টুনি হাসির মতো ভঙ্গি করে বলল, “পাবি! টের পাবি।” তারপর সে হেঁটে হেঁটে তার বাসার দিকে চলে গেল। তাকে দেখে মনে হল তার বুঝি কোনো কিছু নিয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।
৫-৬. হাতে আংটি
চঞ্চল তার দুই হাত তুলে বলল, “আমার হাতে কিছু দেখছিস?”
আমি ভালো করে লক্ষ করে বললাম, “হাতে আংটি পরেছিস? দুই হাতে দুইটা?”
চঞ্চল বলল, “দেখে তোর তাই মনে হচ্ছে?”
“হ্যাঁ।”
“ঠিক আছে। কাছে আয়।”
আমি কাছে গেলাম, তখন সে তার দুই হাত দিয়ে আমাকে ধরল আর সাথে। সাথে কী হল কে জানে ভয়ংকর একটা ইলেকট্রিক শক খেয়ে আমি ছিটকে পড়লাম। আমার মাথা ঠুকে গেল দেয়ালে আর আমি ভয়ে আতঙ্কে যন্ত্রণায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলাম।
চঞ্চল আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে, আর সেটা দেখে আমার রেগে আগুন হয়ে যাবার কথা কিন্তু ইলেকট্রিক শক খেয়ে এতো অবাক হয়েছি যে আমি রাগতেও পারছিলাম না। আমি উঠে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলাম, “কীভাবে করলি?”
“ইনডাকশন কয়েল।”
“সেটা আবার কী?”
“একটা লোহার উপর কয়েল পেঁচিয়ে তৈরি করতে হয়। একটা ব্যাটারি হচ্ছে মাত্র দেড় ভোল্টের, সেটাকে বাড়িয়ে কয়েক হাজার ভোল্ট করে ফেলা যায়।”
আমি শুকনো মুখে বললাম, “সর্বনাশ!”
“সর্বনাশের কিছু নাই! ভোল্টেজ বেশি কিন্তু কারেন্ট খুবই কম। কোনো ক্ষতি হবে না।”
“কী আজব। আমি ইলেকট্রিক শক খাচ্ছি কিন্তু তুই খাচ্ছিস না কেন?”
চঞ্চল হা হা করে হাসল, বলল, “এই দেখ। আমার দুই হাতে দুইটা আংটি আসলে দুইটা ইলেকট্রন্ড। এই দ্যাখ পিছন দিকে তার লাগানো আছে, সেটা গেছে আমার পকেটে। পকেটে ইনডাকশন কয়েলটা রেখেছি। আংটি দুটির ভিতরের দিকে প্লাস্টিক লাগানো, তাই সেটা আমার শরীরকে ছুঁচ্ছে না, তাই আমাকে শক দিচ্ছে না। যখন তোকে ধরছি তোকে শক দিচ্ছে।”
“কী আশ্চর্য!”
“এটা হচ্ছে আমাদের ব্ল্যাক ড্রাগনের একটা অস্ত্র। আমরা এরকম অস্ত্র তৈরি করে সবাই একটা করে নিয়ে ঘুরব। কেউ আমাদেরকে কিছু করতে এলেই আমরা জ্যাপ করে ইলেকট্রিক শক দিয়ে দিব!”
“একটা তৈরি করতে কত খরচ হবে?”
“খুব বেশি না। টেলিভিশন সারিয়ে দিয়েছি তাই আব্বু কিছু টাকা দিয়েছে। দরকার হলে ফ্রিজটা নষ্ট করে রাখব। তখন আরো কিছু টাকা হবে।”
আমি মাথা নাড়ালাম, চঞ্চল ঠিকই বলেছে। এটা হবে একটা অসাধারণ অস্ত্র! ইনডাকশন কয়েলটা কেমন করে তৈরি করে যখন সেটা নিয়ে চঞ্চলের সাথে কথা বলছি তখন টিটন এসে হাজির হল। কী কারণ কে জানে আজকে তার মুখে বিচিত্র একটা হাসি। আমি টিটনকে বললাম, “চঞ্চল কী তৈরি করেছে দেখ!”
