আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কোথায় পেয়েছিস এই তাবিজ?”
টিটন চোখ বড় বড় করে বলল, “তোর লাগবে?”
“না, লাগবে না। আমি শুধু জানতে চাইছি কোথায় পেয়েছিস?”
“রাস্তার ধারে একজন তোক বিক্রি করছে। মহা কামেল মানুষ। সবকিছুর জন্যে তাবিজ আছে। ভূত, জিন থেকে শুরু করে বিয়ে-শাদি, বিছানায় পিশাব, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি জিপিএ ফাইভের জন্যেও তাবিজ আছে।”
“কত করে দাম?”
“অষ্ট ধাতুর তাবিজটা সবচেয়ে ভালো, কিন্তু সেটার অনেক দাম। আমি সস্তারটা কিনেছি। ছোট বলে আমাকে অর্ধেক দামে দিয়েছে। মাত্র বিশ টাকা!”
আমি আর চঞ্চল একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম, শুধু টিটনের পক্ষেই এরকম জিনিস বিশ্বাস করা সম্ভব।
টিটন আমাদেরকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা মিশকাত মঞ্জিল কখন যাব?”
“আয় সবাই মিলে ঠিক করি।”
“এখন?”
“উঁহু।” চঞ্চল মাথা নাড়ল, বলল, “এখন না। এইবার গেলে আমরা দেয়ালটা ভেঙে ভিতরে ঢুকব। সেই জন্যে আমাদের সবকিছু নিয়ে রেডি হয়ে যেতে হবে।”
“সবকিছু কী কী নিতে হবে?
“এই মনে কর শাবল, হাতুড়ি, টর্চ লাইট, দড়ি, ম্যাচ, মোমবাতি, ব্যাটারি, তার, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, কম্পাস, কাগজ, কলম, মেজারিং টেপ, টুল বক্স, করাত, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন–”
টিটন অবাক হয়ে বলল, “এতো কিছু কেন?”
“ভিতরে কী আছে তা তো আমরা জানি না। কখন কোনটা দরকার লাগবে কে বলতে পারে? সেই জন্যে সবকিছু নিয়ে যেতে হবে।”
“ও।” টিটন সবকিছু বুঝে ফেলেছে এরকম ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল।
আমি বললাম, “আয় আগে একটা বড় লিস্ট করি তারপর লিস্টটা ভাগাভাগি করে আমরা চারজনকে দিয়ে দিই। সবাই মিলে জিনিসগুলো রেডি করব।”
চঞ্চল মাথা নেড়ে লিস্ট তৈরি করতে লেগে গেল।
প্রথম লিস্টটা হল অনেক বড়। সেই লিস্টের সবকিছু নিতে হলে আমাদের আস্ত একটা ট্রাক লেগে যাবে। তাই প্রথম লিস্টটা কাটছাট করে দ্বিতীয় লিস্টটা করা হল। দেখা গেল তার সবকিছু নিতে হলে একটা টেম্পো লাগবে। তখন সেই লিস্টটা আরো কাটছাট করা হল আর তখন সেটা দেখে মনে হল এবারে সবকিছু আমরা মোটামুটি নিজেরাই আমাদের ব্যাকপেকে করে নিয়ে যেতে পারব। তখন আমরা লিস্টটা ভাগাভাগি করে ঠিক করে নিলাম কে কোনটা জোগাড় করবে। অনু এখনো আসেনি তাই সবচেয়ে কঠিন কঠিন জিনিসগুলো জোগাড় করার দায়িত্বটা দিলাম তার ঘাড়ে।
চঞ্চল তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত। মিশকাত মঞ্জিলের ভেতরে ঢোকার জন্যে আরো কী কী যন্ত্রপাতি তৈরি করতে হবে, সে সেগুলো তৈরি করছে। তাই আমি আর টিটন বের হলাম অনুর লিস্টটা নিয়ে, সেইটা অনুর কাছে পৌঁছে দেব।
টুনিদের বাসার সামনে দিয়ে যখন মাঠটা পার হচ্ছি তখন দেখতে পেলাম টুনি আর মিথিলা বাসার সামনে নাচ প্র্যাকটিস করছে, তবে এমনিতে মেয়েরা যে রকম করে নাচে সে রকম নাচ না–অন্য রকম নাচ। আমাদের দেখে তারা থেমে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী করছিস?”
