফুটোটা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, ভেতরে অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। চঞ্চল বলল, “একটা লাঠি হলে খুব ভালো হত তা হলে গর্তে ঢুকিয়ে দেখতাম অন্য দিক দিয়ে লাঠিটা বের হয় কি না।”
ঘরে নানা রকম জঞ্জাল কিন্তু লম্বা লাঠির মতো কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। বাইরে বড় বড় গাছ আছে তার একটা ডাল ভেঙে আনা যায় কিন্তু তার জন্যে আবার বাইরে যেতে হবে। এই মুহূর্তে কেউ বাইরে যেতে চাইছে না। চঞ্চল গম্ভীর হয়ে ঘরের চারদিকে তাকাল তারপর পা দিয়ে এক মাথা থেকে অন্য মাথা মাপল। তারপর বাইরে গিয়ে বারান্দাটা পা দিয়ে মাপল তারপর পাশের ঘরে গিয়ে মাপল। মাপামাপি শেষ হলে বলল, “ভেরি ইন্টারেস্টিং।”
“কী হয়েছে?”
“এখানে একটা গোপন কুঠুরি আছে।”
“গোপন কুঠুরি?”
“হ্যাঁ। দুইটা ঘর পনেরো পনেরো তিরিশ পা। কিন্তু বারান্দা হচ্ছে আটত্রিশ পা। তার মানে দুই ঘরের মাঝখানে আট পা লম্বা একটা ঘর। সেই ঘরের কোনো দরজা নাই।”
অনু বলল, “শুধু বেজির জন্যে একটা দরজা!”
চঞ্চল বলল, “সেই জন্যেই তো আমরা এটা আবিষ্কার করতে পারলাম! বেজিটাকে থ্যাংকু দেওয়া দরকার।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এই ঘরে কী আছে?”
টিটন বলল, “গুপ্তধন!”
অনু বলল, “কিংবা মানুষের কঙ্কাল।”
চঞ্চল বলল, “আমাদের দেখতে হবে।”
“কীভাবে দেখবি?”
টিটন বলল, “শাবল দিয়ে দেয়ালটা ভেঙে ফেলতে হবে।”
চঞ্চল তখন বাড়াবাড়ি গম্ভীর মুখে বলল, “উঁহু। প্রথমে ভিতরে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা ঢুকিয়ে ভিডিও করে দেখব কী আছে। তারপর ঠিক করব কী করা যায়।”
“তুই ক্যামেরা কোথায় পাবি?”
“জোগাড় করতে হবে।”
আমি বললাম, “দেখলি। আমরা আমাদের ব্ল্যাক ড্রাগন ক্লাবটা মাত্র খুলেছি সাথে সাথেই অ্যাডভেঞ্চার। সাথে সাথে গুপ্তধন!”
অনু বলল, “সাথে সাথে বেজি। সাথে সাথে গুইসাপ!”
আমি বললাম, “মোটেও গুইসাপ না। বেজি।”
টিটন বলল, “ভূত!”
“কোথায় ভূত?”
“এই গোপন ঘরটার ভিতরেই মনে হয় আটকা আছে। দেয়ালটা ভাঙতেই হাউমাউ করে বের হবে।”
চঞ্চল বলল, “যদি বের হয় তা হলে সেটা হবে গুপ্তধন থেকেও দামি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে সেটা কোটি টাকায় বিক্রি করতে পারবি?”
অনু বলল, “যদি ভূতটা ভালো হয় তা হলে তাদেরকে আমাদের ক্লাবের মেম্বারও করে ফেলতে পারি!”
টিটন গরম হয়ে বলল, “খবরদার ভূত নিয়ে ঠাট্টা করবি না।”
৩-৪. বিকেলের দিকে
বিকেলের দিকে আমরা মিঠুদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। মিশকাত মঞ্জিলের গোপন ঘরটার ভিতরে কীভাবে ঢোকা যায় সেটা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। টিটনের বুদ্ধিটাই সহজ, একটা শাবল নিয়ে দেয়ালে ঘা মেরে ইটগুলো ভেঙে ভিতরে ঢুকে যাওয়া। কিন্তু চঞ্চল রাজি হচ্ছে না, সে একেবারে খাঁটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাইরে থেকে আগে ভিতরে উঁকি দিতে চায়, কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। বিজ্ঞানের এরকম একটা কেরানি দেখানোর সুযোগ সে কিছুতেই ছাড়বে না। আমরাও দেখলাম তার এতো আগ্রহ তাই আর না করলাম না। তা ছাড়া আজকে মাত্র আমাদের ছুটি শুরু হয়েছে–প্রথম দিনেই যদি সবকিছু করে ফেলি তা হলে কেমন করে হবে? ছুটির অন্য দিনগুলোর জন্যেও তো কিছু রাখা দরকার।