.
অনুদের বাসায় পৌঁছানোর পরেও আমি আর টিটন রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলাম। অনুর আম্মু যখন আমাদের খাবার জন্যে কিছু ভালো ভালো নাস্তা দিলেন সেগুলো খেয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের মেজাজটা একটু ঠাণ্ডা হল। পৃথিবীর সব মেয়েরা যদি অনুর আম্মুর মতো এরকম ভালো হত তা হলেই তো পৃথিবীতে কোনো সমস্যা থাকত না। কেউ কেউ মিথিলার মতো, টুনির মতো বের হয়ে যায় সে জন্যেই তো এতো সমস্যা!
.
রাত্রিবেলা বাসায় আমরা খেতে বসেছি তখন মিথিলা আল্লুকে জিজ্ঞেস করল, “আব্বু ড্রাগন বাংলা কী?”
আব্বু বললেন, “ড্রাগন তো একটা কাল্পনিক প্রাণী, তার বাংলা নাম আছে। বলে মনে হয় না।”
“গুইসাপ ড্রাগনের বাংলা হয় না?”
“করলেই হয়। তবে গুইসাপ হচ্ছে এক ধরনের সরীসৃপ। রেপটাইল।” আব্বু খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন? হঠাৎ করে ড্রাগনের দরকার হল কেন?”
মিথিলা মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি দিতে দিতে বলল, “এমনি।”
আব্বু তখন খেতে খেতে আম্মুর সাথে কথা বলতে লাগলেন, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে কথা বললেন, রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন, দুর্নীতি নিয়ে কথা বললেন, অসুখ-বিসুখ নিয়ে কথা বললেন, শুনতে শুনতে একটু পরেই আমি অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। হঠাৎ করে”মিশকাত মঞ্জিল” কথাটা শুনে আমি সোজা হয়ে বসি। শুনলাম, আবু বলছেন, “মিশকাত মঞ্জিল নিয়ে অনেক দিন ধরে মামলা চলছিল মনে আছে? মামলার রায় হয়েছে।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মিশকাত মঞ্জিল নিয়ে কে মামলা করেছিল?”
“মিশকাত খানের নাতি-পুতিরা।”
“এখন কী হবে?”
“যারা মামলায় জিতেছে, তারা এসে দখল নেবে।”
“দখল নিয়ে কী করবে?”
“শুনেছি পুরোটা ভেঙে ফেলবে। ভেঙে সেখানে মার্কেট বানাবে।”
“কখন ভাঙবে?”
“সেটা তো জানি না।”
মিথিলা মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া, তুমি মিশকাত মঞ্জিল নিয়ে এতো কিছু জানতে চাও কেন?” “আমার ইচ্ছা। তোর কী?”
“আমার কিছু না। কিন্তু এই রকম একটা ভূতের বাড়ি সেই জন্যে জিজ্ঞেস করছি।”
“ভূতের বাড়ি হয়েছে তো কী হয়েছে?”
“না কিছু হয় নাই।” মিথিলা আবার মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি হাসতে থাকে। আমার কেন জানি সন্দেহ হয় যে মিথিলা মনে হয় জেনে গেছে আমরা মিশকাত মঞ্জিলে ঢুকব। কিন্তু কেমন করে জানল?
আমি বুঝতে পারলাম আমাদের খুব তাড়াতাড়ি মিশকাত মঞ্জিলের অভিযানটা করে ফেলতে হবে তা না হলে বিশাল ঝামেলা হয়ে যাবে। অ্যাডভেঞ্চার করার আগেই যদি মিশকাত মঞ্জিলটা ভেঙে ফেলে তখন কী হবে?
.
০৬.
পরদিন খুব সকালবেলা পেয়ারা গাছের উপরে আমাদের একটা জরুরি সভা বসেছে। সবাই হাজির হওয়ার পর আমি গম্ভীর গলায় বললাম, “আব্বু বলেছেন মিশকাত মঞ্জিল নিয়ে মামলা চলছিল, এখন কোর্টের রায় হয়েছে।”
চঞ্চল জিজ্ঞেস করল, “কোর্টের রায় হলে কী হয়?”