টুনি বলল, “কিছু না।”
মিথিলা বলল, “আপু আমাকে কারাটে শিখাচ্ছে।”
টিটন চোখ কপালে তুলে বলল, “তুমি কারাটে জান না কি?”
“এই একটু একটু। ঢাকায় শিখতাম।”
আমি বললাম, “আমাদের দেখাবে?”
“এটা তো দেখানোর জিনিস না। কোনো একদিন যদি আমাকে পিটিয়ে তক্তা বানাতে চাও তা হলে হয়তো একটু ব্যবহার করা যাবে।”
আমার মনে পড়ল, প্রথম দিন টিটন টুনিকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলবে বলে ভয় দেখিয়েছিল, মনে হচ্ছে টুনি সেটা ভোলেনি।
মিথিলা বলল, “টুনি আপু আসলে ব্ল্যাক–”
টুনি মিথিলাকে কথাটা শেষ করতে দিল না, থামিয়ে দিয়ে বলল, “ব্ল্যাক ড্রাগন।“
“হ্যাঁ, ব্ল্যাক ড্রাগন।” মিথিলা মাথা নাড়ল, “ব্ল্যাক ড্রাগন।”
টুনি বলল, “তোরা কী ঠিক করেছিস আমাদের দলে আসবি কি আসবি না?”
টিটন মুখ শক্ত করে বলল, “এর মাঝে ঠিক করার কিছু নাই। তোরা আমাদের ব্ল্যাক ড্রাগন দলটা হাইজ্যাক করে নেওয়ার চেষ্টা করছিস! তোদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা দরকার। হাইকোর্টে কেস করা দরকার।”
টুনি বলল, “হাইকোর্টে কেস করতে হবে না। আয় অ্য একটা কাজ করি।”
“কী কাজ?”
“ব্ল্যাক ড্রাগন নামটা আমার আর মিথিলার। তোরা চারজন ব্ল্যাক ড্রাগনের বাংলা নামটা নে।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম, “কী বললি? বাংলা নাম?”
“হ্যাঁ।” টুনি হাসি হাসি মুখ করে বলল, “ব্ল্যাক এর বাংলা হচ্ছে কালা আর ড্রাগনের বাংলা যেন কী হবে?”
টিটনটা গাধার মতো বলল, “গুইসাপ।”
আমি ধমক দিয়ে বললাম, “মোটেও গুইসাপ না।কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। মিথিলা হাততালি দিয়ে বলতে লাগল, “কালা গুইসাপ! কালা গুইসাপ!!”
টুনি হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, “তোদের জন্যে একেবারে ঠিক নাম। তোরা চারজন গুইসাপের মতো মুখ ভোঁতা করে মাটির সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে আস্তে আস্তে যাবি। আর আমরা যাব ড্রাগনের মতো।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম, “খবরদার, আমাদের কালা গুইসাপ বলবি না।”
টুনি বলল, “আমরা তো বলতে চাই না। আমরা তো সবাই মিলেই ব্ল্যাক ড্রাগন করতে চাই। তোরাই তো রাজি হচ্ছিস না।”
টিটন বলল, “কক্ষনো রাজি হব না।”
আমিও বললাম, “কক্ষনো রাজি হব না।”
টুনি বলল, “ঠিক আছে তা হলে।”
মিথিলা বলল, “কালা গুইসাপ! কালা গুইসাপ!!”
চোখ দিয়ে আগুন বের করে কাউকে পুড়িয়ে মারা সম্ভব হলে মিথিলা তখনই পুড়ে ছাই হয়ে যেতো।