টিটন জিনিসটা দেখার জন্যে এগিয়ে গেল, চঞ্চল তার দুই হাত বাড়িয়ে দেয় আর আমি দেখতে পেলাম পরের মুহূর্তে বিশাল একটা ইলেকট্রিক শক খেয়ে টিটন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ছিটকে পড়েছে।
এবারে আমি আর চঞ্চল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকি। টিটন প্রথমে অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর রেগে উঠে চিৎকার করে বলল, “আমাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিস? সেটা দেখে আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছিস? ঘুষি মেরে তোদের নাক ভেঙে দেব।”
সেটা অবশ্যি খুব অস্বাভাবিক কিছু না, টিটন রেগে গেলে ঘুষি মেরে নাক ভেঙেও দিতে পারে, তাই আমরা হাসি থামিয়ে ফেললাম। বিজ্ঞানের এতো বড় আবিষ্কার নিয়ে টিটন কোনো কৌতূহল দেখাল না, রাগে গজগজ করতে লাগল। চঞ্চল আর আমি তখন তাকে বিষয়টা বোঝালাম আর তখন আস্তে আস্তে তার রাগটা একটু কমে এলো। শেষে তার মুখে আবার আগের সেই বিচিত্র হাসিটা ফুটে ওঠে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুই এরকম করে হাসছিস কেন?”
“কে বলছে আমি হাসছি?” তার মুখের হাসিটা আরো বড় হয়ে যায়, বলে, “আমি মোটেও হাসছি না!”
“এই যে হাসছিস?”
টিটন হাসি হাসি মুখ করে তার শার্টের হাতাটা একটু তুলে বলল, “এই দেখ।”
আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, সেখানে বিশাল একটা তাবিজ কালো সুতা দিয়ে বাঁধা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কীসের তাবিজ?”
টিটন বলল, “ভূতের।”
“ভূতের তাবিজ?”
“শুধু ভূত না–জিন, পরী, প্রেতাত্মা কেউ এখন আর আমার ধারেকাছে আসতে পারবে না। এখন আর আমার মিশকাত মঞ্জিলে যেতে কোনো ভয় করবে না।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। আমি চাইলে একা একা যেতে পারব।”
চঞ্চল জিজ্ঞেস করল, “তুই কেমন করে জানিস এই তাবিজটা কাজ করে?”
টিটন বলল, “আমি জানি।”
“কেমন করে জানিস?”
টিটন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাবিজটা খুলে চঞ্চলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “তুই এটা হাতের মুঠোয় ধরে রাখ, দেখবি আস্তে আস্তে তাবিজটা গরম হয়ে উঠছে।”
চঞ্চল হাতের মুঠোয় ধরে রাখল, টিটন একটু পরে জিজ্ঞেস করল, “গরম হয়েছে? হয়েছে গরম?”
“বুঝতে পারছি না।”
“অবশ্যই বুঝতে পারবি। ধরে রাখ।”
চঞ্চল হাতের মুঠো খুলে বলল, “আসলে একটা থার্মোমিটার ধরে দেখতে হবে গরম হচ্ছে না কী।”
চঞ্চল বলল, “দেখ।”
চঞ্চল বলল, “তুই তাবিজটা রেখে যা। আমি সত্যি সত্যি পরীক্ষা করে দেখব। আমার হাতের তালুর তাপমাত্রা মাপতে হবে, তাবিজের তাপমাত্রা মাপতে হবে। গ্রাফে প্লট করতে হবে।”
টিটন বলল, “ঠিক আছে প্লট কর। কিন্তু সাবধান”
“কী?”
“নাপাক অবস্থায় তাবিজটা ধরবি না।”
চঞ্চল বলল, “ঠিক আছে। ধরব না।”