“যারা মামলায় জিতেছে তারা এসে এখন মিশকাত মঞ্জিল ভেঙে ফেলবে। সেখানে মার্কেট বানাবে।”
অনু বলল, “মার্কেট? ছিঃ!”
চঞ্চল বলল, “মার্কেট বানালে আমাদের কী?”
“আমাদের কিছু না। কিন্তু মিশকাত মঞ্জিলটা ভেঙে ফেললে আমরা তো আর তার ভিতরে ঢুকতে পারব না! তাই আমাদের আগেই সেখানে ঢুকতে হবে।”
টিটন হাত নেড়ে বলল, “ইয়েস! তাবিজ লাগানোর পর আর আমার ভয় করছে না। চল আমরা এখনই যাই।”
চঞ্চল বলল, “যাওয়ার আগে আমাদের দেখতে হবে লিস্টের সবকিছু আছে কী না।”
আমি বললাম, “কালকে সবাইকে আমি লিস্ট দিয়েছি। সবাই কি তোদের লিস্টের জিনিসগুলো জোগাড় করেছিস?”
অনু মাথা চুলকে বলল, “আমার লিস্টটা খুবই কঠিন। এখনো সবকিছু জোগাড় হয়নি।”
“কী কী জোগাড় হয়নি?”
“যেমন মনে কর কবুতর—”
টিটন বলল, “আমরা কবুতর দিয়ে কী করব?”
চঞ্চল বলল, “বিজ্ঞানী হতে হলে প্রথমেই কী শিখতে হয় বল।”
টিটন বলল, “অঙ্ক মুখস্থ করা।”
চঞ্চল বলল, “না। প্রথমে শিখতে হয় সেফটি। যেন কোনো অ্যাকসিডেন্ট হয়। কেউ ব্যথা না পায়। ইলেকট্রিক শক না খায়। গ্যাস দিয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়।“
“মিথ্যা কথা বলবি না।” টিটন গর্জন করে বলল, “আমাকে তুই কাল ইলেকট্রিক শক দিয়েছিলি। আমি অনেক ব্যথা পেয়েছিলাম।”
“সেটা দিয়েছিলাম মজা করার জন্যে।”
“মজা করলে কি মানুষ ব্যথা পায় না?”
অনু বলল, “ঠিক আছে ঠিক আছে! যেটা জিজ্ঞেস করেছিস তার উত্তর আগে শুনি। কবুতর কেন?”
হলে আমি মাথা নাড়ল, বলল বুঝব অক্সিজেন আহত জ্বালিয়ে নামিয়ে রে
চঞ্চল বলল, “মিশকাত মঞ্জিলের গোপন কুঠুরির ভিতরে আমরা কী দেখেছিলাম মনে আছে? একটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে।”
আমরা মাথা নাড়লাম, “হ্যাঁ।”
“আমাদের সেই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হবে। তার মানে বুঝতে পেরেছিস?”
“কী?”
“নিচে বছরের পর বছর কেউ যায় নাই। হয়তো সেখানে বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়ে আছে। আমরা নামতেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাব। সেই জন্যে যদি খাঁচায় ভরে একটি কবুতর সেখানে নামিয়ে দিয়ে দেখি সেটা মারা যাচ্ছে না তা হলে বুঝতে পারব সেখানে বিষাক্ত গ্যাস নাই।”
আমরা চঞ্চলের বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি একটু চিন্তা করে বললাম, “কিন্তু কবুতর না পাঠিয়ে যদি একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে নামিয়ে দেই, সেটা যদি জ্বলতে থাকে তা হলে বুঝব অক্সিজেন আছে, নিশ্বাস নিতে পারব।”
চঞ্চল মাথা নাড়ল, বলল, “না। অনেক সময় মিথেন গ্যাস জমা হয়। তা হলে আগুন জ্বালালেই ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়ে সারা মিশকাত মঞ্জিল উড়ে যাবে। সাথে সাথে আমরাও। কাজেই আগে কবুতর।”